স্বনির্ভরতার হাতছানি চসিকের দুয়ারে

76

ওয়াসিম আহমেদ

অর্থসংকটে জর্জরিত এক সময়কার স্বনির্ভর হিসেবে সুনাম অর্জনকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। নিজেদের আয় দিয়ে কর্মীদের বেতন-ভাতা দিতে হিমশিম খাচ্ছে সংস্থাটি। তাই সরকারি সহায়তায় প্রকল্প ভিত্তিক উন্নয়ন কর্মকান্ডই একমাত্র ভরসা। বিভিন্ন সময়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী স্বনির্ভর হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। এবার সে পথেই হাঁটছে চসিক। করোনা মহামারিতে ভেঙে পড়া জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো ও সেবার মানোন্নয়নে প্রায় ২৬৩ কোটি ৬ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ পাচ্ছে। এ অর্থ দিয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্পটে ১০টি কিচেন মার্কেট, টুলস মার্কেট, বিদ্যমান দুইটি মার্কেটের সম্প্রসারণ, কমার্সিয়াল স্পেস, ডিজিটাল ইনকিউবেশন সেন্টার, টাইগারপাস পাহাড় সংরক্ষণ ও সৌন্দয্যবর্ধন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে বিপুল পরিমাণ এককালীন রাজস্ব ও মাসিক ভাড়া পাবে সিটি করপোরেশন। এমন সুযোগ ও পরিকল্পনা চসিকের দুয়ারে স্বনির্ভরতার হাতছানি বলে সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের সহায়তাপুষ্ট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে বাস্তবায়নাধীন ‘লোকাল গর্ভনমেন্ট কোভিড-১৯ রেসপন্স এ্যান্ড রিকভারী প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে এ অর্থ পাবে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশমতে ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাবনা তৈরি করছে চসিক।
এ বিষয়ে সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক পূর্বদেশকে বলেন,‘করোনা রিকভারি ফান্ডটি আনতে আমি নিজে বিশ্বব্যাংকে যোগাযোগ করেছি। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হলে স্বনির্ভর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর থেকে সিটি করপোরেশনকে ওভাবে পরিচালনার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
মেয়র আরও বলেন, ‘নাগরিক জীবনে স্বাস্থ্যসম্মত সুস্থ জীবনধারা পরিচালনা করতে কিচেন মার্কেটের কোনো বিকল্প নেই। রাস্তাঘাটে বাজারের কারণে সড়ক ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যগত নানা জটিলতা তৈরি হয়। তাই আমরা ১০টি কিচেন মার্কেট করার উদ্যোগ নিয়েছি। এতে রাজস্ব ও নাগরিক সেবা দুটোই ভালোভাবে হবে। এ ছাড়া বিদ্যমান হেলথ সেন্টারগুলোর মানোন্নয়ন, মাতৃসদন সেন্টার নির্মাণ, স্বাস্থ্যসচেতনতা তৈরিতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে প্রকল্পটি। শিশুদের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় পাশেই কিডস জোন, স্যানিটেশন ও গণশৌচাগারকেও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ।’
চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২৬ নং ওয়ার্ড অফিস ভবন কাম কিচেন মার্কেট ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, পাহাড়তলী বাজার কিচেন মার্কেট, ৫নং ওয়ার্ডে কাজির হাট কিচেন মার্কেট , ২৪নং ওয়ার্ডে বেপারীপাড়া মোড়ে কিচেন মার্কেট, ৩৭ নং ওয়ার্ডে কিচেন মার্কেট, ৩৩নং ওয়ার্ড ফিরিঙ্গিবাজার কিচেন মার্কেট, ৭নং ওয়ার্ডে বিবিরহাট টুলস মার্কেট, বিরিহাট কিচেন মার্কেট, বহদ্দারহাট ও দেওয়ানহাট কিচেন মার্কেটের সম্প্রসারণ, ৩৪নং পাথরঘাটায় ফিস মার্কেট, নিমতলা কিচেন মার্কেট, ৯ নং ওয়ার্ডে ফিরোজশাহ কিচেন মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এ ছাড়া পতেঙ্গা সি বিচে গণশৌচাগার, ১৩নং ওয়ার্ডে সাদ্দার বাহাদ্দার নগর রোড লেন ও বাইলেন সড়কের ড্রেন উন্নয়ন, ১৫নং ওয়ার্ডের সার্সন রোডের ফুটপাত, ২১নং ওয়ার্ডের নুর আহমদ সড়কের দুই পাশের ফুটপাত, মোমিন রোড ও জামাল খান এলাকার ফুটপাত, ২২নং ওয়ার্ডের জুবলি রোডের ফুটপাত, এনায়েত বাজার মহিলা কলেজ রোড, পাঠানটুলি রোড, শেখ মুজিব রোড, ড. এনামুল হক রোড, কবি নজরুল ইসলাম রোড, জাকির হোসাইন রোড ছাড়াও বেশ কয়েকটি সড়কের ফুটপাত ও ড্রেন উন্নয়ন করা হবে প্রকল্পটির অধীনে।
প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবনার খসড়া পর্যালোচনা করে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের নাগরিক স্বাস্থ্য সেবা খাতেও ব্যাপক পরিবর্তন আসবে প্রকল্পটির মাধ্যমে। ১২নং সরাইপাড়া ওয়ার্ডে মেটারনিটি হেলথ কেয়ার সেন্টার নির্মাণ ছাড়াও ১৯টি আরবান হেলথ সেন্টারের সংস্কার ও মানোয়ন্ননে পরিকল্পনার ছক আঁকা হয়েছে প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রস্তাবনায়। নগরীর সৌন্দর্যবর্ধন ও বিনোদন সুবিধা বৃদ্ধির আওতায় ১নং ওয়ার্ডস্থ ঠান্ডাছড়ি গ্রিন ইকোপার্ক ও টাইগারপাস হিলের সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যবর্ধন অন্যতম। এ ছাড়া ২৫নং রামপুর ওয়ার্ডের এইচ ব্লক মাঠে ও বড় পুকুর পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ, কিডস প্লে জোন ও সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক। তিনি পূর্বদেশকে জানান, ‘মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পের ধরন ও ক্যাটাগরি ঠিক করে দিয়েছে। সে হিসেবে আমরা প্রকল্প প্রস্তুত করছি। খুব শীঘ্রই প্রকল্পের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে।’
তিনি আরও জানান, জীবন সুরক্ষায় ড্রেন নির্মাণ, স্ল্যাব বসানো, স্যানিটেশন, গণশৌচাগার, নগরীর বিভিন্ন স্পটে হাত ধৌত করার সুবিধা তৈরি, ওয়াকওয়ে, বাই সাইকেল লেন, ডিজিটাল ইনকিউবেশন সেন্টার, কার পার্কিং, সবুজ এরিয়া তৈরি, চসিকের অধীনস্থ স্বাস্থসেবা, শিশুদের সুস্থ বিনোদন ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় কিডস জোন ও বিভিন্ন সুবিধাদি তৈরি করা হবে। বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন ও মাঠের উন্নয়নও অর্ন্তভুক্তি রয়েছে বলে পূর্বদেশকে জানান রফিকুল ইসলাম মানিক।