শেষ কর্মদিবসে ৪৪ জনকে নিয়োগ দিলেন ড. শিরীণ

14

চবি প্রতিনিধি

দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্ম দিয়ে এই পাঁচ বছরের প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপেই আলোচনা-সমালোচনার বিষয় ছিলেন তিনি।
এসব বিতর্কের মধ্যে তিনি সবচাইতে বেশি আলোচিত ছিলেন অনিয়মতান্ত্রিকভাবে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ ইস্যুতে। শিক্ষক, কর্মকর্তা, ককর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ প্রতিনিয়তই উঠে এসেছে শিরীণ আখতারের বিরুদ্ধে। উপাচার্যের পদে তার শেষ কর্মদিবসেও তিনি জন্ম দিয়ে গেলেন আরেকটি বিতর্কের। শেষ দিনে তিনি ৪৪ জন ব্যক্তিকে চবিতে নিয়োগ দিয়ে সেই বিতর্ককে জমিয়ে গেলেন গতকাল মঙ্গলবার। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর নতুন উপাচার্য নিয়োগের মধ্য দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের অধ্যায় শেষ হয়েছে। তবে নিজের বিদায়ের দিনেও নিয়োগ বিতর্ককে এড়িয়ে যেতে পারেননি। এদিন দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে, হল ও দপ্তরে অন্তত ৪৪ জনকে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তাদের প্রত্যেককেই দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে আলাদা কোনো নিয়োগ বোর্ড বসানোর প্রয়োজন পড়ে না। রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরের ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়ার পর উপাচার্য তা অনুমোদন দেন। এরপর অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগকৃত এসব পদের বিপরীতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে নিয়োগপ্রাপ্তরা এর বিপরীতে আবেদন করে নিয়োগ স্থায়ী করার সুযোগ পান। এরই সুযোগ নিয়ে সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিকভাবে লোকবল নিয়োগ করে আসছিলেন বলে শিক্ষক সমিতিসহ সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করে আসছে।
গতকাল মঙ্গলবার উপাচার্যের পদে ড. শিরীণ আখতারের শেষ কর্ম দিবসেও রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরের মাধ্যমে মোট ৪৪ জনকে বিভিন্ন বিভাগ, হল ও দপ্তরে নিয়োগ দিয়ে গেছেন তিনি। নতুন উপাচার্য নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার আগেই তিনি এসব নিয়োগ সম্পন্ন করেছেন।
এ বিষয়ে জানার জন্য সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কেএম নূর আহমদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও দু’জনের কেউই কোনো প্রকার সাড়া দেননি।
তবে ৩য় শ্রেণির কর্মচারী সেলের প্রধান সৈয়দ মনোয়ার আলী বলেন, আমি শুনেছি গতকাল (গত পরশু) আর আজ (গতকাল) মিলে মোট প্রায় ৩০ জনকে ৩য় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগের অর্ডার হয়েছে। তবে আমরা এখনো কোনো এপয়েন্টমেন্ট লেটার হাতে পাইনি। লেটার পেলে আমরা সেল থেকে সেটা অনুমোদন দেব।
তবে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সেলের প্রধান মো. ওসমান চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন বলেন, আমরা সিন্ডিকেট থেকে একটি কমিটি করে দিয়েছিলাম যাতে করে কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু সিন্ডিকেটের এই সিদ্ধান্তকে না মেনে তিনি নিজের মনগড়া নিয়োগ দিয়ে গেছেন। সিন্ডিকেটে কমিটি গঠনের ওই তারিখের পর থেকে যতগুলা এরকম নিয়োগ হয়েছে প্রত্যেকটাই অবৈধ।