সবজি, মাছ-মাংসের বাজারে অস্থিরতা

36

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদুল আযহার ছুটি শেষ হতে না হতেই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে সবজি, মাছ-মাংসের বাজারে। বিশেষ করে সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির কেজিতে দাম বেড়েছে অন্তত ১০ থেকে ১৫ টাকা। এর মধ্যে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা পর্যন্ত। সে সাথে মাছের কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা ও মুরগির কেজিতে অন্তত ১০ টাকা বেড়েছে।
গতকাল শুক্রবার নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার ও চকবাজার কাঁচাবাজার ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
ব্যবসায়ীরা কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি করছেন ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়। ঈদের আগে ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। কাঁচা মরিচের দামবৃদ্ধির বিষয়ে রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী মো. জানে আলম বলেন, কয়েকদিনের বৃষ্টিতে কাঁচা মরিচের ক্ষেতের বেশ ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া ঈদের প্রভাবে বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহও কম রয়েছে। সবকিছু মিলেই দাম বাড়তি।
আরেক ব্যবসায়ী বাকের হোসেন বলেন, ঈদের আগে এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচা মরিচ ২০ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু আজ (শুক্রবার) যে দামে কেনা হয়েছে তাতে ৪০ টাকার নিচে বিক্রি করার সুযোগ নেই।
ঈদের পর দামবৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে ডিম। ঈদের আগে ১২০ টাকা বিক্রি হওয়া এক ডজন ডিম এখন বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। আর বিভিন্ন মুদি দোকানে এক পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির বাজারে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি শসা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, বেগুন মানভেদে ৭০ থেকে ৮০, লাউ ৩০ থেকে ৪০ টাকা, চাল কুমড়া ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, করলা ৪০ থেকে ৬০ টাকা, পটল ২০ থেকে ৩০ টাকা, কাকরোল ৩০ থেকে ৪০ টাকা এবং পেঁপে ও ঢেড়শ ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
চকবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. হালিম বলেন, কোরবানির সময় সবাই মাংসের দিকে ঝুঁকেছিল। এখন সবাই আবার সবজিতে ফিরছে। কিন্তু অনেক ব্যবসায়ী এখনও গ্রাম থেকে আসেননি। তাই বাজারে সবজির চাহিদা বাড়লেও পর্যাপ্ত সবজি আসেনি। তাই দাম বাড়তি।
এদিকে মাংস বাদ দিয়ে ভোক্তার মাছের প্রতি আগ্রহ বাড়লেও সেখানেও গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। মাছের কেজিতে দাম বেড়েছে অন্তত ২০ থেকে ৩০ টাকা। বাজারে গতকাল ২০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি রুই-কাতলা ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, শিং ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, ইলিশ (আকারভেদে) ৮০০ থেকে ২০০০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, চিংড়ি (আকারভেদে) ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কৈ ১৯০ থেকে ২০০ টাকা, বোয়াল ৪০০ টাকা, সিলভার কার্প ২০০ টাকা, সামুদ্রিক কোরাল ৪০০ টাকা, মাগুর ৬০০ টাকা ও পাঙ্গাস ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের মাছ বিক্রেতা আহমদ কবির বলেন, বর্তমানে মাছের দাম কিছুটা বাড়তি। আমরা বেশি দরে কিনে এনেছি বিধায় এখানেও সেভাবে বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া ঈদের ছুটি শেষ হলেও অনেক আড়তদার এখনও কাজে ফেরেনি। সব আড়তদার আসলে মাছের সরবরাহ বেড়ে যাবে। তখন মাছের দামটাও কমে যাবে।
অন্যদিকে কোরবানির সময় মুরগির দাম কমতির দিকে থাকলেও তা আবার বাড়তে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ১৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও শুক্রবার ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া সোনালী মুরগি ৩০০ ও লেয়ার ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭০০ ও খাসির মাংস ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তাছাড়া খুচরায় প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৫০ টাকা, চায়না আদা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, দেশি আদা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, দেশি রসুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও চায়না রসুন ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে প্রতিকেজি সাদা চিনি ৮৫ টাকা, লাল চিনি ১০০ ও গুঁড়ো দুধ ৫০০ গ্রাম ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলার বাজার কর্মকর্তা সেলিম মিয়া পূর্বদেশকে বলেন, বর্তমানে বাজারে ব্যবসায়ীদের অনেকে ঈদের ছুটিতে থাকায় পর্যাপ্ত সবজি বাজারে সরবরাহ হচ্ছে না। অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানি আসাতে কয়েকটি পণ্য বেশি দরে বিক্রি করছেন দোকানিরা। তবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে এখনও যায়নি। প্রত্যেকটি বাজারে আমাদের নজরদারী আছে। কারও কোন অভিযোগ থাকলে সরাসরি আমাদেরকে জানাতে পারবেন।