৩০০ কোটি টাকা পেল সিডিএ প্রকল্প বাস্তবায়নে আসবে গতি

114

 

২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ চলছে ধীরলয়ে। এই ধীরগতির মূল কারণ টাকার সংকট। গত এক বছর অর্থ মন্ত্রণালয় এই প্রকল্পের অধীনে কোনো টাকা ছাড় করেনি। করোনা পরিস্থিতিও এর অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে। অর্থবছরের প্রায় শেষ দিকে চলতি জুন মাসে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় মন্ত্রণালয়।
প্রকল্পের কাজ ত্বরান্তিত করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ৫০০ কোটি টাকা চেয়েছিল। অর্থ বছরের শেষদিকে হলেও ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি আরও দ্রুত হবে বলে জানালেন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী রাজিব দাশ।
এ প্রকল্পটিও নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসননির্ভর। সম্প্রতি বর্ষায় নগরীতে ব্যাপক জলাবদ্ধতা হওয়ার পর এ প্রকল্পের সাথে আরও তিনটি জলাবদ্ধতা নিরসন নির্ভর প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্যোগী হয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়। এ ব্যাপারে সম্প্রতি ভার্চুয়াল সভাও হয় সিডিএ কর্তৃপক্ষের সাথে। বর্তমানে প্রকল্পটির ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান প্রকৌশলী রাজিব দাশ।
প্রসঙ্গত, জলাবদ্ধতা নিরসন নির্ভর এ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল একনেকে অনুমোদন পায়। কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর। প্রকল্পের আওতায় জলাবদ্ধতা নিরসনে ৮ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার সড়কসহ বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং ১২টি খালের মুখে রেগুলেটর ও পাম্প হাউস নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সাতটি ¯øুইসগেট নির্মাণ কাজের ৮৫ শতাংশ ও তিনটির ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি দুটির কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে। ইতোমধ্যে ব্যয় হয়েছে ৬৬৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। করোনা পরিস্থিতির কারণে কিছু কাজ ধীর গতিতে হয়েছে, টাকার সমস্যাও ছিল- জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানান, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে এ প্রকল্পসহ চারটি প্রকল্প বাস্তবায়নে সমন্বিত কাজের উপর গুরুত্বারোপ ও কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে গত ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাথে সিডিএ’র ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার ফলে কাজের গতি আরও ত্বরান্বিত হবে। এর মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়ার বিষয়টি প্রকল্প বাস্তবায়নকেশাণিত করবে নি:সন্দেহে।
এদিকে উল্লেখিত প্রকল্পসহ মোট চার প্রকল্প বাস্তবায়নে ১০ হাজার ৮০৩ কোটি ৩৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ের টার্গেট নির্ধারণ করা আছে। চারটি প্রকল্পই চলমান। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে খরচ হয়ে গেছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। তবুও ডুবছে নগর।
চার প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, স¤প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার একটি প্রকল্পটি। এ প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি ৫০ শতাংশ।
জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৪ সালের ২৪ জুন ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ ৪ হাজার টাকায় বারৈইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে একটি নতুন খাল খনন প্রকল্প একনেক অনুমোদন দেয়। অনুমোদনের পর সাত বছর পার হলেও শুরুই হয়নি খাল খনন কাজ। এরই মধ্যে প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে পাঁচগুণ। ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা বেড়েছে বহুগুন। ২০১৪ সালের ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ ৪ হাজার টাকার প্রকল্পটি সাত বছর পর ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে এখন ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ২৫৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা বা জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ শীর্ষক ১ হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকার একটি প্রকল্প ২০১৯ সালের ফেব্রæয়ারিতে একনেকে অনুমোদন পায়। ২০২২ সালের জুনের প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে এখনও কাজ শুরু হয়নি। প্রকল্পের আওতায় ২৩টি খালের মুখে রেগুলেটর স্থাপন ও কর্ণফুলী নদীর তীরে নির্মাণ হবে ১৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বন্যা প্রতিরোধ দেয়াল।