দাবদাহে খাগড়াছড়িতে ঝরে যাচ্ছে আম আতঙ্কে চাষিরা

2

পূর্বদেশ ডেস্ক

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার যাদুরাম পাড়ায় দেশি এবং বিদেশি আমের ২৫ একরের বাগান গড়ে তুলেছেন মংশিতু চৌধুরী। চলতি বছরে পর্যাপ্ত মুকুল আসায় ভালো লাভের আশা করছিলেন তরুণ এই আমচাষি। কিন্তু চলমান দাবদাহে তার স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। অতিরিক্ত গরমের কারণে এর মধ্যেই ঝরে গেছে বাগানের প্রায় ৬০ শতাংশ আম। কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘ফ্রুট ড্রপিং’। মংশিতু চেষ্টা করছেন বাকি আমগুলো ধরে রাখার।
তিনি বলছিলেন, ‘বছরের শুরুতেই গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল। পরে তা ঝরে যায়। এখনও গাছে থাকা আমগুলো রক্ষা করা গেলেও কিছুটা লাভবান হবো। কিন্তু গরম অব্যাহত থাকলে সেগুলো থাকার সম্ভাবনা কম। পাহাড়ি এলাকায় সেচ দেওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও ফ্রুট ড্রপিং ঠেকাতে গাছে নিয়মিত পানি দেওয়ার চেষ্টা করছি’। মংশিতুর বাগানে নিয়মিত শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন প্রকাশ নন্দ ত্রিপুরা ও পলিন ত্রিপুরা। তারা জানান, বাগানের আম রক্ষার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। পানি, ওষুধ দেওয়ার পরও প্রচন্ড গরমে আমগুলো ঝরে পড়ছে।
খাগড়াছড়ির মহালছড়ির ধুমনীঘাট এলাকায় প্রায় ৩৫ একরের পাহাড়ি টিলায় বাগান গড়ে তুলেছেন চাষি হ্ল্যাশিংমং চৌধুরী। তার বাগানের বেশির ভাগ অংশজুড়ে আছে আম্রপালি, মিয়াজাকি, আমেরিকান পালমারসহ ৩০ প্রজাতির বেশি আম গাছ। তিনি বলেন, ‘এবার অতিরিক্ত গরমের কারণে গাছে আম রাখা যাচ্ছে না। এখন গাছের তলায় আম আর আম। এর মধ্যেই ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আম ঝরে গেছে’। খবর বিডিনিউজের
এই মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে প্রতিদিনই ‘ফ্রুট ড্রপিং’য়ের হার বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় নিয়মিত সেচ দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই। বৃষ্টি না হলে এবার ফ্রুট ড্রপিংয়ের কারণে আমরা লোকসানে পড়ব’।
চলতি মৌসুমে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে আমের ফলন কম হয়েছে বলে জানান খাগড়াছড়ির বড় আমচাষি হিসেবে পরিচিত সুজন চাকমা। ভাইবোন ছড়া এলাকার দুর্গম পাহাড়ে শত একরের বেশি আমের বাগান রয়েছে তার।
তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক কারণে আমাদের এলাকায় আমের ফলন কম হয়েছে। এবার আমের সাইজ ছোট। এ ছাড়া গাছে যা ছিল তাও এখন অতিরিক্ত গরমে ঝরে যাচ্ছে। শতকরা ৯৫ শতাংশ আম ঝরে গেছে। এ ছাড়া গরমের কারণে এবার আম দ্রæত পেকে যাবে। সাধারণত প্রতি বছর জুনের ১০ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে আম সংগ্রহ শুরু হয়। এবার মে মাসের শেষে দিকে আম সংগ্রহ করে ফেলতে হবে’।
তবে ‘ফ্রুট ড্রপিং’ রোধে আশু কোনো সমাধান দেখছে না কৃষি বিজ্ঞানীরা। খাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, ‘ফ্রুট ড্রপিং রোধে আশু কোনো সমাধান নেই। তারপরও কৃষকদের আমরা একদিন পরপর পানি দেওয়ার জন্য বলেছি। বিকালের দিকে বাগানে পানি স্প্রে করতে হবে’।
এ ছাড়া কৃষকরা যখন বাগান সৃষ্টি করেন তখন খেয়াল রাখতে হবে যাতে বাগানের আশপাশে পানির উৎস থাকে- বলেন এই কৃষিবিদ।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক রাছিরুল আলম জানান, চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কৃষকরা যাতে সচেতন হয় সেজন্য আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে লিফলেট বিতরণ করেছি। নিয়মিত গাছে পানি দেওয়া ছাড়া এখন আর বিকল্প নেই। তবে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে ফ্রুট ড্রপিং কমে আসবে’।