‘সুদখোর’ খোকনের লালসার শিকার অসহায় গৃহবধূ!

17

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাঁশখালীতে সুদের আশায় প্রবাসীর স্ত্রীকে ৩৬ হাজার টাকা ধার দেন। ঋনের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হন গৃহবধূ। এ সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছেন ‘সুদখোর’ খোকন বড়–য়া। ঋণের ফাঁদে ফেলে খোকন ধর্ষণ করার কারণেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে গত রবিবার রাতে বাঁশখালী হাসপাতালে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হয় বলে জানান ওই গৃহবধু। সেই নবজাতককে এক ব্যক্তি দত্তক নিলেও ধর্ষণের ঘটনায় বিচার হয়নি ধর্ষকের। উত্তর জলদী বড়ুয়া পাড়ায় সংঘটিত এ ঘটনায় পুরো পৌরসদরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে গত রবিবার রাতে বাঁশখালী হাসপাতালে কন্যা শিশুটির জন্ম দিয়ে মা পালিয়ে যান। পরে পুলিশ ও স্থানীয়রা খোঁজ করে এক রিকশাচালকের সহায়তায় তাকে খুঁজে বের করে শিশুটিকে কোলে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু শিশুটিকে রাখতে চাননি তিনি। যে কারণে একজনের কাছে গতকাল শিশুটিকে দত্তক দেওয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, ১৫ বছর আগে বিয়ে হওয়া ওই নারীর স্বামী ১১ বছর ধরে মালয়েশিয়া থাকেন। তাদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। অভাবের সংসার হওয়ায় বিভিন্ন সময় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি খোকন বড়ুয়ার কাছ থেকে টাকা ঋণ নিতেন ওই গৃহবধু। এরমধ্যে প্রায় ৩৬ হাজার টাকার মতো ঋণ হয় তার। কিন্তু কিছুতেই টাকা পরিশোধ করতে পারছিলেন না তিনি। সুযোগটি কাজে লাগান তিন সন্তানের জনক খোকন বড়ুয়া। তিনি ঋণের টাকার বিনিময়ে মেয়েটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন বলে ওই গৃহবধূ জানিয়েছেন।
ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমার কাছ থেকে টাকা পেতো খোকন। সে আমাকে প্রায়সময় উত্যক্ত করতো। এক পর্যায়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করলে আমি গর্ভবতী হই। বিষয়টি লজ্জায় কাউকে জানাতে পারি নাই। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। আমার সন্তানটি একজনকে দত্তক দিয়েছি। আমার স্বামীও আমাকে মামলা করতে বলেছে। এখন আমার সংসার ভেঙে গেছে। আমি প্রয়োজনে মামলা করবো।’
উত্তর জলদী বড়ুয়া পাড়া গ্রামের দুই ব্যক্তি বলেন, খোকন নিজেকে এলাকার সমাজপতি হিসেবে দাবি করেন। যে কোন পরিস্থিতিতে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেন। তিনি এলাকার কিছুটা অসহায় নারীদের ঋণ দেওয়ার বিষয়টি এখানে প্রতিষ্ঠিত। পরে বিভিন্ন নারীর সাথে ‘লম্পটগিরি’ করেন। তার লাম্পট্যের শিকার হয়ে মেয়েটি দুক‚লই হারাতে বসেছে। পুলিশের উচিৎ ঘটনাটি স্বপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত করা। কোন কারণে যদি খোকন বিষয়টি অস্বীকার করে প্রয়োজনে ডিএনএ পরীক্ষা করা হোক।
স্থানীয় কাউন্সিলর তপন বড়ুয়া পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমাদেরকে থানা থেকে বাচ্চার বিষয়টি মীমাংসা করতে বলা হয়েছে। আমরা মেয়েটির কাছ থেকে লিখিত নিয়ে বাচ্চাটিকে একজন সরকারি কর্মকর্তার হাতে তুলে দিয়েছি। মেয়েটির স্বামী বিদেশে থাকলেও স্থানীয় খোকন নামে এক ব্যক্তি মেয়েটিকে নষ্ট করেছে বলে আমাদের জানিয়েছে। আমি মেয়েটিকে থানায় অভিযোগ দিতে বলেছি। কারণ ধর্ষণের ঘটনা আমরা বিচার করতে পারবো না।’
বাঁশখালী থানার ওসি মো. শফিউল কবীর পূর্বদেশকে বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ পেয়ে আমরা শিশুটির মাকে শনাক্ত করেছি। পরে সেই মায়ের হাতে শিশুটিকে তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শিশুটি জন্ম হওয়ার পেছনের বিষয় নিয়ে কেউ আমাদের কিছু জানায়নি। মেয়েটির পরিবারের কেউ যদি অভিযোগ দেন, অবশ্যই ঘটনার সাথে কে জড়িত তা খতিয়ে দেখবো।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে খোকন বড়ুয়াকে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে স্থানীয় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি ওই নারীর কাছ থেকে ৪০ হাজারের বেশি টাকা পাই। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা বলছে। ঘটনার সাথে আমি জড়িত নই।’