৬৯টি রুশ জাহাজ নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কি?

40

নিজস্ব প্রতিবেদক

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার ৬৯টি মাদার ভ্যাসেলকে দেশের বন্দরে ভিড়তে না দেয়ার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে এ নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। তবে এ কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর তেমন একটা প্রভাব পড়বে না বলে জানান খাত সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, রাশিয়ার সাতটি কোম্পানির মালিকানাধীন ৬৯টি মাদার ভ্যাসেলের চলাচলসহ সার্বিক পরিষেবা প্রদানের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। স¤প্রতি রাশিয়ান সহায়তায় নির্মিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য পণ্য নিয়ে রং ও নাম পরিবর্তন করে একটি জাহাজ বাংলাদেশে আসে। পরবর্তীতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ ওই জাহাজটিকে মোংলা বন্দরে প্রবেশ করতে দেয়নি। ওই ঘটনার পর এবার ৬৯টি রাশিয়ান জাহাজের একটি তালিকা দিয়ে এসব জাহাজকে বাংলাদেশের বন্দরে প্রবেশ করতে না দেয়ার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জরুরি ভিত্তিতে একটি পত্রে রাশিয়ার সাতটি কোম্পানির মালিকানাধীন ৬৯টি মাদার ভ্যাসেলের তালিকা প্রেরণ করে জাহাজগুলোর ব্যাপারে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হয়। জাহাজগুলোকে বন্দরে বার্থিং থেকে শুরু করে সব ধরনের পরিষেবা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানানো হয়। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ওই পত্র এবং তালিকা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ঘুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে।
গত ৪ জানুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারটি জানানোর পাশাপাশি ৬৯টি জাহাজের একটি তালিকা নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জাহাজগুলোর ব্যাপারে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নৌপরিবহন মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়। এর একদিন পরই গত ৫ জানুয়ারি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় একটি পত্র চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দরের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার দপ্তরে পাঠায়।
এতে নিষেধাজ্ঞানুযায়ী ৭টি কোম্পানির অন্তর্ভুক্ত ৬৯টি জাহাজকে বন্দরে প্রবেশ, নিবন্ধন, জাহাজের বাংকারিং, শ্রেণিকরণ, সনদায়ন, রক্ষণাবেক্ষণ, পুনঃসরবরাহ, রিফুয়েলিং, বীমা এবং অন্যান্য সামুদ্রিক পরিষেবা ইত্যাদি নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ পতাকা রেজিস্ট্রেশনকারী সংস্থা কর্তৃক জাহাজগুলোর জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী যেকোনো ধরনের রেজিস্ট্রেশন প্রদান না করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। বন্দরের পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের এমডিসহ বিভিন্ন দপ্তরে পত্রটি পাঠানো হয়েছে। উক্ত পত্রের সাথে সাতটি কোম্পানির নাম এবং তাদের মালিকানাধীন ৬৯টি জাহাজের তালিকাও প্রেরণ করা হয়েছে।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে অবরোনলজিস্টিকা ট্রিপল জিরোর মালিকানাধীন জাহাজের সংখ্যা ৩টি, এসসি সাউথ এলএলসি জাহাজের সংখ্যা ৪টি, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি নর্দান শিপিং কোম্পানির মালিকানাধীন জাহাজের সংখ্যা ২৭টি, ট্রান্সমরফ্লট এলএলসির মালিকানাধীন জাহাজের সংখ্যা ১৬টি, এম লিজিং এলএলসির মালিকানাধীন জাহাজের সংখ্যা ৩টি, মেরিন ট্রান্স শিপিং এলএলসির মালিকানাধীন জাহাজের সংখ্যা ১টি এবং নর্ড প্রজেক্ট এলএলসি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির মালিকানাধীন জাহাজের সংখ্যা ১৫টি মিলে সর্বমোট ৬৯টি মাদার ভ্যাসেল রয়েছে।
তথ্য মতে, রাশিয়া থেকে আমদানি হওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- গম, তেল, লোহা তৈরির স্ক্র্যাপ, নিউজপ্রিন্ট, সার ইত্যাদি। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি রাশিয়া থেকে আমদানি হচ্ছে।
নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব খাতে কেমন প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে বিএসএম গ্রুপের কর্ণধার আবুল বাশার জানান, খুব বেশি একটা প্রভাব পড়বে না। কারণ বাংলাদেশি জাহাজ যদি রাশিয়া গিয়ে পণ্য আনতে না পারতো, তাহলে প্রভাবটা বেশি পড়তো। তবে একদমই প্রভাব পড়বে না তা নয়, কারণ রাশিয়ার জাহাজ ওই দেশের পণ্য নিয়ে আসার ক্ষেত্রে খরচ কম হবে, তুলনামূলক সুবিধাজনকও।
একইভাবে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ আরিফ জানান, গম, তেল, স্ক্র্যাপসহ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি রাশিয়া থেকে আমদানি হয়। নিষেধাজ্ঞার কারণে খুব একটা প্রভাব পড়বে বলে আমার মনে হয় না। তাছাড়া এসব জাহাজের মধ্যে কয়টি জাহাজ দেশে আসে তা সঠিক জানা নেই। তবে যে কয়টি জাহাজের সাথে দেশের ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যিকভাবে চুক্তি রয়েছে, তারা চুক্তি বাতিল করে অন্য জাহাজ নিতে পারেন।