সারা দেশে ১৪ দিন সম্পূর্ণ ‘শাটডাউন’ দেয়ার সুপারিশ

50

সারা দেশে কমপক্ষে ১৪ দিন সম্পূর্ণ ‘শাটডাউন’ করতে কোভিড ১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশকে যৌক্তিক বলে মনে করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেছেন, সরকারেরও এই ধরনের প্রস্তুতি আছে। যে কোনো সময় সরকার তা ঘোষণা দেবে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সারা দেশে কমপক্ষে ১৪ দিন সম্পূর্ণ ‘শাটডাউনের’ সুপারিশ করেছে কোভিড ১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. শহিদুল্লাহ বলেন, শাটডাউন মানে জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছুই বন্ধ রাখার কথা বোঝানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, কোভিড ১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশ সক্রিয় বিবেচনায় নেব। সংক্রমণ কমানোর জন্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে যেটা প্রয়োজন সেটাই করা হবে।
ভাইরাসের অতিবিস্তারের প্রেক্ষাপটে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশে একটানা ১৪ দিনের ‘সম্পূর্ণ শাটডাউন’ দেওয়ার সুপারিশ করেছে কোভিড ১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটি। কমিটি এই সময়ে জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন, অফিস-আদালতসহ সবকিছু বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে।
জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত ৩৮তম সভায় এই বিষয়ে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে জাতীয় কমিটি।
বৃহস্পতিবারর রাতে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্নভাবে তা কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে বিধিনিষেধ দিয়ে এটাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।
সংক্রমণ পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যে কোনো সময় যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। খবর বিডি ও বাংলানিউজের।
পরামর্শক কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কোভিড রোগের বিশেষ ডেল্টা প্রজাতির সামাজিক সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে ও দেশে ইতোমধ্যেই রোগের প্রকোপ অনেক বেড়েছে। এ প্রজাতির জীবাণুর সংক্রমণ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে সারাদেশেই উচ্চ সংক্রমণ, পঞ্চাশোর্ধ জেলায় অতি উচ্চ সংক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। রোগ প্রতিরোধের জন্য খন্ড খন্ডভাবে গৃহীত কর্মসূচির উপযোগিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অন্যান্য দেশ, বিশেষত পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অভিজ্ঞতা কঠোর ব্যবস্থা ছাড়া এর বিস্তৃতি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। ভারতের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে। তাদের মতামত অনুযায়ী যে সব স্থানে পূর্ণ ‘শাটডাউন’ প্রয়োগ করা হয়েছে সেখানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ও জনগণের জীবনের ক্ষতি প্রতিরোধ করার জন্য কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে সারাদেশে কমপক্ষে ১৪ দিন সম্পূর্ণ ‘শাটডাউন’ দেওয়ার সুপারিশ করছে। জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন, অফিস-আদালতসহ সবকিছু বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এ ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে না পারলে আমাদের যত প্রস্তুতিই থাকুক না কেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অপ্রতুল হয়ে পড়বে।
পরামর্শক কমিটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছেন। এজন্য সভায় তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। এ রোগ থেকে পূর্ণ মুক্তির জন্য ৮০ শতাংশের ঊর্ধ্বে মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া প্রয়োজন। বিদেশ থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহ, লাইসেন্সের মাধ্যমে দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন করা ও নিজস্ব ভ্যাকসিন তৈরির জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গবেষণা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টার প্রতি কমিটি পূর্ণ সমর্থন জানায়।
জাতীয় কমিটির সুপারিশ এমন এক সময়ে এসেছে যখন চলমান কঠোর বিধিনিষেধ এবং দেশজুড়ে এলাকাভিত্তিক ‘লকডাউনের’ মধ্যে আবার দৈনিক কোভিড সংক্রমণ ছয় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারায় দেশে একদিনে মৃত্যুর সংখ্যাও রয়েছে আশির উপরে।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৬ হাজার ৫৮ জনের করোনা ভাইরাস সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে। এই রোগে মারা গেছেন ৮২ জন।
এদিন সকাল পর্যন্ত পাওয়া নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৭২ হাজার ৯৩৫ জনে। তাদের মধ্যে ১৩ হাজার ৮৬৮ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এ ভাইরাস।