রাজনৈতিক অঙ্গনে যত কল্পনা ও পরিকল্পনা

22

ঢাকা প্রতিনিধি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা কল্পনা ও পরিকল্পনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। নির্বাচন সামনে রেখে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। বিপরীতে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে কল্পনা ও পরিকল্পনা আছে বিএনপির। এসব কল্পনা-পরিকল্পনার মূলে সংকট হিসাবে দেখা হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুকেই।
সরকারি দলের পক্ষ থেকে তত্ত্বাধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ না থাকার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বিএনপির দাবি তত্ত্বাধায়ক সরকার বা নিরপেক্ষ সরকার। দলটির পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা ইতিমধ্যে এসেছে। এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আগামী নির্বাচন হতে দেয়া হবে না বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছে দলটি। তবে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ। সেজন্য দলটির নেতারা কূটনীতিক কিংবা রাজনীতিকদের সঙ্গে যেকোনো আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় সুষ্ঠু ভোটের আশ্বাস দিচ্ছেন। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে কোনো ছাড় দিতে নারাজ ক্ষমতাসীন দলটি।
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ গতকাল রবিবার ‘ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম’র প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। সব দল যাতে অংশগ্রহণ করে সেজন্য নির্বাচন কমিশন উদ্যোগ গ্রহণ করবে। খেলায় আয়োজকরা নিশ্চিত করে কারা কারা খেলতে আসবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের খেলার মাঠে আমরা একটা দল, বিএনপিও একটা দল। আমরাও চাই তারা অংশগ্রহণ করুক। আমরা ওয়াকওভার চাই না, আমরা খেলতে চাই, খেলে গোল দিয়ে জিততে চাই এবং দল হিসেবে আমরা আহবান জানাই বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল যেন আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়।
অন্য আরেকটি অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের অস্তিত্ব সংকটে, বহুদলীয় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে এ সরকার। জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা নেই বলেই সরকারের মন্ত্রীরা দায়িত্বহীন বক্তব্য দিচ্ছেন। এ সরকারের সঙ্গে রাজপথেই ফায়সালা হবে, আমরা ঐক্যবদ্ধ, ইতোমধ্যে রাজপথে নেমেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার না আসবে, ততক্ষণ কোনো নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না।
আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দল ও সহযোগী সংগঠনকে তৃণমূল পর্যন্ত সুসংগঠিত করার পাশাপাশি নির্বাচনকেন্দ্রিক কাজগুলো এগিয়ে নিচ্ছে দলটি। বিএনপির কর্মসূচির দিন শান্তি সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথেও সক্রিয় ক্ষমতাসীনরা। এর মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের নির্বাচনি কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া ও বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ফেরানো হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী জনসভা শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে যশোর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাজশাহী এবং সর্বশেষ গোপালগঞ্জে নির্বাচনী জনসভা করেছেন তিনি। এছাড়া আগামীকাল মঙ্গলবার কিশারগঞ্জ, ১১ মার্চ ময়মনসিংহ এবং ১৮ মার্চ বরিশালে জনসভা করবেন তিনি। এসব জনসভায় অংশগ্রহণের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চাইছেন নৌকায় ভোট।
গতকাল জামালপুরের ইসলামপুরে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, বিএনপি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে দেশকে পিছিয়ে দেয়। জনবিচ্ছিন্ন বিএনপি নির্বাচনী পরিবেশ ঘোলাটে করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখল করতে চায়।
দলের বিদ্রোহীদের সম্পর্কে তিনি বলেন, যারা দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন এবং যারা ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন তাদের দল থেকে ক্ষমা করা হয়েছে। আগামী নির্বাচনে কারা দলীয় মনোনয়ন পাবেন, সেটা মনোনয়ন বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে।
সরকারের পতন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনকেই মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগুচ্ছে বিএনপি। নির্বাচনের দিকে মনোযোগী না হয়ে আন্দোলনের দিকে অধিক মনোযোগী দলটি। কীভাবে নেতাকর্মীদের আরো চাঙ্গা করা যায় এবং আন্দোলনকে গতিশীল করা যায়, সে চিন্তা করছে দলটি। পূর্বের ভুল-ত্রুটিগুলো পর্যালোচনা করে তা সংশোধনে বিশেষ নজর দেয়ার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে দলের নেতাদের মধ্যে নানা কারণে সৃষ্ট দূরত্ব ঘুচিয়ে আনার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। যে কোনো মূল্যে দলে ‘চেইন অব কমান্ড’ ধরে রাখতে চায় হাইকমান্ড। কোনোভাবেই দলের মধ্যে যাতে বিভেদ সৃষ্টি না হয়, সেদিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দলটি থেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে যারা এখন রাজনীতির বাইরে আছেন বা সক্রিয় নন তাদের সাথে কথা বলছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাদেরকে সক্রিয় করার চেষ্টা যেমন আছে, তেমনি দলের শৃঙ্খলাবিরোধীদের বহিষ্কারে পিছপা হবে না বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছে হাইকমান্ড।
এদিকে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির গত জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর আলোকেই দলীয় ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে দলের সম্পাদকীয় উপকমিটিগুলোকে সভা-সেমিনার করে বিভিন্ন সেক্টর এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচন কেন্দ্রিক কোনো কর্মকান্ড এখনো নেয়নি বিএনপি। দলটি নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার দিকে জোর দিচ্ছে।