এক কলসি পানির জন্য সারাদিন অপেক্ষা

136

প্রতি গ্রীষ্ম মৌসুমে তীব্র পানির সংকটে দেখা দেয় পার্বত্য আলীকদম উপজেলায়। এলাকার রিংওয়েল, পুকুর, ডোবা ও ছোট খাটো ঝিরি ছড়া পানি শূন্য হয়ে পড়ে। এক কলসি পানির জন্য ছুটতে হয় অনেক দূরে। প্রতিবছরের মত এই বছরও আলীকদম উপজেলায় সর্বত্রই বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট। পানিশূন্যতা বিরাজ করছে সমগ্র উপজেলায়। দুর্গম পাহাড়ি এলাকার চিত্র আরো চরম ভয়াবহ। শুষ্ক মৌসুমে উপজেলায় সুপেয় জলের সংকট সমাধানে সরকারি-বেসরকারি আশ্বাস পেলেও বাস্তবে কোনো কিছুই মিলছে না।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত দুই তৃতীয়াংশ রিংওয়েলে পানি নেই বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। প্রতি অর্থ বছরে সরকারিভাবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী, এলইজিডি, উপজেলার চারটি ইউনিয়নের এলজিএসপি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৭০/৮০টি করে রিংওয়েলের বরাদ্দ পাওয়া গেলেও পানীয় জলের সংকট দূর হচ্ছে না এ উপজেলায়। স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর পানি সংকটের কথা স্বীকার করেছে।
সরেজমিনে জানা যায়, আলীকদমে সর্বত্র বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকট চলছে। সাধারণ মানুষের মাঝে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। গ্রীষ্মের তীব্রতার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পানীয় জলের সংকটও। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কলসি নিয়ে রিংওয়েল-টিওবওয়েল ও কুয়াতে পানির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তারপরও এক কলসি পানি ফেলে যেন দুর্ভোগের মাত্রা কমে যায়। বর্তমানে যৎসামান্য যে পানি মিলছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
অভিযোগ রয়েছে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক স্থাপিত রিংওয়েলগুলো স্থাপন কালে পুকুর চুরির আশ্রয় নেয়ায় ভূ-উপরিভাগের পানি শুকিয়ে যাবার আগে সিংহভাগ রিংওয়েলে পানি থাকেনা। সংস্কারের অভাবে অধিকাংশই রিংওয়েল এখন অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
জানা যায়, উপজেলা সদর, ছাবের মিয়া পাড়া, রেপারপাড়া, মান্নান মেম্বার পাড়া, চিনারী, পুনর্বাসন, আমতলী, আশ্রয়ন প্রকল্প, উত্তর পালং পাড়া, পূর্ব পালং পাড়া, সিলেটী পাড়া, রোয়াম্ভু, ঘোনাপাড়া, বিতৃর্ণ নয়াপাড়া এমন কি দুর্গম পাহাড়ি পল্লী পোয়ামুহুরী, কুরুকপাতা, বলাইপাড়া, দো’ছড়িসহ মাতামুহুরী ও তৈনখালের বিতৃর্ণ পাহাড়ি পল্লী এলাকায়ও তীব্র পানির সংকট চলছে।
দুর্গম পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, এক সময়ের জলে ভরপুর থাকা ঝিরি-ছড়া ও ঝর্ণাগুলো এখন প্রায় জলবিহীন ধুধু বালির স্তূপ। পাহাড়ে গাছ নিধন করে আগে থেকে এক সংকটের মধ্যে আমাদের জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে। তার উপর ঝিরি-ছড়া ও পাহাড়ের পাদদেশ থেকে বছর চারেক ধরে নির্বিচারে পাথর উত্তোলনের ফলে এখন ঝিরি-ছড়া ও ঝর্ণাগুলো পানি শূন্য মৃত্যু পুরীতে পরিণত হয়েছে। আক্ষেপের সুরে এলাকাবাসী জানান, এ উপজেলায় স্থাপিত দুই তৃতীয়াংশ নলকূপ সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকেজো হয়ে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। গ্রীষ্মকালে তীব্র রৌদ্র তাপে নলকূপ, রিংওয়েল, কুয়া, পুকুর ও ডোবার পানি দিনদিন শুকিয়ে যায়। প্রতি বছর কমপক্ষে দুই আড়াই মাস পানির সংকটে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে কাটাতে হয় স্থানীয়দের। গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহে এলাকায় পানির জন্য হাহাকার অবস্থা চলছে। শুধু খাবার পানি নয় ব্যবহারের পানিও মিলছেনা এলাকায়। তীব্র তাপদাহ আর পানির সংকটে অসহনীয় হয়ে উঠেছে জনজীবন। দীর্ঘদিন আগে থেকে উপজেলায় একটি পানি সরবরাহ প্রকল্প গ্রহণের দাবী রয়েছে এলাকার জনসাধারণের। কয়েক বছর আগে প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও অজানা কারণে প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকায় প্রকল্পটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। বিষয়টি আমলে নিলে প্রকল্পটি চালু করা হলে কিছুটা হলেও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে উপজেলাবাসী।
এব্যাপারে আলীকদম উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মনির আহম্মেদ জানান, আলীকদম উপজেলায় টিউবওয়েল স্থাপনে সবচেয়ে বড় বাধা পাথরে মাটি, পাথরে মাটি ভেদ করার কোন সামগ্রী আমাদের নেই। টিউবওয়েলগুলো পানি না পাওয়া পিছনে প্রতিবছর পাহাড় থেকে হাজার হাজার গাছ কর্তনের ফলে মাটির উপরি ভাগের পানি ধারণ ক্ষমতা হারানো এবং পানির প্রধান উৎস থেকে অবাধে পাথর উত্তোলনকে দায়ী করেন তিনি।
বিকল হয়ে পড়ে থাকা টিউবওয়েলগুলো সংস্কার হবে কিনা জানতে চাই তিনি বলেন, সংস্কারের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়া হলে সংস্কার করা হবে। বর্তমানে সংস্কারের কোন বরাদ্দ নেই এবং আলীকদম উপজেলার পানি প্রকল্পের বিষয়ে তিনি জানান আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছি যথা সম্ভব দ্রæত প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।