শ্রীলংকার মুখোমুখি বাংলাদেশ

12

ক্রীড়া প্রতিবেদক

শঙ্কা কাটিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব জয়। এবার সুপার টুয়েলভের মিশন টাইগারদের। সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ স্টেডিয়ামে আজ মূলপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায়।
প্রথমবারের মতো আসরের ফাইনালে খেলার লক্ষ্যে আজ জয় দিয়ে শুরু করতে চায় বাংলাদেশ। এজন্য তরুণদের কাছ থেকে ভালো পারফরমেন্স আশা করছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সাইফুদ্দিন, মাহেদি হাসান ও নাইম শেখের জ্বলে উঠার আশায় অধিনায়ক। তিনি বলেন, তাদের পারফরম্যান্স আমাদের জন্য ইতিবাচক। সাইফুদ্দিন তিন ম্যাচেই ভালো বোলিং করেছেন, ভালো ব্যাটিং করেছেন। মাহেদি ভালো বল করেছেন। নিজের প্রথম ম্যাচে ৬৪ রান করেন নাইম। আমি আশা করি তারা এই ধারা অব্যাহত রাখবে। তারা যখন পারফর্ম করে তখন খুবই ভালো লাগে এবং এটা আমাদেরও অনুপ্রাণিত করে। আমি আশা করি, সুপার টুয়েলভেও তারা আরও ভালো করবে।
একইভাবে মাহেদি হাসান, আফিফ হোসেন, নুরুল হাসান সোহান ও নাইম শেখকে নিয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে প্রশংসার খই ফুটেছে কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর মুখেও। বিশেষ করে মাহেদির নাকি বড় ভক্তই হয়ে গেছেন প্রোটিয়া এই কোচ। মাহেদিকে ‘থ্রি ইন ওয়ান’ ক্রিকেটার আখ্যা দিয়ে কোচ বলেছেন, “তার সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো সে দলের জন্য যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত থাকে। তাকে ব্যাটিং অর্ডারে যেখানেই নামান সে নামতে রাজি, তাকে পাওয়ার প্লে- তে বল করতে বলুন, মাঝে বল করতে বলুন, বা ডেথ ওভার- সে সবকিছুতেই রাজি। সবসময় সব চ্যালেঞ্জে সে নিজের শতভাগ দিতে প্রস্তুত থাকে।”
সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে একজন সাংবাদিক ওপেনিং জুটিতে আগের ম্যাচে নাইম শেখ ব্যর্থ হওয়ায় তাকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরিবর্তন করা হবে কিনা, এমন প্রশ্ন করায় মাত্র এক শব্দে ‘না!’ বলে যেভাবে উত্তর শেষ করে দিলেন তাতে নাইম সম্পর্কে কোচের ধারণা নিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে না। তরুণ অভিজ্ঞ মিলিয়ে এতো এতো পারফর্মার, তো কোচের চোখে আগামীকালের (আজকের) ‘এক্স ফ্যাক্টর’ কে হতে পারেন? এই প্রশ্নের জবাবে অবশ্য কাউকেই বেছে নিলেননা কোচ।
সুপার টুয়েলভ পর্ব বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বড় দল হিসেবে বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ছয় উইকেটে জয় আছে টাইগারদের। তবে বাছাই পর্বের বাইরে কোন দলকেই হারাতে পারেনি বাংলাদেশ।
এই ফরম্যাটে দুর্বলতার কারণে টি-২০ বিশ্বকাপ বাংলাদেশ কখনো খুব ভাল করতে পারেনি। ২০০৭ সালে বিশ্বকাপের প্রথম আসরে সুপার এইটে খেলতে পেরেছিলো বাংলাদেশ। এরপর ২০০৯, ২০১০ ও ২০১২ সালের আসরে একটি জয়ও পায়নি টাইগাররা।
২০১৪ আসরটি ১৬ দলের হওয়ায় জয় পায় বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে ৩ খেলায় ২টি জয়ে হয়েছিল গ্রুপ সেরা। এরপর সুপার টেনে ৪ ম্যাচের সবগুলোই হারে টাইগাররা।
একই ধরনের চিত্র ছিলো ২০১৬ সালেও। প্রথম রাউন্ডে ৩ খেলায় ২ জয় পেয়েছিলো বাংলাদেশ। একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছিলো। গ্রুপ সেরা হয়ে সুপার টেন-এ উঠলেও, সেখানে কোন জয়ের স্বাদ পায়নি বাংলাদেশ। সবগুলো ম্যাচই হারে টাইগাররা। সুপার টেন পর্বে ভারতের কাছে ১ রানে হার বাংলাদেশের জন্য ছিলো কষ্টদায়ক। শেষ তিন বলে তিন উইকেট হারায় তারা। যখন জয়ের জন্য দরকার ছিল তিন বলে মাত্র ২ রানের। তবে আজকের ম্যাচে প্রতিপক্ষ শ্রীলংকা হওয়ায় আত্মবিশ্বাসী হতেই পারে বাংলাদেশ।
এই ফরম্যাটে নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে সর্বোচ্চ দলীয় রান করেছিলো বাংলাদেশ। শ্রীলংকার ছুড়ে দেয়া ৬ উইকেটে ২১৪ রানের টার্গেট ৫ উইকেটে ২১৫ রান করে স্পর্শ করেছিলো টাইগাররা। ৩৫ বলে অনবদ্য ৭২ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন মুশফিকুর রহিম। এতে ৫ উইকেটের অবিশ্বাস্য জয় পায় বাংলাদেশ। ডাবল-লিগের ঐ টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় লেগেও শ্রীলংকার বিপক্ষে ২ উইকেটে জিতেছিলো বাংলাদেশ।
টুর্নামেন্টের এক ম্যাচে দুই দলের খেলোয়াড়রা এক পর্যায়ে মৌখিক বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েছিলো। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এক পর্যায়ে ম্যাচটি না খেলার হুমকিও দিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
পরিশেষে, টিম ম্যানেজমেন্ট সাকিবকে বুঝাতে সক্ষম হয় এবং বর্তমান অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ দলের জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশকে ফাইনালে তুলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ফাইনালে ভারতের কাছে হেরেছিল টাইগাররা। সে ম্যাচেই টি-২০ ফরম্যাটে নিজেদের সেরাটা মেলে ধরতে পেরেছিলো বাংলাদেশ। সেই বিবাদে জড়ানো ম্যাচটি বাংলাদেশ-শ্রীলংকার মধ্যকার শেষ লড়াই।
নিশ্চিতভাবেই আজকের ম্যাচটি সেই ম্যাচের স্মৃতি জাগিয়ে তুলবে, যদিও শ্রীলংকা দলের অনেক অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ই ম্যাচটি খেলেনি। কিন্তু বাংলাদেশের অভিজ্ঞরা সেই ম্যাচের অংশ ছিলেন। এই ফরম্যাটে শ্রীলংকার বিপক্ষে ১১ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে চারটিতে জিতেছে টাইগাররা। সাতটিতে জিতে শ্রীলংকা। সর্বশেষ দুই ম্যাচে জয় ছিল বাংলাদেশেরই।
টি-২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের পারফরমেন্স আশানুরূপ নয়। এখন পর্যন্ত ১১৬ ম্যাচে ৪৩টি জিতেছে তারা। ৭১ ম্যাচে হার ও দু’টি পরিত্যক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত সংস্করণের বিশ্বকাপে ২৮টি ম্যাচ খেলেছে এবং মাত্র সাতটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে বাছাই পর্ব থেকেই ছয়টি জয় এসেছে, সর্বশেষ জয়টি পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে। টুর্নামেন্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র একটি ম্যাচ জিতেছে তারা।
বাংলাদেশ দল : মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস, আফিফ হোসেন, মোহাম্মদ নাঈম শেখ, নুরুল হাসান সোহান, শামীম হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, রুবেল হোসেন, শরিফুল ইসলাম, শেখ মাহেদি হাসান, নাসুম আহমেদ ও তাসকিন আহমেদ।