ড্রাইভারকে না মেরে আঘাতপ্রাপ্তকে সাহায্য করুন: প্রধানমন্ত্রী

27

পূর্বদেশ অনলাইন
কোনও দুর্ঘটনা হলে যিনি দুর্ঘটনায় কবলিত, অনেক সময় জনগণ তাকে সাহায্য না করে গাড়িচালককে মারধর করা শুরু করে এবং গণপিটুনিতে গাড়িচালক মারা যায় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই কাজটা কেউ দয়া করে করবেন না। কেউ ইচ্ছে করে মানুষকে মারে না বা ইচ্ছে করে ধাক্কা দেয় না।’ নানা কারণে সড়ক দুর্ঘটনা হতে পারে উল্লেখ করে কাউকে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ারও পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। ‘যদি অপরাধ করে, আপনারা ধরে থানায় দিয়ে দেন। পুলিশে দিয়ে দেন। তার বিচার হবে। আমরা সড়ক আইনও করে দিয়েছি এটা বিচারের জন্য’, বলেন তিনি। বুধবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে সারা দেশে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১০০টি মহাসড়ক উদ্বোধন করার সময় এই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি দেশের ৫০টি জেলায় প্রায় দুই হাজার ২১ কিলোমিটারের ১০০টি জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা মহাসড়ক উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ রাস্তায় পড়ে গেলে গণপিটুনির ভয়ে গাড়িচালক গাড়ি না থামিয়ে তার ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে যেতে পারে। যদিও যিনি পড়ে গিয়েছেন আরেকবার তার ওপর দিয়ে গাড়ি না গেলে হয়তো তিনি বেঁচেও যেতে পারতেন। এই ভীতিটা থেকে ড্রাইভারকে মুক্ত করতে হবে। এটা জনগণের দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই আমি অনুরোধ করবো আপনারা কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। ওই ড্রাইভারকে মেরে ফেললে পিটিয়ে সমাধান হবে না। বরং যার অ্যাক্সিডেন্ট হলো সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ডেকে তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সেই কাজটাই করবেন। যে আঘাতপ্রাপ্ত তাকে সাহায্য করেন। ড্রাইভারকে মেরে সমাধান হবে না।’ এই বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, সমাজসেবক, প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সবাইকে এই বিষয়ে জনগণকে সচেতন করারও নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বারবার এটা বলতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে।’ পাশাপাশি সড়কে চলাচলের নিয়ম-কানুনগুলো শিশুকাল থেকেই শেখানোর তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে প্রশাসনের সব স্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশনাও দেন তিনি। সড়ক পথে চলতে গেলে কতগুলো নিয়ম মেনে চলতে হয় জানিয়ে অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই সম্পর্কে একেবারে স্কুলজীবন থেকেই শিশুদের শিক্ষা দিতে হবে। সড়কে চলতে গেলে রাস্তা ব্যবহারের যে নিয়ম কানুনগুলো সেগুলো ট্রেনিং দেওয়া। এটা আমি প্রশাসনের সব স্তরেই বলবো। শুধু স্কুল থেকে এখনই ট্রেনিং দেওয়া না, সাধারণ মানুষকে এই ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। দরকার হলে প্রতিটি জায়গায় সাইন বোর্ড টানিয়ে বা হাটে বাজারে বা রাস্তার মোড়ে মোড়ে এগুলো প্রদর্শন করতে হবে।’ আওয়ামী লীগ সরকার সড়ক করে দিচ্ছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘কিন্তু সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব, যথাযথভাবে ব্যবহার করা এবং সেটার পরিচ্ছন্নতার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’ গাড়িচালকদের জন্য মহাসড়কে বিশ্রামাগার তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে নির্দিষ্ট সময় গাড়ি চালানোর পর চালকদের বিকল্প কাউকে রাখা এবং গাড়ির মালিকদের চালকদের বিষয়ে যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দেন সরকারপ্রধান। গাড়িচালকদের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তাদের ট্রাফিক নিয়মগুলো জানার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেটা যদি জানতে পারেন তাহলেই কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা কমবে।’ যেখানে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে সেই স্থানগুলো চিহ্নিত করে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানান তিনি।