বাড়িতে প্রসবের ঝুঁকি

25

ডা. সোমা চৌধুরী

একজন মা যখন সন্তান ধারণ করেন তখন নয় মাস পর একটি সুস্থ শিশু পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখবে-এটাই সবার প্রত্যাশা। কিন্তু অসচেতনতা আর পুরনো ধ্যান ধারণাকে আঁকড়ে ধরে রাখার কারণে অনেক মা নিজের ইচ্ছায় বা স্বামী বা শাশুড়ি বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ইচ্ছায় বাড়িতে প্রসবের সিদ্ধান্ত নিয়ে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ে যায়। উন্নত বিশ্বে মেয়েরা বাড়িতে প্রসবের কথা চিন্তাও করেন না। অথচ আমাদের দেশে এখনো প্রায় ৫০ ভাগ ডেলিভারি বাড়িতে হয়ে থাকে। এটা মোটেই কাম্য নয়। বাড়িতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, অদক্ষ ও প্রশিক্ষণবিহীন ব্যক্তি দ্বারা প্রসব মা এবং শিশুর জটিলতা ও মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়। ঝুঁকি কমাতে হাসপাতালে প্রসবের পরিকল্পনা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। নরমাল ডেলিভারী হলে খরচ কম, মা তাড়াতাড়ি সুস্থতা ফিরে পান, হাসপাতালে কম সময় থাকা লাগে, মা ঘরোয়া কাজে দ্রæত ফিরতে পারেন, শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে, পরবর্তী বাচ্চা স্বাভাবিক ডেলিভারির সম্ভাবনা বেশি। সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বাভাবিক ডেলিভারিই বেশি। বাংলাদেশে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতি লাখে প্রায় ১৬৫ জন মা মারা যান। এর বেশিরভাগই মারা যায় বাড়িতে প্রসব করানোর কারণে। তবে বর্তমানে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, দাতা সংস্থা মাতৃমৃত্যু কমাতে কাজ করছে। সরকার বাড়িতে প্রসবকে একবারেই না বলছে। কোন কোন ইউনিয়ন, উপজেলায় জিরো হোম ডেলিভারি কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। বাড়িতে প্রসব হলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, খিঁচুনি, জরায়ু সংক্রমণ, বিলম্বিত প্রসব, বাধাগ্রস্ত প্রসব, শিশুর সংক্রমণ, শ্বাসকষ্ট বা অন্যান্য যে কোন জটিলতা ব্যবস্থাপনার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা থাকে না এবং রেফার করলেও সেবা পেতে বিলম্ব হয়। ফলে মা ও শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ে। আজকাল বাড়ির আশেপাশে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, জেলা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিওসহ বিভিন্ন সেবাকেন্দ্রে গর্ভবতী সেবা এবং নিরাপদ প্রসবসেবা সহজেই পাওয়া যায়। দক্ষ ও প্রশিক্ষণবিহীন ব্যক্তি দ্বারা প্রসব মায়ের এবং শিশুর জীবনহানি ঘটায়। আমরা অকাল মৃত্যু চাই না। মা ও শিশুর জীবন বাঁচাতে বাড়িতে প্রসবকে না বলতে হবে। নিরাপদ প্রসবের জন্য বাড়ি নয় আপনার পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে বেছে নিন। সচেতন হউন, নিরাপদ থাকুন।
লেখক: অবস ও গাইনী বিশেষজ্ঞ