বৈশ্বিক দারিদ্র্য দূরীকরণে নোবেলজয়ী ত্রয়ী অর্থনীতিবিদ এর পরীক্ষামূলক পদ্ধতির নতুন দিগন্ত উন্মোচন

80

গত কালের বাকী অংশ

একটা জনগোষ্ঠীতে তাঁরা চালু করেন কিছু নতুন ব্যবস্থা, আর অন্যটা চলতে থাকে আগের মতোই। নির্দিষ্ট সময় পর তাঁরা পরিসংখ্যান বিচার করে দেখেন, যে সমস্যার সমাধান খুঁজছিলেন, সেটা পাওয়া গেল কি না।
সারা পৃথিবীর ৭০০ মিলিয়ন মানুষ, যাঁরা প্রবল দারিদ্র্যের মধ্যে আজও দিন কাটান, তাঁদের জন্য কোনও রুপোর ওষুধ খোঁজেননি এবারের নোবেলবিজয়ীরা। মেধা আর মননের নিখুঁত মিশেল, তার সঙ্গে জীবনকে উদ্যাপন করার অপরিসীম ¯পৃহা দিয়ে তাঁরা খুঁজেছেন দারিদ্র্যের বিভিন্ন দিকসমূহ- যথা ভগ্নস্বাস্থ্য, অপর্যাপ্ত শিক্ষা ইত্যাদি। এর পর তাঁরা এগুলোর প্রত্যেকটির আরও গভীরে অনুসন্ধান করেছেন। ভগ্নস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে যেমন, ওঁরা দেখেছেন পুষ্টি, ওষুধের ব্যবস্থা, টীকাকরণ। অভিজিৎ ও এস্তার তাঁদের সেন্টারের সহযোগিতায় বহু বছর ধরে দারিদ্র্য স¤পর্কিত গবেষণা করেছেন। তৃণমূল স্তরের মানুষের সঙ্গে মিশে তাঁরা বোঝার চেষ্টা করেছেন কোন সমস্যার জন্য ঠিক কোন নীতি গ্রহণযোগ্য হবে। এই সব ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণের জন্য তাঁরা পরীক্ষামূলক পদ্ধতি বা এক্সপেরিমেন্টের সাহায্য নিয়েছেন। বিশেষত ওষুধ নিয়ে গবেষণার জন্য ব্যবহৃত জধহফড়সরুবফ ঈড়হঃৎড়ষ ঞৎরধষ (জঈঞ) তাঁরা প্রয়োগ করেছেন অর্থনীতির গবেষণায়। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার গবেষণায় আরসিটি-র সফল প্রয়োগ হয়ে থাকে। বিশেষত চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নতুন ওষুধের প্রভাব নির্ণয় হয়ে থাকে এই পদ্ধতির দ্বারা। একটু বিস্তৃত করে বলতে গেলে এই আরসিটি পদ্ধতির দুটি মূল স্তম্ভ আছে। প্রথম স্তম্ভ হচ্ছে ট্রিটমেন্ট গ্রট্টপ যা রিচার্য গবেষণার স্বপক্ষে রয়েছে । অন্য দিকে, দ্বিতীয় স্তম্ভটি হচ্ছে কন্ট্রোল গ্রট্টপ যা কিনা উক্ত গবেষণার সুবিধাভোগের বাইরে। কোন নতুন কিছু প্রয়োগের ফলে ট্রিটমেন্ট গ্রট্টপ-এর অবস্থায় যদি কন্ট্রোল গ্রট্টপ-এর থেকে উন্নতি লক্ষ করা যায় তা হলে সেই নতুন প্রয়োগ গ্রহণযোগ্য হয়। শোনা যায়, ১৯৩৫ সালে রোনাল্ড ফিশার প্রথম এই আরসিটি-র কথা উলেখ করেন তাঁর দ্য ডিজাইন অব এক্সপেরিমেন্ট বইটিতে। অর্থনীতিতে আরসিটি-র ব্যবহার খুবই ব্যয় সাপেক্ষ। অধিকাংশ সময় এই ফিল্ড ট্রায়েলের ব্যয় বহন করে কোনও সরকারি সংস্থা বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। আরসিটি-র প্রতিক‚লতা থাকা সত্তে¡ও এর অভিনবত্ব সত্যিই প্রশংসনীয়। বিশেষ করে আর্থসামাজিক পরিমÐলে ক্ষুদ্র সংখ্যক উপভোক্তার উপরে কোন নির্দিষ্ট নীতির প্রভাব বিশ্লেষণ করায়। উল্লে­খযোগ্য যে এই পরীক্ষামূলক অর্থনীতির মূল আকর্ষণ হচ্ছে নীতি নির্ধারণের সময় নিচুতলার থেকে উঠে আসা পছন্দকে অগ্রাধিকার দেয়া। এত দিন নীতি প্রণয়নের সময় উঁচুতলার পছন্দকে চাপিয়ে দেয়া হত। নিঃসন্দেহে এটি উন্নয়নের অর্থনীতির এক নতুন দিগন্ত।
অর্থনীতিতে আরসিটি-র সফল প্রয়োগ এক যুগান্তকারী অবদান। বাস্তব জীবনে আরসিটি-র প্রয়োগ ও দারিদ্র্য দূরীকরণে মধ্যস্থতার মাধ্যমেই অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে এই পরীক্ষামূলক গবেষণা। মাইকেল ক্রেমার এই পদ্ধতি প্রথম প্রয়োগ করেন কেনিয়াতে। উনি লটারির মাধ্যমে স্কুল পড়–য়াদের দুটি ভাগে ভাগ করেন। প্রথম দলের বাচ্চাদের বিনামূল্যে বই ও খাবার দেওয়ার নীতি নেওয়া হয়। অর্থাৎ গবেষণায় এই প্রথম দলটি হল ট্রিটমেন্ট গ্রট্টপ। আর অন্য দলটি কন্ট্রোল গ্রট্টপ যেখানে বাচ্চাদের কোনও কিছু দেওয়া হয় না। এই পরীক্ষামূলক গবেষণায় ক্রেমার দেখেন যে বাচ্চাদের মধ্যে স্কুলে যাবার প্রবণতার উন্নতি লক্ষ করা যায় যদি তাদের বিনা পয়সায় পাঠ্যপুস্তক ও খাবার দেওয়া হয়। পরে ভারতে ওই একই ফিল্ড ট্রায়াল প্রয়োগ করেন এস্তার দুফলো ও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। ধাপে ধাপে এ ভাবে ফিল্ড ট্রায়াল অন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও পরীক্ষিত হতে থাকে। স্বনির্ভর গোষ্ঠী, ক্ষুদ্রঋণ থেকে স্বাস্থ্য পরিষেবায় টিকাকরণের প্রভাব সব কিছুতেই আরসিটি-র প্রয়োগ করে দেখার চেষ্টা হয়। দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য এই আরসিটি-র দ্বারা নির্ধারিত উপযুক্ত নীতির প্রয়োগ ক্ষমতা। তৈরি হয় আব্দুল লাতিফ জামিল পোভার্টি অ্যাকশন ল্যাব। মূলত তৃতীয় বিশ্বে দারিদ্র্য দূরীকরণের পরীক্ষামূলক গবেষণায় নিযুক্ত হয় এই ল্যাবটি।
দারিদ্র্য নিয়ে অর্থনীতিতে প্রচলিত যা ভাবনা রয়েছে তা অনেকটা তারাপদ রায়ের গরিবগঞ্জের রূপকথা কবিতার মতো “গরিবগঞ্জে টাকা নেই তাই কলের চাকা নেই / আবার কলের চাকা নেই তাই টাকা নেই। / টাকা নেই বলে চাকা নেই বলে টাকা নেই। অর্থাৎ এখানে দারিদ্র্য চক্রাকারে আবদ্ধ আর তার শৃঙ্খল ভাঙার জন্যে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর ভরসা করা ছাড়া উপায় নেই। বিনিয়োগ আসার ফলে অর্থনীতিতে যে ধাক্কা লাগবে তাতে কলের চাকা ঘুরবে, গরিবগঞ্জের মানুষ কাজ পাবে তাদের হাতে আসবে টাকা।
২০১১ সালের সাড়া জাগানো বই “পুওর ইকনমিক্স-এ” অধ্যাপক অভিজিৎ ব্যানার্জী এবং এস্তার ডুফলো দেখান যে বিদেশি বিনিয়োগ বা সাহায্যের সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা দারিদ্র্য দূরীকরণের স্বপক্ষে কোন প্রামাণিক তথ্য নেই। একভাবে এটা ট্রিকল ডাউন তত্তে¡র ব্যর্থতা প্রমাণ করে। এছাড়া ভারতের মতো দেশে যেখানে দারিদ্র্যের সমস্যা প্রকট, সেখানে দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্পের মূল অর্থের জোগান আসে করসঞ্জাত অর্থ থেকে। তাই তাঁরা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সেই সম্ভাবনার দিকে, যেখানে সরকারি প্রকল্পের ভর্তুকি দরিদ্র মানুষের কাজে লাগে না, কখনও তা গরিব মানুষদের নিজস্ব চাহিদা-যোগানের বৈশিষ্ট্যের জন্যে, কখনও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কারণে এবং এই কারণেই তার দারিদ্র্য প্রলম্বিত হয়, দুষ্টচক্রে সে আটকে পড়ে নিজের কারণেই। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা দেখিয়েছেন দরিদ্র মানুষ অনেক সময়েই সঞ্চয় করতে পারে না তার কারণ, যদি সমাজে অসাম্য খুব বেশি থাকে, সে মনে মনে বুঝতে পারে এই সামান্য সঞ্চয় অবলম্বন করে অভীষ্ঠ সামাজিক অবস্থানে পৌঁছতে পৌঁছতে সে বুড়ো হয়ে যাবে। এই কারণেই স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিকে দারিদ্র্য দূরীকরণের হাতিয়ার করা সমস্যাসঙ্কুল। কারণ হত-দরিদ্রদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা নেই। এক্ষেত্রে ভবিষ্যৎবিমুখতা বা মন্দগ্রাহিতাকেই তাঁরা দারিদ্র্যের কারণ হিসেবে নির্দেশ করেছেন। একইরকম উদাহারণ দেয়া যায় টিকাকরণ কর্মসূচির ক্ষেত্রে যেখানে মানুষ শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবে সন্তানকে টিকা দিতে নিয়ে যান না (প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এটা শুধু মাত্র উন্নয়নশীল দেশের সমস্যা নয়, খোদ আমেরিকাতেও টিকা নেয়ার হার, ধরা যাক ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা, ১০০ শতাংশ নয়)। অনেক ক্ষেত্রেই সচেতনতার অভাবে মা-বাবা রা মনে করেন টিকা প্রসূত কোনও অসুখে তার শিশু আক্রান্ত হতে পারে। এসব ক্ষেত্রেই তাঁরা দেখেছেন সঠিক প্রণোদনা দিতে পারলে এই ধরনের দারিদ্র্য স্থায়ী করা উপাদানগুলির প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া যায়। যেমন, এখন অনেক মাইক্রো ক্রেডিট প্রকল্পগুলিই গ্রাহকদের ভোগ্যদ্রব্য কেনার জন্য ঋণ নিতে নিরুৎসাহ করে। অর্থনীতিবিদত্রয় দারিদ্র্যের ধারণা বিশ্লেষণ করতে বিশদ ব্যবহার করেছেন এক্সপেরিমেন্টাল অর্থনীতির। এখানে নমুনা সমীক্ষার বদলে মানুষ কে সরাসরি বিভিন্ন প্রকল্পের আদলে কিছু সুবিধে দিয়ে তাদের সঙ্গে তুলনা করা হয় আরেকটি দলের , যারা অন্যান্য দিক থেকে আগের দলটির সদস্যদের মতোই – শুধুমাত্র পার্থক্য এই যে তারা প্রকল্পের সুবিধাটি পায়নি।
২০০৩ সালে ডুফলো ও ব্যানার্জী যৌথভাবে এম আই টি-তে আব্দুল লতিফ জমিলা পোভার্টি অ্যাকশন ল্যাব গবেষণাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্বের দরিদ্রতম মানুষদের নিয়ে প্রায়োগিক গবেষণার কাজটি তাঁরা করতে পেরেছেন বিশ্বের অন্যতম এক ধনকুবেরের আর্থিক আনুক‚ল্যে। পোভার্টি অ্যাকশন ল্যাবরেটরিটি আরব শেখ আবদুল লতিফ জমিলের নামাঙ্কিত। এম আই টি-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এই গবেষণা কেন্দ্র ল্যাবরেটরির মতোই হাতে-কলমে অর্থাৎ সোশ্যাল সায়েন্সের ক্ষেত্রে মাঠে ঘাটে, দূর দূরান্তে গ্রামাঞ্চলে ও অনুন্নত সমস্ত অঞ্চল থেকে প্রত্যক্ষ তথ্য সংগ্রহ করে সেই তথ্যের ওপর বিভিন্ন পরীক্ষামূলক পদ্ধতি প্রয়োগ করে গবেষণা করতেন। গত এক দশক ধরে আব্দুল লতিফ জমিলা পোভার্টি অ্যাকশন ল্যাব এর সদস্যরা প্রায় ৪০ টি দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পয়ঃপ্রণালী,পানীয় জলে ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই ধরনের এক্সপেরিমেন্ট করে তথ্য সংগ্রহ করে চলেছেন- যা এ¤িপরিক্যাল অর্থনীতি এবং পলিসি রিসার্চের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। কাজের ক্ষেত্র হিসাবে তাঁরা উন্নয়নের তিনটি মৌলিক ক্ষেত্রকে নির্বাচন করেছেন। কৃষিক্ষেত্র, শিশু শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। ওয়ার্লড হেলথ অর্গাইনেজশন শিশুদের ভ্যাকসিন বিষয়ক প্রকল্পে গ্রামাঞ্চলে ও শহরে গরিব শিশুদের বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন ও ডিওয়ার্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং কিছু ক্ষেত্রে সাবসিডিরও ব্যবস্থা থাকে। ডুফলো, ক্রেমার ও ব্যানার্জীর প্রত্যক্ষ গবেষণা, ফিল্ড ওয়ার্ক প্রমাণ করে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিনা পয়সার জন্য অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতার অভাবে তারা বাচ্চাদের ডিওয়ার্ম বা ভ্যাকসিনে ইচ্ছুক নন। সেক্ষেত্রে প্রচলিত অর্থনীতির তত্ত¡ অনুযায়ী, তাহলে সাবসিডাইজড একটা মূল্য নেওয়া হোক। কিন্তু ডুফলো তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন কেনিয়া সহ আফ্রিকার বহুদেশে মানুষ অত্যন্ত ঢ়ৎরপব ংবহংরঃরাব, বিশেষ করে ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে। সেক্ষেত্রে তাঁদের প্রেসক্রিপশন, বাচ্চারা ভ্যাকসিন নিতে বা ডিওয়ার্মের জন্য এলে তাদের বাবা মা-কে বোনাস হিসেবে কিছুটা শাকসবজি অথবা শস্য দেওয়া হোক। উন্নয়নের তিন মূল কাঠামোর ওপর জোর দিলেই বিশ্বের দারিদ্র্য দূরীকরণ হবে তা রাজনীতিবিদরা মুখে বললেও পরিকল্পনা ও পদ্ধতি নিয়ে যে প্রশ্নগুলো থেকে যায় তার উত্তর এই অমূল্য গবেষণাগুলো দিতে পারবে বলেই বিশ্বাস সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতিবিদদের। অধ্যাপক অমর্ত্য সেন ও তাঁর সুযোগ্য ছাত্র অভিজিৎ ব্যানার্জী দুজনেই দারিদ্র্য দূরীকরণে মাইক্রো লেভেলের কাজকেই গুরুত্ব দিয়েছেন এবং এই কাজগুলোকে অবশ্যই বৃহৎ অর্থাৎ ম্যাক্রো লেভেল প্রতিষ্ঠানগুলোরও স¤পূর্ণ সহায়তার একটা সহাবস্থান প্রয়োজন।
বিশ্বের নামী সব সাময়িকীতে অসংখ্য লেখা প্রকাশ হয়েছে অভিজিৎ ব্যানার্জির। আন্ডারস্ট্যান্ডিং পোভার্টি , হোয়াট দ্য ইকোনমি নিডস নাউ শিরোনামের যৌথ স¤পাদনার বই ছাড়াও নিজের লেখা বই আছে চারটি। এর মধ্যে দারিদ্র্য নিয়ে অভিজিৎ ও তাঁর নোবেলজয়ী স্ত্রী এস্তারের লেখা বহুল প্রশংসিত পুওর ইকনোমিকস বইটি জিতেছে গোল্ডম্যান স্যাকস বিজনেস বুক অব দ্য ইয়ার পুরস্কার। এর মধ্যে অভিজিৎ ও এস্তারের লেখা পুওর ইকনমিক্স গ্রন্থে অভিজিৎ ও এস্তার আক্ষেপ করেছেন দারিদ্র্য নিয়ে বিতর্কমূলত বৃহৎ প্রশ্নেই ঘোরাফেরা করেছে, যেমন দারিদ্র্যের চ‚ড়ান্ত কারণ কী, মুক্ত বাজারের উপর কতটা আস্থা রাখা উচিত, গণতন্ত্র কী দরিদ্রদের পক্ষে ভাল, বিদেশি সাহায্যের কি ভ‚মিকা রয়েছে প্রভৃতি।
এমআইটির শিক্ষকতার পাশাপাশি একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত অভিজিৎ। তিনি আব্দুল লতিফ জামিল পোভার্টি অ্যাকশন ল্যাবের সহ প্রতিষ্ঠাতা। ইনোভেশন ফর পোভার্টি অ্যাকশনের গবেষক। তিনি কনসোর্টিয়াম অন ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেমস অ্যান্ড পোভার্টির সদস্য। এছাড়াও অর্থনীতি বিশ্লে­ষণ ও উন্নয়ন বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ এর সাবেক প্রেসিডেন্ট, সেন্টার ফর ইকোনমিকস মিক্স পলিসি রিসার্চ, কিইল ইনস্টিটিউট, আমেরিকান একাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স এবং ইকোনমিক সোসাইটির সম্মানিত ফেলো।
অভিজিৎ বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২০ বছর গবেষণা করেছি। ভারত, চীন, সাউথ আফ্রিকা, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চিলি, ঘানা এই সমস্ত দেশে আমি বারবার গিয়েছি। তবে দারিদ্র্য নিয়ে গবেষণায় দীর্ঘ ২০ বছর ধরে নিযুক্ত থাকায় আজকের এ সাফল্য।
অর্থনীতিবিদরা বিশাল অ্যাটম স্মার্স বা জিন-সিকোয়েন্সিং সুবিধাগুলি না তৈরি করতে পারে তবে তারা এখনও কঠোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারে। এবারের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদত্রয় পরীক্ষামূলক পদ্ধতির ব্যবহার, বিশেষত স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা খাতে নতুন কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে বৈশ্বিক দারিদ্র্য বিমোচনের লড়াইয়ে সবচেয়ে কার্যকর কৌশল খুঁজে পেতে সফল হয়েছেন। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে কঠিন প্রশ্নগুলোকে সহজে ব্যবস্থাপনাযোগ্য প্রশ্নে রূপান্তর এবং মাঠ পর্যায়ে কাজের মাধ্যমে এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের স্বীকৃতি হিসেবে এ সম্মাননা জানানো হয়েছে।
অভিজিৎ ব্যানার্জি বরাবরই উন্নয়ন অর্থনীতি নিয়ে কাজ করে আসছেন। বিশেষত দারিদ্র্য দূরীকরণে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের ভ‚মিকা এবং অর্থনীতির সঙ্গে কৌশলগত স¤পর্ক নিরূপণে তার উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে।ওঁদের গবেষণা গোটা বিশ্বকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়ার নতুন হাতিয়ারের সন্ধান দিয়েছে। মাত্র দুই দশকে ওঁদের গবেষণা পদ্ধতি উন্নয়ন অর্থনীতির রূপরেখা বদলে দিয়েছে। এখন অর্থনীতির গবেষণায় এটি অন্যতম পাথেয় মডেল।
লেখক : রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত), ইউএসটিসি