সূর্যমুখীর রঙে রঙিন আনোয়ারা

26

খালেদ মনছুর, আনোয়ারা

এক সময় গ্রামের বড়লোকদের বাড়ির আঙ্গিনায় অথবা ছাদে টপে শোভা পেত সূর্যমুখী ফুল। বাড়ির সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য সূর্যমুখী ফুলের চারা রোপণ করা হতো। এখন আর সেই দিন নেই। সূর্যমুখী ফুল এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। ভোজ্যতেলের মধ্যে এখন সূর্যমুখী তেল ভোক্তাদের পছন্দের শীর্ষে। বাজারে সূর্যমুখী ফুলের বীজের চাহিদাও ব্যাপক। চাহিদার প্রেক্ষিতে এখন আনোয়ারার সৌখিন কৃষকেরাও সূর্যমুখী ফুল চাষের দিকে ঝুঁকছে। এক্ষেত্রে কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ এবং সহযোগিতা দিয়ে উদ্বুদ্ধ করছে উপজেলা কৃষি অফিস। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলার বৈরাগ, বারশত, ডুমুরিয়া, সরেঙ্গা, গহিরা, ঝিউরি, বরুমচড়া এলাকার সাড়ে ৩ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুল চাষ করা হয়েছে। উপজেলাজুড়ে সূর্যমুখী চাষে যুক্ত ২০ কৃষকের মাঝে বীজ, সার বিতরণ করা হয়েছে এবং প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে ১২ জন কৃষককে। সরেজমিনে এসব সূর্যমুখী ফুলের ক্ষেত পরিদর্শন করে দেখা যায়, অনেকেই আমন ধান ঘরে তুলে সেই জমিতেই সূর্যমুখীর চাষ করেছে। আবার অনেকেই নতুন জমিতে এই ফসলের চাষ করেছে। প্রায় সব সূর্যমুখী ক্ষেতেই ফুলগুলো বড় হয়েছে। আর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ফুল থেকে বীজ সংগ্রহ করা হবে। এদিকে সূর্যমুখীর রূপে আকৃষ্ট হয়ে ফুলের সৌন্দর্য দেখতে ও ছবি তুলতে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসছেন দর্শণার্থীরা। দর্শণার্থীদের পদচারণায় ফসলের সামান্য ক্ষতি হলেও তাদের ছবি তুলতে বাঁধা দিচ্ছেন না কৃষকেরা। উপজেলার রায়পুর গহিরা এলাকার কৃষক মো. মুজিবুর রহমান বলেন, আমি প্রথমবারের মতো ২৮ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। ফসল ভালো হয়েছে। সবাই এখানে ছবি তুলতে আসছে দেখে আমার ভীষণ ভালো লাগে। এই পর্যন্ত আমার ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। আরো কিছু খরচ আছে। আশা করি খরচ পুষিয়ে লাভবান হবো। চাতরী ইউনিয়নেন সিংহরা গ্রামের কৃষক মো. জমির উদ্দিন জানান, আমি ৩৩ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। এক্ষেত্রে কৃষি অফিস থেকে সার এবং বীজ পেয়েছি। কৃষি কর্মকর্তারা নানাভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। এই পর্যন্ত প্রায় ১৮ হাজার টাকা মতো খরচ হয়েছে। ফসলও ভালো হয়েছে; আশা করি লাভবান হবো।
শাহরিয়ার নামের এক দর্শণার্থী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সূর্যমুখী ফুলের ছবি দেখে খবর নিয়ে আমিও সূর্যমুখী বাগান দেখতে এলাম। সূর্যমুখীর এই সৌন্দর্য দেখে যেকারো মন ভালো হয়ে যাবে। এখানকার কৃষকেরাও খুবই আন্তরিক। তারা ছবি তুলতে কোনো ধরনের বাঁধা দিচ্ছেন না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমজান আলী জানান, কৃষকদের সরকারি প্রণোদনায় সূর্যমুখী বীজ ও সার এবং নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর প্রকল্পের আওতায় সার, বীজ, বালাইনাশকসহ অন্যান্য উপকরণ সহায়ক হিসেবে দেয়া হয়েছে। দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর তেলের নিশ্চয়তায় এই ফসলের চাষ করা হয়েছে। সূর্যমুখী ফুল থেকে উৎপাদিত তেলে ৪০ ভাগ লিনোলিক এসিড থাকে যা হার্টের জন্য অত্যন্ত ভালো। এছাড়া এতে কোলেস্টেরলের পরিমাণ সয়াবিন থেকে কম। এ ফুল থেকে তেল উৎপাদন করতে পারলে দেশের মানুষের ভোজ্য তেলের যে চাহিদা তা এই সূর্যমুখী চাষের মাধ্যমে পরিবর্তন করা সম্ভব এবং মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত তেল খেতে পারবে।