শিক্ষার্থীদের পাঠদানে গণিত ভীতি

10

মিতা পোদ্দার

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সেই গণিত ভীতি আজও আমায় নাড়া দেয়। যখন আমার গণিতের শিক্ষক বাবা-মাকে স্কুলে ডেকে নিয়ে বলেছিলেন যে আমি গণিতে কাঁচা এবং আমার গণিত পড়ার কোন মানে নেই। তখনকার শিক্ষা পদ্ধতি ছিল জগ আর মগ থিউরি। অর্থাৎ শিক্ষক জগ থেকে জ্ঞান নামক জল ঢালবেন আর শিক্ষার্থীরা মগে নিয়ে তা গিলে ফেলবে। অর্থাৎ তখনকার শিক্ষা পদ্ধতি ছিল গতানুগতিক শিক্ষা পদ্ধতি। যা কেবল পাঠ্যপুস্তকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমান ডিজিটাল যুগে শিক্ষা ক্ষেত্রে ঘটেছে আমূল পরিবর্তন।
বর্তমানে কোনো শিক্ষার্থী গণিত না পারলে তাকে কোনভাবেই ছোটো করা যাবে না। তাকে ক্লাসে সবার সামনে ঠাট্টা-তামাশা করা যাবে না। প্রথমে ওই শিক্ষার্থীকে গণিতের প্রতি আগ্রহী করতে হবে। গণিতের প্রতি তার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে। গণিত মুখস্থ করার কোনো বিষয় নয়। গণিত হচ্ছে হাতে কলমে শেখার বিষয়। যা আনন্দের মাধ্যমে রপ্ত করতে হয়। এক্ষেত্রে একজন শিক্ষককে প্রশিক্ষণলব্দ কর্মকান্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে হবে। যেখানে শিশুটির মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে। এজন্য প্রয়োজন শুরু থেকেই সংখ্যা চেনা, প্রক্রিয়া প্রতীক সম্পর্কে ধারণা পাওয়া, যোগ বিয়োগ, গুণ ভাগের প্রতি বিশেষ যতœশীল হওয়া। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র পাঠ্যবই কেন্দ্রিক না করে বিভিন্ন ধাঁধা, কুইজ, সুডোকু, পুলসাইড পাজল, দাবা, বোর্ড গেম, রুবিক’স কিউব বা গণিতের নানা ধরনের অনলাইন খেলার সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে। এসব খেলা মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে তোলে। পুঁথিগত জ্ঞানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে যদি কিছু ম্যাজিক চিন্তার প্রয়োগ ঘটানো যায় তবেই শিশুটির গণিত ভীতি দূর করা সম্ভব বলে আমার ধারণা। বর্তমান সরকার শিক্ষার ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের পাঠ ভীতি দূরীকরণের জন্য বিভিন্নভাবে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছেন।
কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আকর্ষণীয় পাঠদান করার জন্য প্রতিনিয়ত তদারকি করে যাচ্ছেন। গণিতে প্রতিটি পাঠে চমৎকার কিছু কৌশল যা গণিত অলিম্পিয়াড প্রশিক্ষণের ম্যানুয়ালে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তাই আমার ধারণামতে বলতে পারি যে, গণিতে ভালো করার জন্য আগে শিশুর জড়তা দূর করতে হবে। উপকরণ সহযোগে শিশুর শিক্ষার প্রারম্ভিক ধাপে এগিয়ে যেতে হবে। নেতিবাচক কোন কটুক্তি করা যাবেনা। পারেনা শব্দটি মাথা থেকে সরিয়ে পারতেই হবে এই বিষয়ে তার মধ্যে আশা জাগিয়ে তুলতে হবে। তবেই শিক্ষার্থীর গণিত ভীতি দূর করা সম্ভব হবে। অন্যথায় অর্থনীতির চাকা কখনোই সচল করা সম্ভব হবেনা।
কবি ও প্রাবন্ধিক