১০৭ উপজেলায় ভোট আজ

42

উপজেলায় নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে দেশের ১০৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ রবিবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে একটানা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচন ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসি। ১০৭ উপজেলার ৬টিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে।
চতুর্থ ধাপে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ১২৮ উপজেলায়। এরমধ্যে স্থগিত হয়ে গেছে ৬ উপজেলার ভোট। বাকি ১২২ উপজেলার মধ্যে ১৫টিতে সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ফল নিষ্পত্তি হওয়ায় এসব উপজেলাতেও ভোট হচ্ছে না। ফলে রবিবার ভোট হচ্ছে ১০৭টি উপজেলায়। খবর বার্তা সংস্থার
তবে এই ১০৭ উপজেলার ২৪টিতে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সব মিলিয়ে ভোটের আগেই ৩৯ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নির্বাচিত হওয়া নিশ্চিত হয়েছে। একইভাবে সংরক্ষিতসহ ৪৯ ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্য অনুযায়ী, রবিবার ৮৩ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে। এর অধিকাংশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরা। বিএনপিসহ অধিকাংশ দল উপজেলা নির্বাচন বর্জন করায় ভোটের মাঠে তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। তাই এ ধাপেও ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে সংশয় রয়েছে। আগের তিন ধাপেও ভোটার উপস্থিতি ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
চতুর্থ ধাপের জন্য ১২২টি উপজেলায় ভোটের তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। আদালতের নির্দেশে চারটি ও অবৈধ প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে দুটি উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। তৃতীয় ধাপ থেকে স্থানান্তর করা ৬টি উপজেলা এ ধাপে যোগ হয়েছে। কিন্তু ১৫ উপজেলার সব পদ বিনা ভোটে জয়-পরাজয় নিষ্পত্তি হওয়ায় আজ ভোট হবে ১০৭ উপজেলায়।
বিনা ভোটে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ জয় পেলেও দলটির এমপিদের আচরণবিধি লঙ্ঘন ঠেকাতে কঠোর হয়েছে ইসি। নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করায় ক্ষমতাসীন দলের তিন এমপিকে এলাকা ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছে ইসি। তারা হলেন- ময়মনসিংহ-৯ আসনের আনোয়ারুল আবেদীন খান, যশোর-৪ আসনের রণজিত কুমার রায় ও নোয়াখালী-৪ আসনের মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী।
সহিংসতা রোধে ব্যর্থ হওয়ায় শনিবার পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাম কবীরকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে ইসি। আশুগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) তিন থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই তিন ওসি হলেন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার এম আর শওকত আনোয়ার ইসলাম, বরগুনার আমতলীর আলাউদ্দিন মিলন ও কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার শাহজান কবীর।
ইসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে চতুর্থ ধাপে ৪৮ উপজেলায় ১১১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। রিজার্ভ রাখা হয়েছে ৪৮ প্লাটুন। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে অতিরিক্ত ব্যবস্থা হিসেবে একটি রিজার্ভসহ র‌্যাবের পাঁচটি টিম মোতায়েন করা হয়েছে।
আজ রবিবার যে ১০৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণ করা হবে সেগুলো হচ্ছে পটুয়াখালীর সদর, দশমিনা, গলাচিপা, কলাপাড়া, মির্জাগঞ্জ, দুমকী ও বাউফল। ভোলার দৌলতখান, তজুমদ্দিন ও লালমোহন। বরগুনা সদর, আমতলী, বেতাগী, বামনা ও পাথরঘাটা। পিরোজপুর সদর, ইন্দুরকানী, কাউখালী, ভান্ডারিয়া, নেছারাবাদ ও নাজিরপুর। যশোর সদর, বাঘারপাড়া, ঝিকরগাছা, চৌগাছা, অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর। খুলনার দিঘলিয়া, কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, রূপসা, তেরখাদা, ফুলতলা ও বটিয়াঘাটা। বাগেরহাটের সদর, মোংলা, মোরেলগঞ্জ, চিতলমারী, কচুয়া, রামপাল, ফকিরহাট, মোল্লাহাট ও শরণখোলা। ময়মনসিংহের সদর, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, ফুলপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, ফুলবাড়িয়া, গৌরীপুর, নান্দাইল, মুক্তাগাছা ও ভালুকা। নরসিংদী সদর। মুন্সীগঞ্জে সদর, সিরাজদীখান, লৌহজং, শ্রীনগর, টঙ্গিবাড়ী ও গজারিয়া। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, সোনারগাঁ ও রূপগঞ্জ। ঢাকার ধামরাই, দোহার ও নবাবগঞ্জ। টাঙ্গাইল সদর, ধনবাড়ী, মধুপুর, মির্জাপুর, দেলদুয়ার, নাগরপুর, ঘাটাইল, ভ‚ঞাপুর, কালিহাতী, গোপালপুর, বাসাইল ও সখিপুর। কুমিল্লার তিতাস, চান্দিনা, মুরাদনগর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, মেঘনা ও হোমনা। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী, সুবর্ণচর ও চাটখিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, সরাইল, আখাউড়া, আশুগঞ্জ, নাসিরনগর ও নবীনগর। ফেনীর সদর, ফুলগাজী, সোনাগাজী ও দাগনভ‚ঞা দিনাজপুর সদর। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী। চট্টগ্রামের লোহাগাড়া এবং কক্সবাজারের সদর।
এই ১০৭ উপজেলার মধ্যে পটুয়াখালী সদর, বাগেরহাট সদর, ময়মনসিংহ সদর, মুন্সীগঞ্জ সদর, ফেনী সদর ও কক্সবাজার সদরের সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে। এর মধ্যে ফেনী সদরে শুধু চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে। এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ময়মনসিংহ সদরে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থী।
যে ১৫ উপজেলায় সব পদেই প্রার্থীরা বিনা প্রপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন সেগুলো হচ্ছে ভোলার সদর, মনপুরা ও চরফ্যাসন, যশোরের শার্শা, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, ঢাকার সাভার ও কেরানীগঞ্জ, কুমিল্লার লাকসাম, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ, দেবীদ্বার ও চৌদ্দগ্রাম, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও ফেনীর পরশুরামে সব পদে একজনের বেশি প্রার্থী না থাকায় এসব উপজেলায় রবিবার ভোট হবে না।
উপজেলা নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের ভোটে প্রার্থীর সংখ্যা চেয়ারম্যান পদে ৩৫১, ভাইস চেয়ারম্যান ৫৩৩ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪০৬ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা নয় হাজার ৭৪০টি। ভোটার দুই কোটি ৫৫ লাখ ৪০ হাজার ৭০৪ জন।