সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে আশ্রয় নেন দিনে ৮ নারী কর্মী

28

সৌদি আরব থেকে প্রায় নিয়মিতভাবেই দেশে ফিরছেন নারী কর্মীরা। দেশটিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রতিদিন গড়ে ৮ জন নারী কর্মী আশ্রয় নেন। এরপর দেশে ফিরে তারা অভিযোগ করেন, নির্যাতনের কিংবা সেখানে কাজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যার কথা বলা হলেও এর সমাধান হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অভিবাসন-সংশ্লিষ্টরা। আর দূতাবাস বলছে, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে না আসায় এ রকম সমস্যা হচ্ছে বেশি। এদিকে, মন্ত্রণালয় স্বীকারও করেছে যৌননির্যাতনসহ ১১ কারণে অনেক নারী কর্মী দেশে ফিরে আসছেন।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের দেওয়া তথ্য মতে, বিভিন্ন দেশ থেকে এই বছরের প্রথম ৬ মাসে ট্রাভেল পারমিট নিয়ে দেশে ফিরেছেন ২০ হাজার ৯২৩ বাংলাদেশি কর্মী। এর মধ্যে পুরুষ কর্মী ১৮ হাজার ৮৩৩ এবং নারী কর্মী ২ হাজার ৯০ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফিরে সৌদি আরব থেকে। গত ৯ মাসে সৌদি আরব থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে
দেশে ফিরেছেন ৮৫০ নারী কর্মী। ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরে তাদের জরুরি সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রোগ্রামের কর্মকর্তারা। তবে, এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। ফিরে আসা এই নারী কর্মীদের মধ্যে রয়েছেন মানসিক ভারসাম্যহীন কর্মী। তাদের সংখ্যা গত দেড় বছরে ৪২। সৌদি আরব থেকে গত বছর ফেরত আসা নারী কর্মীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৬৫ জন। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে সৌদি আরব থেকে নারী কর্মীদের ফিরে আসার কারণসহ একটি প্রতিবেদন তুলে ধরে মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয় যৌন নিপীড়নসহ ১১টি কারণে নারী কর্মীরা দেশে ফেরত চলে আসেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সৌদি আরব যাওয়ার ৬ মাসের মধ্যে দেশে ফিরে আসার হার বেশি। গত ২৬ আগস্ট সৌদি আরব থেকে ফিরে আসা ১১০ নারী কর্মীর মধ্যে ৩৪ জনই ৬ মাসের মধ্যে দেশে ফিরে এসেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে দেশে ফিরতে চাইলে নারী কর্মীদের ৩টি উপায়ের যে-কোনও একটি অবলম্বন করতে হয়। এক. দূতাবাসের সহায়তা, দুই. কফিলের সহায়তা এবং তিন. নিজ উদ্যোগে পুলিশের কাছে ধরা দিয়ে ডেপুটেশন ক্যাম্পের মাধ্যমে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রত্যেকদিন গড়ে ৮ জন নারী কর্মী নিয়োগকর্তার বাসা কিংবা রিক্রুটিং এজেন্সির অফিস থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেন। রিয়াদের ফিমেল ডিপোর্টেশন সেন্টার পরিপূর্ণ থাকায় ওই চাপ এসে দূতাবাসের সেফ হোমে পড়ে। গত ৪ আগস্ট পর্যন্ত আশ্রয় নেওয়া নারী কর্মীর সংখ্যা ছিল ২৯১ জন।
দূতাবাস-সূত্রে জানা যায়, এই মাসের ১৮ তারিখ সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে দেশটি শ্রম মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মিনিস্টার ড. আব্দুল্লাহ বিন নাসের আবু থুনিয়ানের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নারী কর্মীদের দেশে ফিরে যেতে বিলম্বের কথাও ইমরান আহমেদ তুলে ধরেন। এ সময় পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না নিয়ে সে দেশে নারী কর্মীরা যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন দেশটির ডেপুটি মিনিস্টার।
এ সময় নারী কর্মীদের যথাযথ নিরাপত্তা ও প্রাপ্য অধিকারের বিষয়টি তুলে ধরে ইমরান আহমেদ। জবাবে সৌদি ডেপুটি মিনিস্টার বলেন, ‘কোনও নেতিবাচক ঘটনার অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নারী কর্মীদের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হবে। ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের বেতন পরিশোধ করা হবে। ২০১৯ সালের শেষ নাগাদই মোসানেদ সিস্টেম আরও আপগ্রেড করা হবে। আর কাজ ছেড়ে দেওয়া নারী কর্মীদের দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানোরও আশ্বাস দেন দেশটির ডেপুটি মিনিস্টার।

এক প্রশ্নের জবাবে সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বলেন, আমাদের নারী কর্মীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো প্রশিক্ষণের অভাব। তারা শহরে কোনোদিন কাজ করেননি, কিন্তু দালালরা গ্রাম থেকে ধরে নিয়ে পাঠিয়ে দেয় এখানে। এতে নারী কর্মীরা বেশি সমস্যায় পড়েন। তবে, আমাদের মন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রশিক্ষণের বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদারকি করবেন। তাতে একটা ভালো অবস্থানে আমরা যেতে পারবো।
নারী কর্মীদের ফিরে আসার কারণ চিহ্নিত হওয়া সাধুবাদ জানিয়েছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, আমরা গত দুই বছর ধরে এই সমস্যা সমাধানের জন্য বলে আসছি। কিন্তু সমস্যার কোনও সমাধান করা হয়নি। এখন সংসদীয় কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার মাধ্যমে সংকট শনাক্তির পথে একধাপ এগিয়ে যাওয়া হলো। এখন এসব সমস্যার সমাধান কীভাবে করবো, সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, সৌদি সরকার তো আমাদের অনেক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। আসলেই সেগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা, সেটি দেখতে হবে। এখন সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে। আমার মনে হয়েছে, আন্তরিক হলে সমস্যার সমধান করা সম্ভব। সেটা এখনই জরুরি বলেও তিনি মনে করেন।