স্কুল পড়ুয়া ছেলের এনআইডি’র জন্য যা করলেন বাবা-মা

6

রামু প্রতিনিধি

রামুতে বাবা-মায়ের বিয়ের ২ বছর আগের জন্ম তারিখ উল্লেখ করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির অভিযোগ উঠেছে দশম শ্রেণির এক ছাত্রের বিরুদ্ধে। এ কাজে ছাত্রটি প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে বলেও জানা গেছে।
অভিযুক্ত ছাত্র আবদুর রহমান রামু উপজেলার কাউয়ার খোপ ইউনিয়নের উখিয়ার ঘোনা টিলাপাড়া এলাকার নুর কাদের ও মনোয়ারা বেগম প্রকাশ মনিরা খাতুনের ছেলে। মূলত ভুয়া জন্মসনদ নিয়ে সে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) করার সুযোগ পেয়েছে।
সূত্র জানায়, আবদুর রহমান উখিয়ার ঘোনা সাইমুম সরওয়ার কমল উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। এ বিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে সে জেএসসি পাস করে। জেএসসি পরীক্ষার মার্কশীট ও সনদপত্রে তার জন্ম তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১ মে ২০০৫ ইং। তার বাবা-মায়ের বিয়েও হয় ২০০২ সালের ১ মার্চ। কিন্তু বিয়ের আরো দুইবছর আগের জন্মতারিখ উল্লেখ করে সে গত ২৩ নভেম্বর ২০২১ইং তারিখে জন্ম নিবন্ধন সৃজন করে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ- সদ্য বিদায়ী কাউয়ার খোপ ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও চৌকিদার এর যোগসাজশে সে ভুয়া জন্মতারিখ উল্লেখ করে জন্ম নিবন্ধন করতে সক্ষম হয়েছে। জন্ম নিবন্ধন পাওয়ার একমাসের মধ্যে সে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করেছে। এ জাতীয় পরিচয়পত্রে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছেন ৪র্থ শ্রেণি পাস। অথচ সে দুইবছর পূর্বে জেএসসি পাস করে এবং বতর্মানে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত রয়েছে। নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন কার্ডেও তার জন্ম তারিখ উল্লেখ করা হয় ১ মে ২০০৫ ইং।
এ ব্যাপারে রামু উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়- জন্ম নিবন্ধনের ভিত্তিতে ওই ছাত্রের এনআইডি সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া এনআইডি করার সময় তথ্য ফরমে ওই ছাত্র শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখিয়েছে ৪র্থ শ্রেণি। এ কারণে তার সার্টিফিকেট দেখার সুযোগ ছিলোনা। প্রতারণার মাধ্যম এনআইডি সৃজনের জন্য সে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি গোপন রাখে।
কাউয়ার খোপ ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম জানান- অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে শিশু শিক্ষার্থী আবদুর রহমানের জন্ম নিবন্ধন ও এনআইডি করা হয়েছে। এটা দুঃখজনক। ইউনিয়ন পরিষদ ও নির্বাচন অফিসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি এ অনিয়মে জড়িত।
তিনি আরো জানান, আবদুর রহমানের বয়স এখনো ১৬ বছর। সে ইতিপূর্বে বাল্যবিয়ের চেষ্টা করে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমার প্রচেষ্টায় তার বাল্যবিয়ে আটকে যায়। এখন তার পিতাসহ প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তাকে মিথ্যা জন্ম নিবন্ধন ও এনআইডি পেতে সহযোগিতা করেছে। অথচ আবদুর রহমানে জেএসসি সনদ এবং এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড আমরা দেখেছি। তাতে তার জন্মতারিখ ২০০৫ সালের ১ মে। এমনকি তার এনআইডিতে জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২০০০ সালের ২৬ জানুয়ারি। ওই সময় তার বাবা-মায়ের বিয়েও হয়নি। বিয়ে হয়েছে ২০০২ সালের ১ মার্চে। এমন অভিনব প্রতারণার মাধ্যম এনআইডি কার্ড করার ঘটনা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কর্মকাÐকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অবিলম্বে এ এনআইডি ও জন্মনিবন্ধন বাতিল করে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আবদুর রহমানের পিতা নুর কাদের জানান- তাদের বিয়ে স্ট্যাম্পমূলে আরো আগে হয়েছিলো। এমনকি ছেলে প্রথমে মাদ্রাসায় ও পরে বয়স কমিয়ে সাইমুম সরওয়ার কমল উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। বিদ্যালয়ের জেএসসি সনদ ও এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ডের জন্মতারিখ সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।
ছেলের পিতার এমন বক্তব্যে বিষয়ে এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, কাবিনের মাধ্যমেই তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। আগে বিয়ে হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এছাড়া আবদুর রহমান কোন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেনি। প্রতারণার বিষয় ধামাচাপা দিতে তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উখিয়ার ঘোনা সাইমুম সরওয়ার কমল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান জানান- বিদ্যালয়ের জেএসসি সনদপত্র এবং এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ডে আবদুর রহমানের জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২০০৫ সালের ১ মে।
রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা জানিয়েছেন-বসয় কম হওয়ার পরও জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি কার্ড করার বিষয়টি নিয়ে তিনি অবগত আছেন। নির্বাচন অফিসের সাথে এবিষয়টি নিয়ে আলাপ করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। আইন অনুযায়ী তার জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধনও বাতিল করা হবে বলেও জানান তিনি।