সড়কে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের মৃত্যু অরক্ষিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং গেইট

2

রতন কুমার তুরী

সাম্প্রতিক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ নং গেইটে মুলতঃ কর্মস্থল থেকে সামান্য দূরত্বে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের মেধাবি শিক্ষক জনাব ড.আফতাব হোসেন। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এই সহযোগী অধ্যাপকের মৃত্যুতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসজুড়ে এখন চলছে শোকের মাতম। গত শুক্রবার মধ্যরাতের দিকে তিনি নিজে মোটর সাইকেল চালিয়ে শহর থেকে ক্যাম্পাসে ফেরারপথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নং গেইটে পেছন থেকে একটি প্রাইভেটকার পেছন থেকে তাকে ধাক্কা দিলে তিনি দুর্ঘটনায় শিকার হন এবং পরে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। উল্লেখ্য যে একই বিভাগের ড. ইসমতআরা বেগম নিহত শিক্ষকের সহধর্মিণী হন।
প্রকৃতপক্ষে মুরাদপুর থেকে হাটাজারি পর্যন্ত এই সড়কটি খুবই ব্যস্ততমসড়ক কারণ এই রোড দিয়ে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, ফটিকছড়ি, হাটাজারি, ফতেয়াবাদ,রাউজানসহ বেশকিছু উল্লেখযোগ্য স্থানের মানুষ রোজ যাতায়াত করে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ শহরে চাকুরী করার ফলে এদের নিত্যদিনের যাতায়াত এই রোড হয়েই। তাছাড়া দেশের অন্যতম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এই সড়কের পাশে অবস্থান করায় এইরোডে সবসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের আসা যাওয়া লেগেই থাকে। বর্তমান মুরাদপুর থেকে হাটাজারি পর্যন্ত সড়কটি দুই লাইন হওয়ার পর জ্যাম কিছুটা কম হলেও উক্তরোডে যাতায়াতকারী মানুষের সংখ্যা আগের চেয়ে বাড়ার ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নং গেইট থেকে শহরের কিছু গাড়ি আসা যাওয়া করে।
ফলে ওই এলাকাটিতে সবসময় গাড়ি দাঁড়ানো থাকার ফলে বিভিন্ন গাড়ি ওসব দাঁড়ানো থাকা গাড়িকে পাশ কাটিয়ে আসা যাওয়া করতে হয়। এমতাবস্থায় ওই এলাকাটিতে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বলা যায়। গাড়ির কোন পার্কিং এরিয়া না থাকার কারণে ১ নং গেইটে সড়কে দাঁড়ানো গাড়িগুলোই দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়চ্ছে। খুব সম্ভবঃ তিনমুখী রাস্তা হওয়ায় এখানে তিনদিক থেকে গাড়ি চলার সুযোগ থাকার কারণে অনেক চালকই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নং গেইটে আসলে খেই হারিয়ে ফেলে ফলে দুর্ঘটনায় পতিতো হয়। এখানে মুলতঃ দরকার ছিলো বেশ কয়েকটা স্পীড ব্রেকার এবং নিরাপদে সড়ক পারাপারের জন্য জেব্রাক্রসিং কিন্তু দুঃখের বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এসব পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনেক আগে নেয়ার কথা থাকলেও তা তারা নেয়নি যার ফলে এমন একটা নির্মম সড়ক দুর্ঘটনা দেখতে হলো। আমরা প্রত্যাশা করবো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখবেন এবং এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। প্রকৃতপক্ষে মুরাদপুর থেকে হাটহাজারি পর্যন্ত সড়কটি দুই লাইনের হলেও মাঝখানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নং গেইটে কেনো জানি কোনো ডিভাইডার দেয়া হয়নি ফলে এখানে গাড়ি দুইদিক থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটার যথেষ্ট সম্ভাবনা থেকে যায় । ১ নং গেইট থেকে সামান্য দূরে দুই দিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার জন্য ডিভাইডার করে দিলে এই দুর্ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া অনেকটাই সহজ হতো। মুলতঃ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নং গেইটটি বছরের পর বছর অরক্ষিতোই থেকে গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে স্থানীয়দের কোনো সময় সমস্যা দেখা দিলে স্থানীয়রা অনেক সময় এই গেইটটি অবরোধ করে রাখতে দেখা গেছে ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে অনেকবার হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। বলতে গেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নং গেইটটি অনেকটাই আগোছালো যার কারণে বিভিন্ন সময় ছাত্রদের সাথে স্থানীয়দের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়, বাসচালকদের সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের ভাড়া নিয়ে কথাকাটাকাটি এবং দুর্ঘটনা প্রায় লেগেই থাকে এসব বিষয়ে অনেক সময় প্রশাসন ব্যবস্থা নিলেও পরবর্তীতে তা একই রকম থেকে গেছে। মুলতঃ এসব বিষয়ে স্থায়ী সমাধান পেতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আরো কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। ১ নং গেইটে সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উপস্থিত রাখতে হবে। ডিভাইডারসহ স্পীড ব্রেকার এবং জেব্রাক্রসিং দিতে হবে তাতে করে হয়তো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং গেইট সুরক্ষিতো থাকবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নং গেইটে আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু চাইনা। আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নং গেইটের সুরক্ষা চাই। আমরা প্রত্যাশা করবো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবিষয়ে দ্রæত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক