সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, বঙ্গবন্ধু ও সোনার বাংলা

172

ববি বড়ুয়া

মাত্র ৫৫ বছর বয়সের নাতিদীর্ঘ জীবনে ৩,০৫৩ দিনই কাটিয়েছেন অন্ধকার কারাগারে কোনো ব্যক্তিগত অপরাধে নয় শুধু মানুষের কথা, দেশ ও জাতির কথা বলতে গিয়ে। একটি জাতির মুক্তির জন্য, জাতিকে স্বাধীন ভূখন্ড, স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দেয়ার জন্য অসময়েই ষড়যন্ত্রকারীর হাতে সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধুর সারাজীবন রাজনৈতিক সাধনার মূলে অন্যতম আদর্শ ছিল অসাম্প্রদায়িকতা ও মানবতাবাদ। এই দু’টি আদর্শেই পরিচালিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ। দেশের হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকল সম্প্রদায়ের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে ছিনিয়ে এনেছে বিজয়ের পতাকা। তাই তিনি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
সদ্য স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধুর সম্বল ছিল শুধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের বিধ্বস্ত অর্থনৈতিক কাঠামো, জনগণ আর আত্মবিশ্বাস।
১৯৭৩ সালে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে গেলে সেখানে সৌদি বাদশাহ ফয়সাল বঙ্গবন্ধুকে শর্ত দেন, বাংলাদেশকে ‘ইসলামিক রিপাবলিক’ ঘোষণা করলে তারা বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশের স্বীকৃতি দেবেন। বঙ্গবন্ধু এর পাল্টা জবাবে বললেন, ‘এটা কখনই সম্ভব নয় কারণ বাংলাদেশ মুসলমান- অমুসলমান সবার দেশ’। বঙ্গবন্ধু সকল ধর্মের প্রতি কতটা শ্রদ্ধাশীল হলে, অসাম্প্রদায়িক চেতনা রক্ষায় কতটা দৃঢ়চেতা হলে সৌদি বাদশার কথার এমন জবাব দেন।
১৯৭৪ সালে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনের ভাষণে তিনি বলেছিলেন, “এক মুখে সোশ্যালিজম আর প্রগতির কথা এবং আরেক মুখে সাম্প্রদায়িকতার কথা, পাশাপাশি চলতে পারে না”।
আজ তাঁরই আদর্শে লালিত পালিত তাঁরই কন্যা তাঁরই স্বপ্নকে বুকে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন অদম্য গতিতে। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যেন একটাই, তাঁর পিতার সোনার বাংলা গড়ার। লড়ে যাচ্ছেন আপসহীনভাবে।
পৃথিবীতে সাম্প্রদায়িকতা এখন বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। একইভাবে সম্প্রতি বাংলাদেশেও বেশ কিছু বিচ্ছিন্ন সাম্প্রদায়িক অপ্রীতিকর ঘটনার অবতারণা হয়েছে বৌদ্ধ ভিক্ষুকে নিয়ে। ফেইসবুকের ফেইক আইডির ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার স্ট্যাটাসের জের ধরে ঘটেছে অপ্রীতিকর ঘটনা। এতে দেশে বসবাস করা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী হঠাৎ শঙ্কিত ও আস্থার জায়গাটাও দুর্বল হয়ে পড়েছে কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, যখনই অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ বিপদে পড়েছে তখনই বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রুখে দাঁড়িয়েছেন। আশ্রয় দিয়ে আশ্বস্ত করেছেন পরম মমতায়। রামুর সহিংসতার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করতেই হয়।
আর তাঁরই আদর্শে উজ্জীবিত হওয়া আমাদের চট্টগ্রামের গৌরব, চট্টলার অহংকার, বিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মাননীয় মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি।
সম্প্রতি তাঁরই গ্রামে ঘটে যাওয়া বৌদ্ধ ভিক্ষুর উপর অযাচিত বৈরি আচরণ যা হয়েছে তা তিনি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। একটি বিষয় মনে রাখার আছে তা হলো, সেখানে শুধু সরকার পক্ষের মানুষ বসবাস করে তা নয়, সরকারবিরোধী অনেক ষড়যন্ত্রকারী মানুষও আছে যারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপ দিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারে। আরও বড়ো বিষয় হলো আমাদের বৌদ্ধ সমাজের অহংকার, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া আছেন সরকারের ভাবমূর্তি ও দেশের মানুষের শান্তি রক্ষায়। তাঁরা বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব ও মর্যাদার সাথে দ্রুত সামলিয়েছেন।
জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে একসঙ্গে বসবাস করতে গেলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, তাঁর আদর্শ, তাঁর দর্শন চর্চা করতে পারলে তাঁর স্বপ্নের সত্যিকারের সোনার বাংলা গড়তে বেশি সময় লাগবে না। আর তাহলে সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সুদৃঢ় মনোবলের কারণে আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। নতুন প্রজন্মসহ আমাদের সবার কর্মকান্ড তাঁর দর্শন ও জীবনাদর্শ অনুযায়ী পরিচালিত হলে সোনার বাংলা গড়া কঠিন কিছু নয়।

লেখক : প্রভাষক, ওমর গণি এমইএস কলেজ