বৈশ্বিক করোনাতংক এবং পেশাগত ভাবনা

75

ডা. কাজী সাজিয়া আফরিন শাওন

এইতো সেদিন, সুন্দরভাবেই চলছিল সবকিছু। হঠাৎ পৃথিবীটা থমকে গেল। বিশ্ব বাণিজ্যের আরাধ্যভূমি হিসাবে পরিচিত চীন হঠাৎ করেই যেন বৈশ্বিক আতঙ্কের রেডিক্যাল সেন্টার তথা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়ে গেল। প্রতিটি মানুষ তার নিকটতম দ্বিতীয় মানুষটিকেও নিজের জন্য নিরাপদ ভাবতে পারছিলনা। চারিদেকে শুরু হল সামাজিক আতঙ্ক। এ আতঙ্কের নিশ্চিত পরিণতি স্বরুপ শুরু হলো বাজারে অস্থিরতা। হু হু করে সব কিছুর মূল্য বাড়তে থাকল। হসপিটালগুলিতে ডাক্তাররা দিতে পারছিলেননা চিকিৎসা। সকল ডাক্তারের চেম্বার একত্রে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোগীরা চিকিৎসা পেতে ঘুরতে শুরু করল হসপিটালের দ্বারে দ্বারে। দেশে ছিলনা এ রোগ প্রতিরোধের নিরাপত্তা সামগ্রি।
গল্পটি এভাবেই শুরু হল। জলাতঙ্ক নয়, বলছি করোনাতঙ্কের গল্প। আমি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। হোমিপ্যথি চিকিৎসায় ডিএইচএমএস ডিপ্লোমা করেছি ২০১৭ সালে। আমি কোন খাবার বা পণ্যের বিবরণ লিখে কাউকে আনন্দ দিতে লিখিনা। আমার চিন্তার জগত, আমার সাধনার জগত- হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাশাস্ত্র। আজকের মরণঘাতি অনুজীব কোভিড-১৯ সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারি করোনা নিয়ে নিজের গল্প শেয়ার করতে চাই আপনাদের সাথে। বলছিলাম শুরুর কথা। তখন আমিও ভেবে পাচ্ছিলামনা কি করা উচিত। ঠিক তেমন সময় আমাদের দেশের সিনিয়র এবং ভারতের কিছু হোমিওপ্যাথি ডাক্তার নানাভাবে বলতে শুরু করলেন, হোমিওপ্যাথির প্রচলিত ওষুধ ‘আর্সেনিকাম এ্যালবাম- ৩০’ থমকে দিতে পারে কোভিড ১৯-এর সংক্রামক অণুজীবের আক্রমনের গতি-প্রকৃতিকে। কয়েক দিনের মধ্যে ভারতের আয়ুষ্মন্ত্রণালয়ের এলো অনুমোদন। তারা ঘোষণা করলেন, ‘আর্সেনিকাম এ্যালবাম- ৩০’ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এদিকে ১২ জুন ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজস্থান, কর্নাটক, তামিলনুডু, অন্ধ্র প্রদেশ ও কেরালা রাজ্য সরকার আর্সেনিককাম ওষুধটিকে করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে সুপারিশ করেছে।
তখন এলোমেলো কত দিক বিদিক ভাবনায় অস্থির মনটা। মানুষ নেমে পড়েছে একে অপরকে সাহায্য করতে। যার যা আছে তা দিয়েই চলছে মানবতার সেবা। কেউ শুকনা খাবার দিচ্ছে। কেউ দিচ্ছে মাষ্ক, সেনিটাইজার, কেউ এটা সেটা কত কি! মনটা আনচান করছিল। আমি কি করতে পারি! আমার সাধ্যইবা কতটুকু! এভাবে ভাবনার রশি ধরে শুরু হল গুটি গুটি পায়ে প্রথম পথ চলা। আমি আমার পেশার জায়গা হতে গণমানুষের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করলাম। প্রথমে নিজের পরিবারের সদস্যদের দিলাম ৩ দিনের ওষুধ।
সে সময় আমার ছোট ভাই এডভোকেট কাজী শামস্ উল আরেফিন কায়েস জানালো, চট্টগ্রামের ১০ জন এডভোকেট এ ওষুধ চেয়েছে। এভাবে শুরু হল ওষুধের ডিমান্ড আসা। তারপর নিকট আত্মীয়দের দিলাম বিনামূল্যে। তখন নিজের ঘরে আলাপ করে এই বিনামূল্যে দেয়ার প্রক্রিয়াটিকে এগিয়ে নিতে চাইলাম ব্যাপকভাবে। পাশে দাঁড়ালেন আমার স্বামী আইটি বিশেষজ্ঞ মো. ছরোয়ার আলম মিডু ও তার সদ্য গঠিত এইচ কে (আইটি) গ্রæপের অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় ইতিমধ্যে আমরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বহু সাধারণ মানুষের হাতে এ ওষুধ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি বিনামূল্যে। বর্তমানে ৩০০০ টাকার সমপরিমাণ ওষুধ কিনতে হচ্ছে প্রায় ১২,০০০ (বার হাজার) টাকায়। তবুও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি আপনাদের দোয়ায়। সামাজিক সচেতনতার সৃষ্টির লক্ষ্যে আমাদের বিনামূল্যে উপহার দেয়া ১০০ জনের ওষুধ গ্রহণ করে আমাদের উৎসাহিত করেছেন চসিক মেয়র আ. জ. ম. নাছির উদ্দীন সাহেব। আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই। স্বামর্থবানরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ন্যায্য মূল্যে। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তাদের দেয়া ওষুধের টাকা দিয়ে আমরা আবারও ওষুধ কিনছি। পৌঁছে দিচ্ছি দুস্থ মানুষের হাতে। আমরা আমাদের প্রিয় শহর চট্টগ্রামের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য স্থানে গরীব মেহনতি মানুষের হাতে হাতে বিতরণ করার প্রস্তুতিও ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছি। অচিরেই এ কার্যক্রম শুরু হবে ইনশাআল্লাহ্।
আশা করছি এ অঞ্চলের শিক্ষিত সমাজ ইতিমধ্যে এ ওষুধটির গুরুত্বের কথা জেনেছেন মিডিয়ার মাধ্যমে। আপনি আপনার পরিবার ও প্রতিবেশিকে সচেতন রাখুন। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। বার বার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ও মাস্ক পরার অভ্যাস করুন। একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের পরামর্শক্রমে এ ওষুধটি সেবন করতে উৎসাহিত করুন। সুস্থ থাকুক আমাদের সমাজ। সুন্দর হোক আগামী দিন।

লেখক: হোমিও চিকিৎসক ও প্রাবন্ধিক