অসুস্থ স্বাস্থ্যখাত, বাঁচার আর্তনাদ

91

তৌহিদুল আলম

চিকিৎসার জন্য উচ্চবিত্তের বিদেশ নির্ভরতা লুঠেরা কর্তাদের লাগামহীন দুর্নীতির কারণে চরম দুরবস্থায় দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত। বৈশ্বিক চলমান এ মহামারি মোকাবেলার শুরু থেকে দেশের স্বাস্থ্যখাত সাধারণ জনগণকে চরম হতাশাজনক বার্তা দেয়। ‘উন্নত বিশ্বের টার্গেটে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ বিগত বেশ কয়েকবছর যাবত শুনে আসা এ কথাটি কি আসলে উন্নয়নের প্রোপাগান্ডা ছিল চিকিৎসাসেবা মৌলিক অধিকারের অন্যতম। স্বাধীনতার এত যুগ পরও সাধারণ জনগণের আর্তনাদ কেন? এই আর্তনাদ কি মৌলিক অধিকার পাওয়ার! আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে সরকার নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে ঠাঁই হচ্ছে না রোগীর। নানান অজুহাতে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা না দিয়ে ফেরত পাঠাচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলো। এমনকি করোনা ছাড়া অন্য রোগে আক্রান্তদেরও। বিনা চিকিৎসায় মরছে সাধারণ মানুষ।
চিকিৎসাÑ প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এমন দুর্যোগে রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে তাকিয়ে থাকা অমানবিক ও মানবতা বিরুদ্ধ আচরণ। মানব সেবার ব্রত নিয়ে সিকিৎসকরা এগিয়ে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে সেই চিকিৎসকদের সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে বাধ্য করার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীকে তৎপর হতে হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনকই বটে।
চিকিৎসকরা মানুষের পরম বন্ধু। সেকেন্ড গড হিসেবেও তাদের জ্ঞান করে মানুষ। জীবন যখন সংকটাপন্ন হয়, তখন তারাই হয়ে উঠে মানুষের আস্থার ঠিকানা। কিন্তু চিকিৎসা না পেয়ে সাধারণ মানুষ হতাশায় বিক্ষুদ্ধ হয়ে রাজপথে আন্দোলন করছে। সর্বশেষ আস্থার ঠিকানা চিকিৎসকরা মানুষের মুখোমুখি হয়ে যাচ্ছে। যা কখনোই কাম্য নয়। পাশাপাশি দৃশ্যমান ভিন্ন চিত্রও। অনেক চিকিৎসক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন আক্রান্ত মানুষকে।
স্বাস্থ্যখাতে চলমান এ অস্থিরতার জন্য দেশের সাধারণ ডাক্তাররা দায়ি নয়। দায়ি, চিকিৎসা ব্যবস্থার নীতি নির্ধারকরা। করোনার প্রকোপের শুরুতে চিকিৎসকদের আহাজারি ছিল ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থার নিশ্চয়তার। আক্রান্তদের সেবাদানের জন্য প্রয়োজনীয় মানসম্পন্ন সরঞ্জাম মাস্ক, পিপিই’র। সরকার দ্রæত সরবরাহের ব্যবস্থা করে কিন্তু সেখানেও থাবা পড়ে লুঠেরাদের। ঝুঁকিতে ফেলে দেয় সাধারণ চিকিৎসকদের।
চিকিৎসাখাতে বরাদ্দকৃত অর্থ হরিলুঠের ইতিহাস নতুন নয়। সাধারণ জনগণ আশা করেছিল অন্তত এ মহামারি দূর্যোগের সময় লুঠেরা শ্রেণী একটু সংযত হবে। কিন্তু না তারা আরো বেপরোয়া হয়েছে। যার প্রমাণ ইতিমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। বিশিষ্টজনদের মতে বিগত দুই দশকে চিকিৎসাখাতে বরাদ্দের পঞ্চাশভাগ ঠিকমত কাজে লাগালে এ খাতের এমন দুরবস্থা হতনা। সামনে করোনা মোকাবেলায় আরো অনেক ব্যয়বহুল প্রকল্প আসছে তা যেন সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয়। শুধুমাত্র আস্থার সংকটের কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যায় চিকিৎসাখাতে।
করোনার চলমান দুর্যোগ আরো বাড়বে বাড়ছে। করোনা মোকাবেলায় শুরু থেকে সরকারের নানান কৌশলে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। তারপরও দেশ আমাদের চিকিৎসাখাতের জর্জরিত এ সমস্যার ভার আমাদেরকেই বহন করতে হবে। বাড়ছে লাশের সারি উৎকন্ঠায় প্রতিটি মানুষ। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে এগিয়ে আসতে হবে বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের। আমরা চাই না শুনতে এমন কথা বিনা চিকিৎসায় মরছে কারও স্বজন। আগামিকালকের দিনটা যেন না হয় দোষারোপের। জাগ্রত হউক সকলের মানবিকতাবোধ।

লেখক : সাংবাদিক