সব ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৫শ কোটি টাকা

44

শুধু অনুমোদন পাওয়া নতুন তিন ব্যাংক নয়, সব ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি করতে হবে। আর এ জন্য দুই বছর সময় বেধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম শুক্রবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সর্বশেষ বোর্ড সভায় ৫০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন সংগ্রহের শর্তে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটিজেন ব্যাংক এবং পিপলস ব্যাংকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
“ঐ সভায় আগে অনুমোদন দেয়া ব্যাংকগুলোকে দুই বছরের মধ্যে মূলন ৫০০ কোটি টাকা উন্নীত করার শর্ত দেয়া হয়েছে। যে সব ব্যাংকের মূলধন এখনও ৫০০ কোটি টাকার কম রয়েছে তাদেরকে এ শর্ত পূরণ করতে হবে।”
খুব শিগগিরই এ সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করা হবে বলে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফরাহ মো. নাছের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমানতকারীদের অর্থ ঝুঁকিমুক্ত রাখতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ।আগের ব্যাংকগুলোর জন্য কিছুটা চাপ সৃষ্টি হলেও সার্বিকভাবে ব্যাংকিং খাতের জন্য এটা ভালো সিদ্ধান্ত বলে জানান তিনি।
“ব্যাংক উদ্যোক্তারাই বলছেন, দেশের অর্থনীতির আকার বড় হয়েছে। তারা আরও ব্যাংক চাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা তাদের জন্য বেশি চাপ হওয়ার কথা নয়।”
নতুন সরকারের শুরুতেই ১৭ ফেব্রুয়ারি অনুমোদন পেল তিনটি ব্যাংক, এ নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা ৬২তে উন্নীত হতে যাচ্ছে।এগুলো হচ্ছে বেঙ্গল ব্যাংক, পিপলস ব্যাংক ও সিটিজেন ব্যাংক। তিনটি ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
বেঙ্গল ব্যাংকের উদ্যোক্তা বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোর্শেদ আলম এই গ্রæপের চেয়ারম্যান এবং প্রস্তাবিত ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হলেন তার ছোট ভাই জসীম উদ্দিন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মা জাহানারা হকের নাম সিটিজেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। পিপলস ব্যাংকটির আবেদনে প্রস্তাবিত চেয়ারম্যান ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা এম এ কাশেম।
এতদিন নতুন কোনো ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে ৪০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন হলেই চলত। নতুন তিনটির ক্ষেত্রে এই অঙ্ক ১০০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে এ নিয়ে ১৪টি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিশেষ আইনে গঠিত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে গত বছর তফসিলি ব্যাংক হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়।
গত সরকারের শেষ দিকে অনুমোদন পাওয়া তিনটিসহ চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের আবেদন জমা পড়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। তখন বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট (বিপিডব্লিউটি) এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি ব্যাংক শুধু অনুমোদন পেয়েছিল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে চাপ আসা সত্ত্বেও বাকি তিনটি ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার প্রস্তাবটি স্থগিত রেখেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
তখন অনুমোদন না দেওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছিল, বেঙ্গল ব্যাংকের আবেদনে যে পরিচালকদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে করসংক্রান্ত মামলা রয়েছে। পিপলস ব্যাংকের কাশেমের যুক্তরাষ্ট্রের যাবতীয় সম্পদের হিসাব যথাযথ মনে হয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। আর সিটিজেন ব্যাংকের প্রয়োজনীয় কাগজ নেই।
বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক মিলিয়ে এতদিন ৫৯টি ছিল, নতুন তিনটি যোগ হলে এই সংখ্যা ৬২টি হবে।
আওয়ামী লীগ সরকার ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ ২০১২ সালে নয়টি বেসরকারি ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল।২০১৩ সালে এ সব ব্যাংক কার‌্যক্রম শুরু করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর‌্যালোচনায় দেখা যায়, এই নয় ব্যাংকেই পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকার কম রয়েছে।তার আগে অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলোর মূলধন অবশ্য ইতোমধ্যে ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
ঋণ কেলেঙ্কারির কয়েকটি বড় ঘটনায় গত কয়েক বছর ধরেই দেশের ব্যাংক খাত আলোচনায় রয়েছে। ওই সময় অনুমোদন পাওয়া কয়েকটি ব্যাংকও অনিয়ম আর তারল্য সঙ্কটে ধুকছে।
গত জুন পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার (রাইটঅফসহ) মতো, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১৫ শতাংশ।
এই বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ নিয়ে দেশে অর্থনীতিবিদদের যেমন উদ্বেগ আছে, তেমনি প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে সরকারকে।
অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংকাররা নতুন ব্যাংকের বিষয়ে বরাবরই বিরোধিতা করে বলছেন, বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে গেছে। বর্তমান অবস্থায় দেশে আর ব্যাংকের প্রয়োজন নেই।
তারা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকের অবস্থা এমনিতেই খারাপ। এ পরিস্থিতিতে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া কোনোভাবেই উচিৎ হবে না।
কিন্তু তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ক্রমাগত চাপ ছিল নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেওয়ায়।
যদিও গত সেপ্টেম্বরেই মুহিত বলেছিলেন, “দেশের ব্যাংক খাত খুব বেশি বড় হয়ে গেছে। তাই এ খাত সংকোচনের দরকার হতে পারে।”