১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ভিসা স্থগিত করল ভারত

62

বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসা এক মাস স্থগিত করেছে সেদেশের সরকার। আজ শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে এ আদেশ কার্যকর হচ্ছে। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। ফলে এই এক মাস কোনো সীমান্ত দিয়েই বাংলাদেশিরা ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না। ইতিমধ্যে ইস্যু করা ভিসা স্থগিত করা ছাড়াও নতুন করে কোনো ভিসাও ইস্যু করা হবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ বিমিানসহ কয়েকটি সংস্থা ফ্লাইট চলাচলও বন্ধ ঘোষণা করেছে। হঠাৎ করে ভিসা স্থগিত করায় বিপাকে পড়বেন রোগীরা। নুতন রোগী বা চেকআপ রোগী কেউ ভারতে যেতে পারবেন না। তবে দু’দেশের নাগরিকরা নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবেন।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় আজ শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বেনাপোল চেকপোস্টসহ সমস্ত বন্দর দিয়ে ভিসা পাওয়া সকল যাত্রীদের ভারত যাওয়া বন্ধ থাকবে। তবে ১৩ মার্চ বিকেল ৫টা পর্যন্ত যাত্রীরা স্বাভাবিক চলাচল করতে পারবেন। ৫টার পর বন্ধ করে দেয়া হবে ভারতে প্রবেশ। এর পর ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন করে কোনো বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারতে যেতে পারবেন না। তবে বাংলাদেশি যাত্রী যারা ভারতে অবস্থান করছেন তারা ফিরে আসতে পারবেন এবং বাংলাদেশে যে সকল ভারতীয় আছেন তারা নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবেন। তবে কূটনৈতিক, অফিসিয়াল, জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং পেশাগত ও প্রকল্পের কাজে নিয়োজিতদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
জানা যায়, ভ্রমণ, চিকিৎসাসহ নানা কারণে প্রতিদিন অন্তত সাড়ে তিন হাজার থেকে ৪ হাজার মানুষ ভারত যান। এর বেশিরভাগই যান বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে।
চট্টগ্রাম থেকেও প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ লোক ভারতে যান। বাস এবং বিমানযোগেই যান তারা। বাস যাত্রীরা বেনাপোল সীমান্ত দিয়েই কোলকাতা যান। সেখান থেকে কিছু লোক চেন্নাইসহ বিভিন্ন স্থানে যান।
চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার ভিসা সেন্টার থেকে দিনে অন্তত ৩০০ থেকে ৫০০ ভিসা ইস্যু করা হয়। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি, রবিবার থেকে ভ্রমণ বা চিকিৎসা ভিসা ইস্যু বন্ধ হয়ে যাবে।
ভারতীয় হাই কমিশনের ওয়েব সাইটে বলা হয়েছে, ‘কোভিড-১৯ এর বিদ্যমান সংক্রমন বিবেচনায় ভারত সরকার ভারত ভ্রমণের জন্য নির্দেশনা জারি করেছে যে, ১২ মার্চ বা তার আগে ভারতীয় হাই কমিশন, সহকারী হাই কমিশন দ্বারা প্রদত্ত সমস্ত বৈধ ভিসা ১৩ মার্চ সন্ধ্যা ৬টা থেকে স্থগিত থাকবে। ১৩ মার্চ থেকে কোনো নতুন ভিসা দেয়া হবে না’।
জানা যায়, শুক্রবার বিকেল থেকে কোনোধরনের বাস কোলকাতা বা বেনাপোলের উদ্দেশ্যে ছাড়বে না। যাত্রী প্রবেশ করতে না দেয়ার কারণে বাস চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছেন মালিকরা।
শ্যামলী এন আর পরিবহনের মালিক শুভঙ্কর ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার বিকেল ৩টার পর থেকে প্যাসেঞ্জারসহ আর কোনো বাস ভারতের বর্ডার ক্রস করতে পারবে না। যে কারণে গাড়ি বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, এ অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করতে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। শুক্রবার থেকেই ভারতে ফ্লাইট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। এ ছাড়া দুই বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও নভোএয়ারের পক্ষ থেকেও একই ধরনের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে শুক্রবার সন্ধ্যার পর ভারতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আর কোনো ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে না।
ইউএস-বাংলার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার থেকে শুধু ভারতীদের নিয়ে কলকাতা ও চেন্নাই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। ১৫ মার্চ থেকে চেন্নাই রুটের ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হবে। এরপর ১৬ মার্চ থেকে কলকাতা রুটের ফ্লাইটও বন্ধ করা হবে। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইউএস বাংলার ভারতের ফ্লাইট বন্ধ থাকবে।
নভোএয়ারের সিনিয়র ম্যানেজার (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) এ কে এম মাহফুজুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ১৪ মার্চ থেকে নভোএয়ারের ঢাকা-কলকাতা ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হবে। তার আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি ফ্লাইট যাত্রী ছাড়াই কলকাতা যাবে এবং সেখান থেকে ফিরতি যাত্রীদের আনা হবে।
বাংলাদেশিদের প্রবেশে নিশেধাজ্ঞা দেয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বেন রোগীরা। প্রতিদিনই কয়েকশ’ রোগী চট্টগ্রাম থেকে যান। সেখানে কোলকাতা, চেন্নাই, ব্যাঙ্গালোরসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসার জন্য যান। অনেকে চিকিৎসা বা অপারেশন পরবর্তী ফলোআপের জন্য যান। তারাও যেতে পারছেন না। ফলে রোগীরা সমস্যায় পড়ে যাবেন।