শিক্ষার্থীরা চান ক্যাম্পাসে ফিরতে শিক্ষকরা চান শহরে থাকতে

31

আসহাব আরমান ও শাহরিয়াজ মোহাম্মদ

ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার দাবিতে গত বছরের ২ নভেম্বর থেকে আন্দোলনে নামেন চবি চারুকলার শিক্ষার্থীরা। ঐদিন ক্লাস চলাকালীন সময়ে ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ার জেরে ২২ দফা দাবিতে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। তবে আন্দোলনের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো সমাধান আসেনি। এদিকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তবে এই সমস্যার দ্রæত সমাধান আসবে বলে জানিয়েছেন এ ব্যাপারে গঠিত ১৪ সদস্যের কমিটির প্রধান ও ছাত্র-ছাত্রী নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায় চারুকলা স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে যাত্রা শুরু করে ১৯৭০ সালে। এর আগে ১৯৬৯ সালে এটি বাংলা বিভাগের সহায়ক বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রতিষ্ঠার ৪০ বছর পর ২০১০ সালে শিক্ষার্থীদের দাবি ও আন্দোলনের কারণে শহরে স্থানান্তরিত হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউট। তবে গত ২ নভেম্বর থেকে অবকাঠামোগত সমস্যা ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে চারুকলা ইনস্টিটিউটকে আবারও চবিতে স্থানান্তরের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ২২ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে গত দুই মাস ১০ দিন ধরে চারুকলা ইনস্টিটিউটে ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ আছে। দাবি আদায় না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, যেসব সুবিধার কথা বিবেচনা করে চারুকলা ইনস্টিউটকে নগরে নিয়ে আসা হয়েছিল সেসব সুবিধা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি। ইনস্টিটিউটে এখনও শিল্পচর্চার পরিবেশ তৈরি হয়নি। জরাজীর্ণ ভবনে নেই আঁকাআঁকির গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ পানির সুবিধা। নেই পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধা। ইনস্টিটিউটে ৩৫৩ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছে ৮ সিটের একটি ছাত্রাবাস। ছাত্রীদের আবাসনের কোনো ব্যবস্থাই নেই। বিভিন্ন একাডেমিক কার্যক্রমের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত যেতে হয় মূল ক্যাম্পাসে। এছাড়াও শহরের ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত খেলার মাঠ, মিলনায়তন ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা।
চলমান আন্দোলনের বিষয়ে চারুকলা ইনস্টিটিউটের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী পার্থ রয় পূর্বদেশকে জানান, আমাদের আন্দোলনের সময় প্রায় দুই মাস ১০ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। তবে আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে। প্রক্টর স্যার বরাবরের মতই আমাদের একাডেমিক কাজ চালু করা জন্য বলেছেন। আমাদের স্যাররাও একই কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা আমাদের সিদ্ধান্তের অনড় আছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আমরা চলতি মাসে আন্দোলনের সমর্থনে একটি প্রদর্শনী আয়োজনের চেষ্টা করছি।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই দাবি করে চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সুফিয়া বেগম পূর্বদেশকে জানান, একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুই মাস ধরে বন্ধ আছে অযৌক্তিক কারণে। এতে করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষকরা সবাই ছাত্র-ছাত্রীর জন্য উদ্বিগ্ন। অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্লাস করতে আগ্রহী। আমরা একাডেমিক কার্যক্রম সচল করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবহিত করেছি। আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক পূর্বদেশকে জানান, আন্দোলন শুরু হবার পর থেকে শিক্ষার্থীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। তাদেরকে ক্লাসের ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা সব সময় তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যার সমাধান চেয়েছে। যেটি কখনও সম্ভব নয়। বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আমি অবগত নই। এ বিষয়ে গঠিত কমিটি বলতে পারবে।
গত বছরের ১১ নভেম্বর চারুকলা ইনস্টিটিউটে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে ছাত্র-শিক্ষকের সমন্বয়ে ১৪ সদস্যের কমিটি করা হয়। এতে প্রধান করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র উপদেষ্টা ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে। জানতে চাইলে তিনি পূর্বদেশকে জানান, একটা ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাস থেকে শহরে নিয়ে যাওয়া বা শহরে থেকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা সহজ কাজ নয়। এজন্য অনেক নিয়ম-নীতি মেনে কাজ করতে হয়। ২০১০ সালে এটি ক্যাম্পাস থেকে শহরে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছিলেন। পরে সেটি সিন্ডিকেটে পাস হওয়ার পর স্থানান্তর সম্ভব হয়েছিল। কেউ চাইলে সেটা একদিনে করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে বেশ কয়েকবার আলোচনায় বসেছি। তাদেরকে ক্লাসে আসার অনুরোধ করেছি। তাদের বারবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি। তারা একপ্রকার ‘কনভিন্স’। কিন্তু তারা ক্লাসে ফিরছে না। তাদের ক্যাম্পাসে ফেরানোর কাজটাও রাতারাতি করা সম্ভব নয়। তবুও আমরা আশা করছি দ্রæত একটি সমাধান আসবে।