আগামী মাসের শুরুতে ‘স্বস্তি মিলতে পারে’

9

তুষার দেব

তাপপ্রবাহের সাথে বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে বৈশাখের শুরু থেকেই আবহাওয়ার অবস্থায় চরম অস্বস্তি বিরাজ করছে। এমন টানা তাপপ্রবাহের কবলে দেশ আগে কখনও পড়েনি। মৃদু থেকে তাপপ্রবাহ কোথাও কোথাও অতি তীব্র আকার ধারণ করছে। অসহ্য গরমে সাধারণ শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। কাজের তাগিদে বাইরে বেরিয়ে ঘেমে একাকার। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। প্রশান্তির আশায় ঝড়-বৃষ্টির জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সকলে।
টানা তাপপ্রবাহে এই অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে আগামী মে মাসের শুরু থেকে স্বস্তি মিলতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণকারী সরকারি সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ২ মে থেকে তাপপ্রবাহ প্রশমিত হয়ে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চল দিয়ে আকাশে মেঘমালা সঞ্চারিত হবে। ধীরে ধীরে তা দেশেজুড়ে বিস্তার লাভ করবে। এতে বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি কালবৈশাখী ঝড়েরও দেখা মিলতে পারে।
অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক আবহাওয়ার এমন সুখবর দিয়ে পূর্বদেশকে বলেন, চলমান তাপদাহ এপ্রিলের বাকিটা জুড়ে চলবে। মে মাসের প্রথম দিন থেকেই দেশের আকাশে মেঘের উপস্থিতি বাড়বে এবং ২ মে থেকে সারাদেশে বৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে তখন গরমের তীব্রতা অনেকটাই কমে আসবে। তবে মে মাসের শুরুতে তাপপ্রবাহ একেবারে চলে যাবে সেরকম কিছু না। কিন্তু বর্তমানে যেমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি আছে সে রকম থাকবে না। চলমান হিট অ্যালার্ট আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, চলমান তাপপ্রবাহ দেশের ইতিহসে সবচেয়ে দীর্ঘ তাপপ্রবাহ। এর আগে গত বছরও এপ্রিল মাসে টানা ১৯ দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। কোথাও কোথাও তা অতি তীব্র আকার ধারণ করেছিল। এবার সেটা অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে। উষ্ণতম মাস এপ্রিলের চলমান তাপপ্রবাহের এ ব্যাপ্তিকালকে ‘অস্বাভাবিক’ বলছেন আবহাওয়াবিদরা। এর আগে এ মাসে এত দীর্ঘমেয়াদে তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার রেকর্ড নেই বলেও জানিয়েছেন তারা।
আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের গত ১৬ মার্চ সর্বপ্রথম চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও কক্সবাজার জেলায় তাপপ্রবাহ শুরু হয়। ১৯ মার্চ থেকে তা প্রশমিত হয়ে যায়। পরে ৩১ মার্চ ফের রাজশাহী ও পাবনা জেলায় তাপপ্রবাহ শুরু হয়। সেই তাপপ্রবাহ এখনও অব্যাহত রয়েছে। সে হিসাবে এখন পর্যন্ত দেশের ওপর দিয়ে টানা ২৭ দিন ধরে তাপপ্রবাহ বইছে।গত ২০ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় যশোরে।
গতকাল শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সেই রেকর্ডও ছাড়িয়ে যায়। চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে এটাই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। টানা তাপদাহে সিলেট ছাড়া মোটামুটি দেশজুড়েই জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন স্থানে হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। তীব্র গরমে বাড়ছে রোগব্যাধি। শ্রমজীবী মানুষের উপার্জন কমছে। এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার দেশের অন্যান্য বিভাগের চেয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা তুলনামূলক কম ছিল। চট্টগ্রাম বিভাগের আওতাধীন দুই পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও বান্দরবানের পাশাপাশি চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনীর উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে রাঙামাটিতে সর্বোচ্চ ৩৮ দশমিক পাঁচ, বান্দরবানে ৩৬ দশমিক আট, চাঁদপুরে ৩৬ দশমিক পাঁচ এবং নোয়াখালী ও ফেনীতে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
এছাড়া বিভাগের আওতাধীন অন্যান্য জেলাসমূহের মধ্যে চট্টগ্রাম শহর ও আশপাশের এলাকায় ৩৪ দশমিক আট, স›দ্বীপে ৩৪ দশমিক চার, সীতাকুন্ডে ৩৫ দশমিক দুই, কুমিল্লায় ৩৫ দশমিক পাঁচ, হাতিয়ায় ৩৫, কক্সবাজারে ৩৫ দশমিক তিন, কুতুবদিয়ায় ৩৫ দশমিক দুই এবং টেকনাফে ৩৫ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছ’টার পর থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার জন্য প্রচারিত পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেইসঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা জেলাসমূহের উপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, বগুড়া, বাগেরহাট, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলাসমূহের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলার পাশাপাশি রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে। বর্ধিত পাঁচদিনের আবহাওয়ার অবস্থায় এ সময়ের শেষের দিকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এপ্রিল হচ্ছে দেশের সবচেয়ে উষ্ণ মাস। এ মাসে তাপপ্রবাহের অস্বস্তির পাশাপাশি কালবৈশাখীরও দাপট থাকে বেশি। চলতি মাসের আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দুই থেকে চারটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ এবং এক বা দুটি তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। অতি তীব্র তাপপ্রবাহে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে। এশিয়া অঞ্চলের আবহাওয়াবিদরা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র, ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে তীব্র, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি এবং ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন।