আমি মেলায় যাবো

3

দীপক বড়ুয়া

আমি নোরা।
চৈত্র মাস এলেই মন আনন্দে ভরে যায়। দিদিভাই নারিতা ও ভীষণ খুশি মনে থাকে। চৈতের শেষ দিন আজ। বাসায় পাচন নাড়ু খাওয়ার ধুম। অতিথিদের আসা যাওয়া।
দাদু সেই সকালে ঘুম থেকে উঠে যায়। আজ পয়লা বৈশাখ।
ভোরে স্নান সেড়ে বুদ্ধের রুমে ছুটে যায়। সুন্দর মিষ্টি কন্ঠে প্রার্থনা করে। দাদুর প্রার্থনা এত যে মিষ্টি মন ভরে যায়। এই প্রার্থনা নতুন বছর বলে নয়, সারা বছর ভোরে প্রার্থনা করে। প্রার্থনার মধুর স্বরে নারিতা নোরার ঘুম ভাঙে। ইশকুলে যাবার সময় হয়। তাড়াতাড়ি মুখহাত ধুয়ে সকালের নাস্তার টেবিলে বসে দাদুর সাথে।
আজ পয়লা বৈশাখ, বছরের প্রথম দিনে দাদু বুদ্ধের রুমে গিয়ে প্রার্থনা শুরু করে। প্রার্থনার সুরে ঘুম ভাঙে নারিতার। নারিতার পাশে ঘুমিয়ে আছে নোরা। মিষ্টি ঘুমে যেন হারিয়ে গেছে। হঠাৎ নারিতার মনে পড়ে আজ পয়লা বৈশাখ। বৈশাখী মেলা বসেছে ডিসি হিলে, সিআরবি শিরীষ তলায়। কত আয়োজন। বৈশাখের গান, নৃত্য, কবিতা পাঠ হবে।
মেলা বসবে। মেলায় কত কি থাকবে।
পুতুল, মুখোশ, বেলুন, নানা ধরনের খেলনা, মজাদার খাবার থাকবে। এইদিনটি যদি প্রতিদিন থাকতো কি মজা না হতো। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব পয়লা বৈশাখ। সবাই নতুন বছরকে বরণ করবে। নতুন জামা, শাড়ি পরবে। কপালে দেবে শাড়ির সাথে মিলিয়ে টিপ।
নারিতার আনন্দ সয়না। পাশে শুইয়ে পরা নোরাকে ডাকে,-
– নোরা, নোরা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠ। মেলায় যাবিনা!
এত ডাকার পরেও নোরার ঘুম ভাঙে না। হাতে ধরে ডাকে,
– নোরা ওঠনা, মেলায় যাবিতো!
ততক্ষণে নোরার ঘুম ভাঙে। দিদিভাইকে দেখে বলে,
-দিদিভাই, দাদু কোথায়, ঘুম থেকে উঠেছে? আজ পয়লা বৈশাখ, মেলায় যাবো দাদুর সাথে। তড়িঘড়ি ঘুম থেকে উঠে নোরা, নারিতা দাদুর রুমে ছুটে যায়। দাদুকে খাবার টেবিলে পেয়ে নোরা বলে, দাদু আমি মেলায় যাবো।
দাদু নাস্তা চিবিয়ে হেসে বলে, কোন মেলায় যাবে দিদিভাই।
– কেন তুমি জানো না, আজ পয়লা বৈশাখ। বৈশাখী মেলায় যাবো।
– কোথায় যাবে?
– ডিসি হিলে, সিআরবি শিরীষ তলায়। নারিতা উত্তর দেয়।
– ওখানে তোমাদের কাজ কি?
– আমি নাচবো দাদু। নোরা হেসে উত্তর দেয়।
– নাচ কে শেখালো আর কি গানে নাচবে?
– মা শিখিয়েছে দাদু, নাচ গান দুটো। এসো হে বৈশাখের গানে নাচবো। নোরার ছোট্ট উত্তর।
দাদু এবার নারিতাকে জিজ্ঞেস করে, তুমি কি করবে দিদিভাই?
– আমি এসো হে বৈশাখ গান করবো, নোরা নাচবে।
– তোমরা একা নাচবে, একা গাইবে? দাদুর প্রশ্ন।
– না দাদু একা নয়। দলীয় নাচ, দলীয় গানে হবে।
ঠিক তখনই মা ডাকে, নারিতা, নোরা তাড়াতাড়ি আয়। দু’জনকে শাড়ি পরিয়ে দিই। দাদু বলে, বউমা ওরা শাড়ি পরে নাচবে, গাইবে।
– হ্যাঁ বাবা। গতকাল প্রযোজক তাই বলেছেন।
– ঠিক আছে, তাড়াতাড়ি পরিয়ে দাও। তুমি যাচ্ছ না সাথে।
– না বাবা, আপনার সাথে যাবে। বাসায় অনেক কাজ পরে আছে।
মা দু’জনকে টকটকে লাল শাড়ি, ব্লাউজ পরিয়ে দেয়। কপালে লাল টিপ। অপূর্ব সুন্দর লাগছে দু’জনকে।
মা বলে, বাবা হাতে ধরে রাখবেন। মানুষের ঢল নামবে মেলায়। হারিয়ে যেতে পারে।
– ঠিক আছে বউমা, আমরা বেরুয় তা’হলে। – দাদু ডিসি হিলে গান শেষে শিরীষ তলায় যাবো। ওখানেও সুন্দর মেলা বসবে। নারিতা দাদুকে বলে। – না না তা’ হবে না। দুই জায়গায় যাওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়। বাবা, শুধু ডিসি হিলের অনুষ্ঠান শেষে চলে আসবেন। বউমা বলে। – ঠিক আছে বউমা, তাই হবে। দিদিভাই তবে চলো, দেরী নয়।
দাদু, নারিতা, নোরা সিঁড়ি ভেঙে তিন তলা থেকে নীচে নামতে শুরু করে।
ওদের দু’জনের চোখে, ঠোঁটে আনন্দ হাসি।
আজ পয়লা বৈশাখ, কি খুশি কত আনন্দ! বাংলা নববর্ষকে গানে নাচে বরণ করবে সবাই। আর বিদায় জানাবে পুরনো বছরকে।