সলিমপুরের দখলদার ও ভূমিদস্যুদের তালিকা প্রস্তুত

84

রাহুল দাশ নয়ন

সীতাকুন্ডের জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগরে দখলদার, ভূমিদস্যু ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের তালিকা তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই তালিকায় কতজন আছে স্পষ্ট না করলেও তালিকা তৈরির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে এখনই ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে বড়ধরনের কোনো অভিযান না চালিয়ে আপাতত সেখানকার সবধরনের সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ভূমি দখলের স্বার্থে গঠিত ১৫টি সমবায় সমিতির নিবন্ধনও বাতিল হয়েছে। পাশাপাশি পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আলীনগরে থাকা বৈধ ভূমি মালিকদের তথ্য সংগ্রহের কাজও চলছে। তবে আলীনগরে যাতায়াতের সড়কটির ছয় স্পটে কেটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে ইয়াছিন বাহিনী।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘সলিমপুরে যারাই দখল রাজত্ব কায়েম করেছে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সেখানে সরকারের যে উন্নয়ন পরিকল্পনা আছে তাতে কেউ বাধা দিলে আমরা কঠোর অবস্থানে যাবো। আমরা চাই সলিমপুরে সুন্দর একটি পরিবেশ ফিরে আসুক। আমরা বৈধ জমি মালিকদের তথ্য সংগ্রহ করে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব।’
জানা যায়, সীতাকুন্ডের সলিমপুরের পরিস্থিতি মোটামুটি প্রশাসনের আয়ত্বে থাকলেও এখনো বিচ্ছিন্ন আলীনগর। সেখানে প্রবেশের ছয়টি স্পটে সড়ক কেটে ফেলেছে ইয়াছিন বাহিনী। তিনফুট গভীর এবং আট ফুট চওড়া করে সড়কটি কাটা হয়েছে। এতে গাড়ি নিয়ে কেউ আলীনগরে প্রবেশ করতে পারছে না। এমনকি গত ৮আগস্ট প্রশাসনের লোকজন গিয়ে সড়কের অগ্রভাগে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। এদিকে আগামী ২০ আগস্টের মধ্যে আলীনগর এলাকায় যাদের বৈধ ভূমি আছে তাদেরকে বৈধ কাগজপত্রসহ সীতাকুন্ডের সহকারী কমিশনার ভূমি কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও একই সময়ের মধ্যে অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করে আলীনগরে থাকা ব্যক্তিদের নিজ উদ্যোগে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সীতাকুন্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে সলিমপুরের লোকজন সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে একমত হয়েছেন। তারা পুনর্বাসন হবেন এমন খবরে খুশি। আলীনগরে বৈধ ভূমি মালিকদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আগামী দশদিনের মধ্যে প্রকৃত মালিকানার তথ্য নিয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছি। সেখানে অবৈধভাবে যারা বসবাস করছেন তারা চাইলে আমরা তাদের পাশেও থাকবো। কিন্তু সেখানে ইয়াছিনের রাজত্ব আর চলবে না। ইতোমধ্যে সলিমপুর ও আলীনগরে যে ১৫টি সমবায় সমিতি ছিল সেগুলোর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। তারা সেখানে সমিতির কোনো কাজ করেনি। মূলত জায়গা দখলের জন্যই সমিতিগুলো গঠিত হয়েছে। সলিমপুর ও আলীনগরের ভূমিদস্যু, দখলদার ও তাদের আশ্রিতদের তালিকা প্রস্তুত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম পূর্বদেশকে বলেন, ‘সলিমপুর ও আলীনগরের সব বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুও বন্ধ রাখা হয়েছে। এককথায় বর্তমানে জঙ্গল সলিমপুর অন্ধকার অবস্থায় আছে। একটি মসজিদে লাইন থাকলেও সেটিও বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।’
এদিকে জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগরের ১৫টি সমবায় সমিতির নিবন্ধন বাতিল করেছে জেলা সমবায় অফিস। জেলা সমবায় অফিসার মুরাদ আহমদ স্বাক্ষরিত এক আদেশে সমিতির নিবন্ধনগুলো বাতিল করা হয়। আদেশে উল্লেখ আছে আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকার কারণে সমিতিগুলোর এই নিবন্ধন বাতিল করা হয়।
বাতিলকৃত সমিতিগুলো হলো জঙ্গল সলিমপুর ভূমিহীন সমবায় সমিতি, আলীনগর বহুমখী সমবায় সমিতি, জঙ্গলসলিমপুর ছিন্নমূল বাস্তুহারা বহুমুখি সমবায় সমিতি, নুর নবী শাহ জনকল্যাণ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি, জঙ্গল সলিমপুর একতা ভূমিহীন সমবায় সমিতি, গোলপাহাড় ভূমিহীন সমবায় সমিতি, বেঙ্গল সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি, জঙ্গল সলিমপুর শ্রমজীবী সমবায় সমিতি, বৃহত্তর ছিন্নমূল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমবায় সমিতি, আশার আলো শ্রমজীবী সমবায় সমিতি, কাঁঠালতলা মানবকল্যাণ কর্মজীবী সমবায় সমিতি, মায়ের দোয়া কর্মজীবী সমবায় সমিতি, চেতনা জনকল্যাণ কর্মজীবী সমবায় সমিতি, জঙ্গল সলিমপুর জনকল্যাণ কর্মজীবী সমবায় সমিতি, মায়ের আঁচল শ্রমজীবী কল্যাণ সমবায় সমিতি।
সীতাকুন্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ১৫ সমবায় সমিতির নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি চট্টগ্রামের জেলা সমবায় অফিসার মুরাদ আহমদ। তিনি পূর্বদেশকে বলেন,‘এটা আপনি কোথায় পেয়েছেন? এটাতো অত্যন্ত গোপনীয় বিষয়। আমি এ বিষয়ে কথা বলতে পারবো না।’