সমান দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দায়িত্ব পালন করুন

49

সকল প্রার্থীর প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দায়িত্ব পালন করার জন্য মাঠ-পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে চট্টগ্রাম বিভাগে দায়িত্বরত মাঠ-পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় এমন নির্দেশনা দেন তিনি। নির্বাচনে উৎসব-উদ্দীপনার যে পরিবেশ বজায় রয়েছে তা স্বার্থকভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতেও অনুরোধ জানান সিইসি।
সিইসি বলেন, ৫৮টি নির্বাচনী এলাকার দুই কোটি দুই লক্ষ ভোটারের জনপদ চট্টগ্রাম। এখানকার মাঠ-পর্যায়ের কর্মকর্তারা তফসিলের অনেক আগে থেকেই নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তৈরিতে কাজ করেছেন। কমিশনের কাছে শুধু নীতিনির্ধারণ দায়িত্ব, নির্বাচনের মূল কাজ মাঠ-পর্যায়ে সমর্পণ করা হয়েছে।
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে নানামুখী আলোচনায় অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, লেভের প্লেয়িং ফিল্ডের সংজ্ঞা কী? এ কথা বারবার বলা হয় কেন, লেভেল প্লেয়িং ঠিক নেই? কোথায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নাই, কিসের ফিল্ড ঠিক নাই?
তিনি বলেন, এবার রেকর্ডসংখ্যক প্রায় ৩৬০০ প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। প্রতি কেন্দ্রে গড়ে ১০ জন। যাচাই-বাছাই শেষে ১৮৪৬ জন প্রার্থী আছেন। প্রতি কেন্দ্রে গড়ে ছয়জন। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই আছেন ১৩ জন প্রার্থী। এতেই প্রমাণিত হয়, নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু আছে।
প্রার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে সিইসি বলেন, সরকারি দল-বিরোধী দল মিছিল-সমাবেশ করছে, শোডাউন, রোডমার্চ করছে। কেউ তো বাধাগ্রস্ত হয়নি। তবুও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলা হচ্ছে কেন? শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় একে অপরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা মানে হিংসাত্মক কার্যক্রম নয়। খেলায় দুই পক্ষ খেলতে নামে। জয়ী হয় একপক্ষ। নির্বাচনকেও সেভাবেই গ্রহণ করতে হবে। সবাই একে-অপরের বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন। কোনও স্থায়ী সমস্যা যেন সৃষ্টি না হয় সেদিকে দেখতে হবে।
মাঠ-পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বক্তব্য শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনের ৯৫ ভাগ দায়িত্ব মাঠ-পর্যায়ে অর্পণ করেছি। তবুও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আমাদের কাছে যান। আমরা তাদেরকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে দিই। প্রাথমিক পরিস্থিতি ও প্রস্তুতির ধাপই হচ্ছে পুলিশ। যারা কাজ বেশি করে তারা একটু সমালোচিত হয়। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা নিরসনে আমাদের ১২২টি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে আছেন।
নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন বলেন, দেশের মোট ভোটার ও প্রার্থীর এক-পঞ্চমাংশ চট্টগ্রামে। দুর্গম এলাকা এখানেই বেশি। যে কারণে চ্যালেঞ্জও বেশি নিতে হবে। দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আছে। এটি সামাল দেয়া অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি কঠিন। সকল চ্যালেঞ্জ মেনেই আমরা আইনানুগ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবো। আমরা চাই সকল ভোটার নিরাপদে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে আবাসস্থলে ফিরুক।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪২২ জন প্রার্থী। প্রতি আসনে গড়ে সাত জনের বেশি প্রার্থী। আমরা চাই ভোটার ও নির্বাচনী মালামালের নিরাপত্তা। আমরা সহিংসতা চাই না। কোনোধরনের প্রাণহানি চাই না। কোনো প্রকার সহিংস ঘটনা যাতে নির্বাচনী পরিবেশকে উত্তপ্ত না করে, আইনশৃঙ্খলা যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আচরণবিধি মেনেই প্রত্যেক প্রার্থীকে প্রচারণা চালাতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প কমপ্লিট সিল করতে হবে। কোনো রোহিঙ্গা বের হতে পারবে না। কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষীপুর ও নোয়াখালীকে আমরা রেড জোন হিসেবে ধরেছি। এসব জেলা থেকেই বেশি অভিযোগ পাচ্ছি। এখানে যাতে পরিবেশ শান্ত থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। ইতোমধ্যে সিইসি মহোদয় আইজিপিকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে ইসি সচিব বলেন, কোনো প্রার্থীর সাথে মতবিনিময় না হলে দ্রুত করে ফেলুন। প্রত্যেকটি ইউনিয়ন গিয়ে কাজ করতে হবে। ওয়ার্ডে গিয়ে কাউন্সিলদের সাথে আলাপ করতে হবে। প্রতিদিন মোবাইল কোর্টের রিপোর্ট দিতে হবে। আমরা যেন না শুনি কোনো ম্যাজিস্ট্রেটকে পুলিশের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট যাতে গাড়ি পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সাথে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য ১২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। অন্যান্য বাহিনীর জন্য থোক বরাদ্দ দিয়েছি। নির্বাচন কমিশন থেকে জেলা-উপজেলায় সমন্বয় সেল করা হবে। এবারের নির্বাচনে গ্রাম পুলিশকেও সমন্বয় করা হয়েছে। ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রার্থী ছাড়া বাকিরা বৈধ অস্ত্র জমা দিবেন।
চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, চট্টগ্রামে আমাদের হোমওয়ার্ক করা শেষ। আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। অস্ত্র-গোলাবারুদসহ সবধরনের সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত আছি। নির্বাচনে ২২ হাজার পুলিশ ফোর্স মোতায়েন থাকবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য ভোটের দিন বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সংখ্যা বাড়ানো হলে রোহিঙ্গারা কোনো বিশৃঙ্খলা করতে পারবে না।
২৪ পদাতিক ডিভিশনের কমান্ড্যান্ট বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. শামসুজ্জামান বলেন, আমরা চট্টগ্রামের একটি আসনে ইভিএম নিয়ে কাজ করবো। পাঁচটি স্তরে এটিকে সফল করতে কাজ করবো।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নানের পরিচালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মাহবুব, বিজিবির রিজিওনাল কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আদিল চৌধুরী, বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সিকদার, নৌ-অঞ্চলের কমান্ডার নিজামুল হক, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমান, ডিজিএফআই অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বশির আহমদ, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক তম্ময় দাশ, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হাসান, আনসার ভিডিপির উপ-মহাপরিচালক মো. শামসুল আলম, এনএসআইয়ের অতিরিক্ত পরিচালক তোফাজ্জল হোসেন, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান, র‌্যাব-৭ অধিনায়ক মিফতানুর রহমান, জেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা রাজীব হোসাইন, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান, লক্ষীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহজাহান আলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস, ফেনী সদর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ, কোতোয়ালী থানার ওসি মো. মহসীন প্রমুখ।