এমপি কমলের বক্তব্যের প্রতিবাদে ফুঁঁসে উঠেছেন আইনজীবীরা

18

কক্সবাজার প্রতিনিধি

বিচারককে ‘ভাত খেতে ও চাকরি করতে দেবেন না’- এমন বক্তব্য দিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন কক্সবাজার সদর আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সায়মুম সরওয়ার কমল। তার এমন হুমকিমূলক বক্তব্যের পর আইনজীবীরা ফুঁসে উঠেছেন। সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে মানববন্ধন করেন শতাধিক আইনজীবী।
এতে বক্তারা বলেন, ‘দখলনায়ক ও গডফাদারের’ ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন এমপি কমল। তিনি আদালত ও বিচারককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। সস্তা জনপ্রিয়তা নিতে, তা আবার রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এটা সাধারণ মানুষের কাছে আদালত ও বিচারককে প্রশ্নবিদ্ধ করার শামিল। এ ঘটনায় বিচারবিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
গত শনিবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি রামু উপজেলা শাখা আয়োজিত শিক্ষক মিলনমেলা, নবীনবরণ, বিদায় ও কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন এমপি কমল। এতে তিনি বলেন, রামুর শিক্ষক জসিমউদ্দিন। তার বিরুদ্ধে দ্রুতবিচার আইনে মামলা হয়েছে। আমি জজ সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি। ঘটনা মিথ্যা, কোনো ঘটনা নেই। জমি নিয়ে গন্ডগোল, সেখানে কোনো মারামারি হয়নি। কোনো ভিডিও ফুটেজ নেই, কোনো সাক্ষী নেই। কিন্তু একজন পেশকার একজন জজকে ম্যানেজ করে দ্রæতবিচার আইনে মামলা দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ইনশাআল্লাহ আমি বেঁচে থাকতে তাকে (শিক্ষক) জেলে যেতে দেব না। তাকে যদি জেলে যেতে হয়, তা হলে আমি বেঁচে থাকতে যে জজ সাহেব মিথ্যা মামলা করেছে, তাকে আমি জীবনে ভাত খেতে দেব না। তাকে আমি চাকরি করতে আর দেব না।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষকের বিপদে শিক্ষককে আসতে হবে। একজন শিক্ষকের বিপদে সব শিক্ষককে একসঙ্গে থাকতে হবে। কোনো শিক্ষক যদি কোথাও অসম্মানিত হয়, তা হলে আমার আসনের প্রত্যেকটি স্কুল একসঙ্গে বন্ধ করে দিতে হবে। শিক্ষক সমিতি, প্রতি মাসে আপনারা মিটিং করবেন। আপনাদের সম্মান রক্ষার্থে, জীবন রক্ষার্থে, সম্পদ রক্ষার্থে এই সমিতি কার্যকর ভূমিকা যাতে পালন করে।
এমপি কমলের এ বক্তব্য বিচারককে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়া এবং আদালত অবমাননার সামিল। একজন আইন প্রণেতা এমনটি বলতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন আইনজীবীরা। এর প্রতিবাদে মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ করেছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবীরা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও আদালত পাড়ায় সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে আইনজীবীরা দাবি করেন, কোন মামলায় গরমিল দেখলে একজন এমপি হিসেবে জেলা জজ মহোদয়কে বলে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাইতে পারতেন। এটাই ছিল সঠিক পথ।
আইনজীবী মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র আইনজীবী আমির হোছাইন, নুর মুহাম্মদ মামুন, খোরশেদ আলম, নুরুল ইসলাম নুরু, মাহবুবুর রহমান, আবদুর রহিম, রিদুয়ান আলী, মুহাম্মদ শাহীন প্রমুখ।
এ বিষয়ে জানতে এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেয়া হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।