কোনো অনৈতিক পথে যাবেন না

52

মানসম্মত শিক্ষা দিয়ে শিক্ষার্থীদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে দেশের জনসংখ্যাকে মানব সম্পদে পরিণত করারও তাগিদ দেন তিনি। গতকাল রবিবার দুপুরে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত বেসরকারি পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে সভাপতির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নিয়ম মেনে চলারও আহবান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমি আশা করি কেউ কোনোভাবে কোনো অনৈতিক পথে যাবেন না। প্রশ্নফাঁস করে সেটা থেকে সুবিধা আদায়ের কোনো চেষ্টা পক্ষ কোনো করবেন না।
পরীক্ষা সংশ্লিষ্টদের নিয়ম মেনে চলার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আশা করি পরীক্ষার্থীরা তাদের মেধা ও প্রস্তুতি দিয়ে তাদের পক্ষে যতটুক ভালো ফলাফল করার সম্ভাবনা রয়েছে তারা তা করতে পারবেন।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের ‘গুজবে’ কান না দিতেও পরীক্ষার্থী ও অভিবাবকদের প্রতি আহবান জানান দীপু মনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের যুবসমাজ স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির কাছে কখনো মাথা নত করেনি। বরং জাতির প্রতিটি সংকটকালীন মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তারা। আগামি দিনেও ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ে তুলতে অবদান রাখবে তারা। বাংলাদেশের বিশাল উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিতে যুবসমাজের সম্পৃক্ততা অপরিসীম। শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষকের দায়িত্ব অভিভাবকের মতো। কখনো কখনো তার চেয়েও বেশি। শিক্ষার মানোন্নয়নের চেষ্টায় আপনারা কোনো ছাড় দেবেন না। শিক্ষার্থীদের স্বাধীন চিন্তা ও সৃজনশীলতার পাশাপাশি শৃঙ্খলাবোধ খুবই জরুরি। তাদের দেশপ্রেম, মানবিকতা, নৈতিকতার শিক্ষা দেবেন। আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলবেন।
শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষার মানকে দিতে হবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।ক্যাম্পাসে গঠনমূলক পরিবেশ, সহশিক্ষা কার্যক্রম ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সুযোগ্য নাগরিক ও আলোকিত মানুষ তৈরি করা হোক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্রত। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহযোগিতা করবে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থার গবেষণার তথ্য তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে লাল সবুজের বাংলাদেশ ২৮তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে। ২০৫০ সালের মধ্যে নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, চীন, স্পেন, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার মতো দেশকে অতিক্রম করে বিশ্বে ২৩তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে উন্নীত হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, চিন্তায় অগ্রসরমান একটি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য এগিয়ে চলেছেন। এজন্যই আমরা দেখছি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল নির্মিত হচ্ছে। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি হচ্ছে পদ্মাসেতু। ঢাকায় মেট্রোরেল হচ্ছে। এমনকি মহাকাশে স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।
এই উন্নয়নের ¯্রােতধারায় যুবসমাজকে সম্পৃক্ত হওয়ার আহবান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের আত্মতুষ্টিতে ভুগলে হবে না। যেতে হবে আরও অনেকদূর। সেজন্য মানুষের সম্পৃক্ততা অনেক বেশি জরুরি।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ উপমন্ত্রী ও পোর্ট সিটি ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, সবার আগে দেশকে ভালোবাসতে হবে। মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করতে হবে। আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদেরকে দেশের স্বার্থে, মুক্তিযুদ্ধের স্বার্থে এবং পোর্ট সিটির স্বার্থে কারো সাথে আপোস না করার কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার পর আমাদের মধ্যে একটা ধারণা জন্মায় যে, উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করলে আমাদের বোধহয় দাপ্তরিক ও ম্যানেজমেন্ট এর কাজ ছাড়া আর কিছু করা উচিৎ নয়। কিন্তু কোনো কাজকে ছোট করে দেখা উচিত নয়। কারণ বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রয়াসের মাধ্যমে বৃহৎ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আর একজন কৃষকের উৎপাদনের সঙ্গে যখন মেধা যুক্ত হয়েছে তখন বহুজাতিক কোম্পানি সৃষ্টি হয়েছে। আমরা ব্যবহারিক শিক্ষার ওপরও যেন গুরুত্ব দেই। কোনো কাজকেই যেন ছোট মনে না করি। মনে রাখতে হবে, উচ্চশিক্ষা মানে কিন্তু শুধু দাপ্তরিক কাজ নয়।
এতে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নুরুল আনোয়ার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে প্রকৌশল ও বিজ্ঞান, ব্যবসা প্রশাসন এবং কলা, সমাজবিজ্ঞান ও আইন অনুষদের অন্তর্ভুক্ত ৯টি বিভাগের ১৩টি প্রোগ্রাম থেকে পাশ করা ২ হাজার ৮৮ জন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রী প্রদান করা হয়। এছাড়া ৭ শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর ও ১ শিক্ষার্থীকে প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক ইফতেখারুল আজম এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক আফসানা আলম এর সঞ্চালনায় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ভাইস চেয়ারম্যান জহির আহমেদ, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর সদস্যবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক অ্যাডভাইজার, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পিসিআইইউর বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন, ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের ডিন, কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন, রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, প্রক্টর, বিভিন্ন বিভাগের কো-অর্ডিনেটর, চেয়ারম্যান ও শিক্ষকবৃন্দ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ব্যান্ড দল ভাইকিংস এর পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৭ মে মাত্র ৬ জন শিক্ষক, ৪ জন কর্মকর্তা ও ১ জন কর্মচারি এবং ৬টি প্রোগ্রামে ৬৯ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণ ও খন্ডকালীন শিক্ষক সংখ্যা ১৭০ জন, শিক্ষার্থী ৬ হাজারেরও বেশি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারির সংখ্যা ১৯০ জন। এছাড়া ৩ টি অনুষদের অধীনে ৯টি বিভাগের ১৩টি প্রোগ্রাম নিয়ে এর শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।
এদিকে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে গতকাল রবিবার সকালে নগরীর ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে যান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মণি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সেখানে শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তাঁরা।