সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হবে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার

31

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার নির্মাণের আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। মা ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় করা রিটের জবাবে এই আদেশ দেয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি কর্মস্থল, বিমানবন্দর, বাসস্ট্যান্ড, রেলওয়ে স্টেশন, শপিংমলের মতো জনসমাগমস্থল এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত, পরিচালিত ও ব্যবস্থাপনায় বিধিবদ্ধ, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানেও ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার তৈরির নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলায় প্রাথমিক, নি¤œ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজারের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ ২ হাজার ২৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই আদেশ বাস্তবায়ন হলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত হবে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
এর আগে গত রবিবার হাইকোর্টের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনের বিষয়ে রায় দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন মো. রাশিদুল হাসান, অ্যাড. ইশরাত হাসান। সঙ্গে ছিলেন অ্যাড. তানজিলা রহমান। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান।
রায়ের পর আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, মা ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিলের পরিপ্রেক্ষিতে রুল, নির্দেশনাগুলো এবং চূড়ান্ত শুনানির পর হাইকোর্ট এ যুগান্তকারী রায় ঘোষণা দিলেন। আমাদের সংবিধানের ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদে স্বীকৃত অন্যতম মৌলিক অধিকারবিষয়ক এ রায় নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক রায়।
তিনি বলেন, বিচারিক আদালতসহ বিভিন্ন জায়গায় একাধিক ব্রেস্ট ফিডিং রুম ইতোমধ্যেই স্থাপিত হয়েছে। এই যুগান্তকারী রায়ের পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে কর্মজীবী নারীরা শিশুদের কর্মক্ষেত্রে রেখেই স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারবেন। আমি মনে করি, কর্মস্থল, বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, শপিংমলসহ সব জনবহুল স্থানে শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর নিরাপদ পরিবেশ সম্বলিত ব্রেস্ট ফিডিং রুম ও বেবি কেয়ার কর্নার স্থাপন হলে বাংলাদেশ সারাবিশ্বের জন্য একটা উদাহরণ সৃষ্টি করবে। যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য অনুসরণীয় হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর কর্মক্ষেত্র, শপিংমল, বিমানবন্দর, বাসস্টপ, রেলওয়ে স্টেশনে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনের নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করা হয়। রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, সমাজকল্যাণ সচিব, বিমান ও পর্যটন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়। এরপর ওই বছরের ২৭ অক্টোবর কর্মস্থল, বিমানবন্দর, বাসস্ট্যান্ড, রেলওয়ে স্টেশন, শপিংমলের মতো জনসমাগমস্থলে এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত, পরিচালিত ও ব্যবস্থাপনায় বিধিবদ্ধ, স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্রেস্ট ফিডিং ও বেবি কেয়ার কর্নার স্থাপনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পরে ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ সারাদেশের কলকারখানা ও মিলগুলোতে দুই মাসের মধ্যে ব্রেস্ট ফিডিং রুম স্থাপনের নির্দেশ দেন।