স্মৃতিতে অম্লান ‘আঁরার শামসুল আলম মাস্টার’

22

রশীদ এনাম

মানুষের মৃত্যু হয় কিন্তু স্মৃতির মৃত্যু হয় না। তা ফিরে আসে বারবার মনকে নাড়া দিয়ে যায়, তেমনই একজন সত্যিকারের মাটি ও মানুষের নেতা ছিলেন পটিয়ার শামসুল আলম মাস্টার। তিনি ১৯৫৪ সালে ৫ জুলাই পটিয়া পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম আমিনুল হক ও মাতা আলতাজ খাতুন। শামসুল আলমের পিতা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তিন পুত্র ও চার কন্যার মধ্যে শামসুল আলম দ্বিতীয়। আমিনুল হক ব্যবসায়ী হলেও তাঁর প্রত্যেক ছেলেমেয়েকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। বড়ো ছেলে বদিউল আলম ছিলেন সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (অবসরপ্রাপ্ত) ছোট বেলা থেকে শামসুল আলম বেশ দুরন্ত ও দস্যিপনার মধ্যে দিয়ে বেড়ে ওঠা। আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে ১৯৭২ সালে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি ও ১৯৭৫ সনে পটিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭১ সালে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেন। তাঁর বড়ো ভাই বদিউল আলম জানান, তাঁর ভাই একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেয়ার জন্য কখনও চেষ্টা করেননি।
অধ্যায়নকালীন তাঁর বড়ো ভাই বদিউল আলমের সহযোগিতায় বান্দরবান আলী নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৬-৭৭ সালে তিনি প্রাইমারি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি ১৯৮০সালের দিকে জাসদের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। জাসদের মাধ্যেমে রাজনীতির হাতেখড়ি। তিনি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন এবং সবসময় সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে রাখতেন। এক নামে চিনত পটিয়া প্রেমি শামসুল আলম মাস্টারকে। অসম্ভব সাহসী এই বীর যেখানে অন্যায় দেখতেন সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। কিছুটা খ্যাপাটে ও সাহসি টাইপের হওয়াতে বন্ধুমহলের কাছে পাগলা শামসু নামেও পরিচিত ছিলেন। ১৯৮৪-৮৫ সালের দিকে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। ১৯৮৭ সালের দিকে তিনি পটিয়ায় বিপুল ভোটে পটিয়া ১৪ নং ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। একসময় তাঁর বিচক্ষণতা এবং দেশপ্রেম এবং জনপ্রিয়তায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের খুব কাছের শীর্ষ হয়ে ওঠেন।
তিনি জাতীয় পার্টির সহসভাপতি এবং কেন্দ্রীয় পরিষদের উপদেষ্টা পর্ষদের সদস্য এবং দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির আহŸায়ক ছিলেন। পটিয়া পৌরসভার লাগাতার তিনবার চেয়ারম্যান ছিলেন। পটিয়াবাসী ছিল তাঁর অন্ধভক্ত সবার কাছে তিনি ছিলেন নিঃস্বার্থ একজন দেশপ্রেমিক পটিয়ার প্রকৃত বন্ধু। শামসুল আলমের জনপ্রিয়তা এত বেশি ছিল যে পটিয়ায় ১৯৭১ সালের পর থেকে কত জনপ্রিতিনিধি এলো গেলো কিন্তু শামসুল আলম মাস্টারের মতো জনপ্রিয়তা কেউ লাভ করতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে কি না সন্দেহ আছে। তাঁর সময়ে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং দৃশ্যমান কাজ হয়েছিল পটিয়াকে পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীতকরণ। নিজের অর্থসম্পদ পর্যন্ত দুহাতে বিলিয়েছেন জনস্বার্থে। বিশেষ করে শ্রীমতী খালে বাঁধ, রাস্তাঘাট নির্মাণ, খাল খনন, পটিয়ার প্রত্যেকটি ইউনিয়ন এবং পটিয়া সদরকে সবুজায়ন করেছেন। এমন কোনো রাস্তা নেই যেখানে তিনি নিজ হাতে গাছ লাগাননি।
১৯৯৮-৯৯ সালের কথা একদা পটিয়া কেলিশহরে খিল্লা পাড়ায় শহিদ ছবুরের কবর জিয়ারত করতে গিয়েছিলাম, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম চাচা, টুকু চাচা ও আহমেদ ছগির মামা ও গাজী সেলিম ভাইসহ। কবরের পারে গিয়ে হঠাৎ লক্ষ্য করলাম শামসুল আলম মাস্টার অঝোরে কাঁদছেন। একাত্তরের বীর শহিদের জন্য এই অশ্রæ বিসর্জন। জিয়ারত শেষে তিনি সবাইকে ভট্টাচার্য হাটে গৌরাঙ্গ বাবুর মিষ্টির দোকানের মিষ্টি খাওয়ালেন। পরদিন দৈনিক চট্টগ্রাম মঞ্চের পাতায় শহিদ ছবুরের সমাধিতে একদিন শিরোনামে আমার একটা লেখা ছাপা হলো। পত্রিকার কলামটি পড়ে শামসুল আলম মাস্টার পড়ে মুগ্ধ হলেন। টুকু চাচাকে দিয়ে খবর পাঠালেন এনাম যেন দেখা করেন। পরদিন টুকু চাচাসহ রিকশাযোগে বিসিক শিল্পের পূর্বপাশে নার্সারি ঘেরা একটা বাংলো বাড়ি মতো সেখানে গেলাম। পশুপাখি, গাছপালা ভরতি যেন মিনি চিড়িয়াখানা। শামসুল আলম মাস্টার যে প্রকৃতিপ্রেমী তা দেখে বুঝতে পারলাম। টিয়া, ময়না, খরগোশ বানর পুষতেন। একজন রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধি যে এত শৌখিন হতে পারেন তাঁকে দেখে বুঝা যেত না। শামসু চাচাকে সালাম দিলাম, তিনি বললেন,“ রশীদ এনাম বাবা তুমি কেমন আছ ? তোমার লেখাটা পড়ে আমি আবারও কেঁদেছি,এত আবেগ আর দরদ দিয়ে লিখেছ মজা পেয়েছি। সে জন্য তোমাকে ডাকালাম। পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে ৫০০ টাকার নোট সাধলেন, বললাম চাচা আমি শখের বসে লিখি। টাকা নিব না আপনি দোয়া করবেন। তিনি খুশি হয়ে বললেন, তুমি অনেক বড়ো লেখক হও। তিনি বললেন, তোমাকে একটা উপহার দিতে চাই। তাঁর কর্মচারীকে বললেন, ভাতিজা রশীদকে একটা ক্রিসমাস ট্রি দাও। ক্রিস মাস ট্রি আমার খুব পছন্দ, লেখালেখির শুরুর দিকে গাছ উপহার পাওয়া এটি ছিল আমার জন্য অনেকটা পরম পাওয়া। বাড়িতে এসে গাছটি উঠোনে লাগিয়েদিলাম। গাছটি প্রায় ১৫ বছর বেঁচে ছিল। বাড়ি নির্মাণ করতে গিয়ে একসময় গাছটি মাটি চাপা পড়ে মারা যায়। আহা শামসুল আলম মাস্টারের স্মৃতি প্রিয় ক্রিসমাস ট্রি-টি পটোল তুলল! গাছের সবুজ পাতাগুলো লালচে হয়ে গেল। মৃত গাছটির শরীর স্পর্শ করলাম, পাতাগুলো শুকিয়ে অনেকটা ঝরে পড়ার মতো। নীরবে অশ্রæ বিসর্জন দিলাম গাছটির জন্য যেন আমার খুব কাছে কেউ চলে গেল। কথাসাহিত্যিক আহমদ ছফা বলতেন, ‘সবুজ উদ্ভিদের যে একটা আতœা রয়েছে তার স্পর্শ আমার নিজের আতœায় এসে লাগে। মুখে কোন বাক্য আসতে চায়না। এইখানে ঈম্বরের এই প্রাচুর্যের পাশে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে করে’। সত্যি আমার কাছে মনে হয় বৃক্ষের মাঝে মানুষের জীবন ও আত্মার যেন এক গভীর সম্পর্ক। শামসুল আলম মাস্টার ছিলেন তেমনি এক বৃক্ষপ্রেমি যার লাগানো গাছগুলো আজ তাঁর কথা বলছে, মানুষ তুমি সবুজ হও বৃক্ষের মতো ।
গত ১৩ জুলাই ২০২২ পটিয়া গণমানুষের বন্ধু শামসুল আলম মাস্টার বর্ণাঢ্য জীবনের ইতি টেনে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। পটিয়ার আকাশে মেঘের ঘনঘটা তাঁর নিজের লাগানো তরু পল্লবগুলো যেন কাঁদছে। সর্বস্তরের মানুষের পাশাপাশি প্রত্যেকটি দলের নেতাকর্মীরা ছুটে এসেছেন তাঁকে একপলক দেখার জন্য। পটিয়ার বরপুত্র শামসুল আলম মাস্টারকে চিরবিদায় দিতে। আহা জীবনের প্রতি তাঁর কোনো মায়া ছিল না। কখনও মানবসেবক, নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমিক কখনো-বা পটিয়া বন্ধু, কখনো- সাহসী বীরপুরুষ, বর্ষীয়ান রাজনিতীবিদ, ক্রিড়া সংগঠক, কখনো-বা মানুষের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। নিষ্পেষিত মানুষের জন্য তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভালোবাসার হাত বাড়িয়েছেন। তাঁর একটা রঙিন স্বপ্ন ছিল পটিয়াকে জেলা করার। শামসুল আলমের বড়ো ভাই বদিউল আলম জানান, ‘আমার ভাইয়ের খুব ইচ্ছা ছিল পটিয়াকে জেলার করার। দেখে যেতে চেয়েছিলেন, পটিয়াকে একদিন জেলা করা হবে। কিন্তু হলো না অসময়ে চলে গেলেন।’
নিজের শরীরের প্রতি জীবনের প্রতি মায়া ছিল না। নিজেকে খুব অবহেলা করতেন। হাসপাতালে যেতে চাইতেন না। বড়ো ছেলে মাইনুদ্দিন বলেন, “বাবার যখন খারাপ লাগছিল বাবাকে আমি হাসপাতালে নিয়ে যাই। যখন গাড়ি থেকে ধরে নামাচ্ছি তিনি বললেন, আমার হাত ধরিও না, হাত ছেড়ে দাও। আমার কোনো অসুখ নেই বাবা। সিএসসিআরের ডাক্তার যখন মাইনুদ্দিনকে এক পাশে ডেকে নিয়ে বললেন, তার বাবার অবস্থা ভালো না। তিনি ডাক্তারকে ধমক দিয়ে বললেন, ডাক্তার সাহেব আমাকে বলেন, আমার সন্তানকে কেন বলছেন? দেখছেন না আমার কোনো অসুখ নেই। হয়ত তাঁর জানা হয়েগেছে যে কোন জীবন প্রদীপ শিখা নিভে যাবে। বাবা ছিলেন আমাদের পরিবারের বটবৃক্ষ, বাবার ছায়া আর কখনো পাব না, বাবা বলে আর কখনো ডাকতে পারব না ভাবতে কষ্ট হয়। বাসদ নেতা স.ম. ইউনুচ জানান, ‘শামসু ভাইয়ের বড় গুণ ছিল তিনি প্রচÐ মা ভক্তি ছিলেন, চেয়ারম্যান থাকাকালীন দেখেছি কেউ যদি পারিবারিক কলহ নিয়ে তাঁর অফিসে বিচার নিয়ে আসতেন, তিনি সবার আগে দেখতেন কোন সন্তান তাঁর বাবা মা বা মুরুব্বীদেরকে অসম্মান করেছেন কিনা। যদি কেউ অপরাধ করে তাহলে কথা নেই তাঁকে ধমক দিয়ে শাসন করে সাবধান করে দিতেন। পটিয়ায় যাত্রিকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান থাকাকালীন তিনি পটিয়ার শিক্ষার্থীদের বাস ভাড়া কমানোর এবং যাত্রী হয়রানী বন্ধের জন্য ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলেন যা সত্যি ভুলার নয়।’ শামসুল আলম মাস্টারের ভাগিনা ঠিকাদার জাহাঙ্গির আলম জানান, ১৯৯২ সালে যখন ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা শুরু হয়। তখন ভারতে দাঙ্গা শুরু হলো। মামা তাঁর কর্মীদের নির্দেশ দিলেন, সবাই যের রাতে হিন্দুদের মন্দির পাহারা দেন পটিয়ায় যেন কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা না হয়। মামা ছিলেন একজন অসাম্প্রদায়িক জনপ্রতিনিধি। তিনি সবার ভালোবাসা পেয়েছেন। সবসময় বলতেন আমি আওয়ামি লীগ এবং বিএনপি বুঝি না আমি বুঝি বাংলাদেশে দুটি দল একটি স্বাধীনতার পক্ষে আরেকটি স্বাধীনতার বিপক্ষে। আমি সবসময় স্বাধিনতার পক্ষের দলকে সমর্থন করি কেন না এই দেশটি পেয়েছি ৩০ লক্ষ শহীদের আত্ম ত্যাগের বিনিময়ে সবার আগে আমার কাছে দেশ বড়।
শামসুল আলম মাস্টারের ভাতিজি সহকারী শিক্ষক কামরুন নাহার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘১৯৯১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ১ম বিভাগ পেয়ে চাচাকে সালাম করে মিষ্টি খাওয়াতে গেলাম। বাবার চাইতেও চাচা বেশি খুশি হয়েছিলেন। এত আনন্দ পেয়েছিলেন, আমাকে মা বলে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন, হাতের মুঠোয় ৫০০ টাকার নোট দিয়ে বললেন, আরও বেশি করে মা লেখাপড়া করবি, তোকে অনেক বড়ো হতে হবে। চোখ মুছতে মুছতে তিনি বললেন, আমাদের সবার প্রিয় চাচা এখন অতীত, কিন্তু সেই স্মৃতি আমার চোখের সামনে জলছবির মতো আজও ভেসে ওঠে, চাচা যে নেই বিশ^াস হচ্ছে না’।
জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি কখনও নিজেকে জাহির করেননি। খুব সাদাসিদে জীবযাপন করতেন। ভালোাসা মানে নাকি নার্সিং। মানুষকে কিভাবে ভালোবাসতে হয় কিভাবে নার্সিং করতে হয় প্রকৃতিগত ভাবে তিনি বুঝতেন মানুষের হৃদয়ে অলিতে গলিতে ছিল তাঁর বসবাস। প্রকৃতভাবে রাজনীতি করেছেন তবে কখনো দলদাসগিরি করেননি। পকেট রাজনীতি করেননি। পটিয়ায় কোথাও তাঁর নিজের নামের কোনো নেমপ্লেট পর্যন্ত ব্যবহার করেননি। নিজের জন্য নিজের নামের জন্য কিছুই করেননি। পটিয়া পৌরসভার মেয়র থাকাকালীন পৌরসভায় অনেক উন্নয়মুলক কাজ করেছেন কিন্তু কোথাও নিজের নেমপ্লেট বসান নি তাতে কী ? পটিয়াবাসী তাঁদের প্রিয় নেতার নেম প্লেট হৃদয়ে গেঁথে রেখেছেন স্বর্ণাক্ষরে। যা কখনো মুছবে না। যে জীবন ফড়িংয়ের দোয়েলের মানুষের সাথে তায় হয় নাকো দেখা- সত্যিকারের দেশপ্রেমিকরা কখনো মরে না তাঁরা অমর হয়ে বেঁচে থাকেন মানুষের হৃদয়ে। প্রিয় শামসু চাচা আমাকে ক্ষমা করবেন আপনার দেওয়া ক্রিসমাস ট্রি-টা আমি বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি। ভীতুরা মরার আগে নাকি হাজারবার মরে আর সাহসীরা একবারই মরে। আমার দেখা আপনি ছিলেন, পটিয়ার সত্যিকারের বীরপুরুষ আপনি ওপারে ভালো থাকুন। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন। জান্নাতের বাগানের ছায়া বৃক্ষ করে রাখুক- আমিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক