২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ১৯ ফেব্রুয়ারি

14

পূর্বদেশ অনলাইন
আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার (২৫ জানুয়ারি) কমিশন বৈঠক শেষে ভোটের এই তারিখ জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তার আগে মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদ ভবনে স্পিকারের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ ভবনে, দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর তাঁর পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল কার্যভার গ্রহণ করেন। সে মোতাবেক তাঁর দায়িত্বের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল। এদিকে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে পদটি শূন্য হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী নব্বই দিন থেকে ষাট দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে। সংবিধানের এই সকল বিধানের আলোকে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয়েছে ২৪ জানুয়ারি। আর ভোটগ্রহণ করতে হবে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ওই বছর ২৫ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ৫ ফেব্রুয়ারি, মনোনয়নপত্র বাছাই ছিল ৭ ফেব্রুয়ারি। আর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় ছিল ১০ ফেব্রুয়ারি এবং ভোটগ্রহণের সময় রাখা হয়েছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি। সে সময় ২২ দিনের মধ্যে পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তবে সে সময় বর্তমান রাষ্ট্রপতি একক প্রার্থী থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ‘প্রাক্তন’ রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকাকালে ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ থেকে মো. আবদুল হামিদ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। ওই বছর ২০ মার্চ রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান মৃত্যুবরণ করলে মো. আবদুল হামিদ সেদিন থেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২২ এপ্রিল তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০-তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এরপর মো আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয় মেয়াদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ওই বছর ২৪ এপ্রিল ২১-তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। সংবিধান অনুযায়ী, দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ায় তিনি আর এই পদে প্রার্থী হতে পারবেন না। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি-পদের মেয়াদ অবসানের কারণে ওই পদ শূন্য হলে মেয়াদ-সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী নব্বই হইতে ষাট দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ৪৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকবেন, যিনি আইন অনুযায়ী সংসদ-সদস্যরা কর্তৃক নির্বাচিত হইবেন। কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি- পঁয়ত্রিশ বছরের কম বয়স্ক হন; অথবা সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইবার যোগ্য না হন, অথবা কখনও এই সংবিধানের অধীন অভিশংসন দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারিত হয়ে থাকেন। অন্যদিকে ৫০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বৎসরের মেয়াদে তাঁর পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তাঁর উত্তরাধিকারী-কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকবেন। আবার একাদিক্রমে হউক বা না হউক-দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতির পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকবেন না। স্পিকারের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে রাষ্ট্রপতি স্বীয় পদ ত্যাগ করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর কার্যভারকালে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়া যোগ্য হবেন না এবং কোনো সংসদ-সদস্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে রাষ্ট্রপতিরূপে তাঁর কার্যভার গ্রহণের দিনে সংসদে তাঁর আসন শূন্য হবে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ‘নির্বাচনী কর্তা’ হিসেবে এই নির্বাচন পরিচালনা করবেন। এজন্য একটি জাতীয় সংসদ কক্ষে সংসদ সদস্যের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে নির্বাচনী কর্তা সভাপতিত্ব করবেন।সংসদের অধিবেশন চলাকালে নির্বাচনের প্রয়োজন হলে কমিশন ভোটগ্রহণের সাতদিন পূর্বে স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা করে ভোটের সময়সূচি নির্ধারণ করবে। আর সংসদ অধিবেদশ না থাকলে ভোটগ্রহণের দিনে স্পিকারের সঙ্গে অন্যূন্য সাতদিন পূর্বে আলোচনা করে সংসদের বৈঠক সরকারি প্রজ্ঞাপন দ্বারা আহ্বান করবে।রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মনোনয়নপত্রে একজন সংসদ সদস্যের প্রস্তাবক ও একজন সংসদ সদস্যের সমর্থক হিসেবে স্বাক্ষর থাকতে হবে। এছাড়া যিনি মনোনীত হবেন মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সম্মতিসূচক তারও একটি বিবৃতি থাকতে হবে। এই নির্বাচনে ভোটার হবেন সংসদ সদস্যরা। কমিশন একটি ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে। বৈধ একাধিক প্রার্থী থাকলে এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন শেষে একাধিক প্রার্থী থাকলে সংসদের বৈঠকে নির্ধারিত দিনে দুপুর ১২টার পর ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটগ্রহণ যেমন প্রকাশ্যে হবে, তেমনি ভোট গণনাও প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত হবে। সর্বোচ্চ ভোট যদি একাধিক প্রার্থী পেয়ে যান, তবে তাদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনার ভোটের ফলাফল নির্ধারণ করবেন। ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ঘোষণাই চূড়ান্ত।