শাহ আলীর এনআইডি চট্টগ্রামের ঠিকানায় মিয়ানমারের পাহাড়ে আত্মগোপনে রয়েছে আতাউল্লাহ আবু ওমর জুনুনি

31

নিজস্ব প্রতিবেদক
মিয়ানমারে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসা’র কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু ওমর জুনুনির ভাই শাহ আলী (৫৫) জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংগ্রহ করেছেন চট্টগ্রাম শহরের সিরাজদৌল্লাহ রোডের জয়নাব কলোনির ঠিকানায়। রোহিঙ্গা মুসলিমদের অধিকার আদায়ে তৎপর বলে দাবি করে আসা সশস্ত্র এই সংগঠনটির শীর্ষ নেতা আতাউল্লাহ বর্তমানে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে একটি পাহাড়ে আত্মগোপনে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ভাই শাহ আলী। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।
গত ১৬ জানুয়ারি ড্রোন ব্যবহার করে উখিয়ার শরণার্থী ক্যাম্পের আস্তানা থেকে আরসা কমান্ডার আতাউল্লাহর ভাই শাহ আলীকে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তারের পর ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) এসআই মোহাম্মদ রুহুল আজম উখিয়া থানার তার
বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছেন। এছাড়া, অপহরণের অভিযোগে ক্যাম্প পুলিশ মোহাম্মদ সালেহ বাদী হয়ে আরও একটি মামলা করেছেন। এপিবিএন কর্মকর্তার করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শাহ আলী চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানার দেওয়ান বাজার ওয়ার্ডের জয়নাব কলোনির ঠিকানা ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি সংগ্রহ করেছেন। এনআইডিতে সেটি তার স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর- ১৯৭১১৫৯৪ ১২০০০০০১৮।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এ বিষয়ে গতকাল সোমবার রাতে পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি এ বিষয়ে কিছুই অবগত নই। যদি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনও কিছু জানতে চায়, সেক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধান করে আমরা প্রকৃত সত্য জানিয়ে দেব।’ অনেক সময় ভুয়া এনআইডি কার্ড নিয়েও অনেকে ঘুরে বেড়ায় বলে জানান তিনি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এপিবিএন-এর এসপি নাইমুল হক জানান, গত ১৫ জানুয়ারি এক রোহিঙ্গা নাগরিক অপহৃত হয়েছিলেন। ওই ঘটনার তদন্তে নেমে আমরা ড্রোন ব্যবহার করে উখিয়ার কুতুপালং আট নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নৌকার মাঠ এলাকায় বড় ধরনের অপরাধ সংঘটনের জন্য কতিপয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীর অবস্থান শনাক্ত করি। পরদিন ভোররাতে সেখানে অভিযান চালিয়ে চোখ বাঁধা অবস্থায় অপহৃত এক ব্যক্তিকে উদ্ধার এবং শাহ আলীকে আটক করা হয়। সে সময় তার হেফাজত থেকে একটি দেশি অস্ত্র, এক হাজার ইয়াবা ও নগদ এক লাখ দশ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহ আলী নিজেকে আরসা কমান্ডার আতাউল্লাহর আপন ভাই বলে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া, আতাউল্লাহ বর্তমানে মিয়ানমারের একটি পাহাড়ে অবস্থান করছেন বলেও শাহ আলী দাবি করেছেন। আতাউল্লার চেহারার সাথে শাহ আলীর চেহারা গঠনে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। বাকিটা থানা পুলিশ তদন্ত করে নিশ্চিত হবে। বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে তিনি শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছিলেন।
উখিয়া থানার ওসি আহমেদ সঞ্জুর মোরশেদ জানান, পৃথক তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আসামি শাহ আলীকে গতকাল সোমবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাকে হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য রিমান্ড আবেদন দাখিল করা হবে।
এপিবিএনের করা মামলার বিবরণ দিয়ে ওসি সঞ্জুর মোরশেদ আরও জানান, গত ১৬ জানুয়ারি রাতে উখিয়া থানায় করা পৃথক তিনটি মামলায় দুইজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত পরিচয় আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
আসামির তালিকায় যে দু’জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন, উখিয়ার কুতুপালং ছয় নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি-১০ বøকের বাসিন্দা মৃত গোলাম মোহাম্মদের ছেলে শাহ আলী (৫৫) এবং একই ক্যাম্পের এ-১১ বøকের বাসিন্দা মৃত আবুল কালামের ছেলে মোহাম্মদ জোবাইর (২৫)।
মামলার এজাহারে এদের মধ্যে শাহ আলীর কাছ থেকে জব্দকৃত বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডিতে স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডের সিরাজদ্দৌল্লাহ রোডের জয়নাব কলোনি। শাহ আলী এর আগে ২০১৯ সালে রাজধানী ঢাকার হাজারীবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ওই মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের কথা বলে চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্থ আদায় করাই ছিল গ্রেপ্তার হওয়া শাহ আলীর অন্যতম দায়িত্ব। আরসা কমান্ডার আতাউল্লাহর সাথে শাহ আলীর নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। শাহ আলী বেশিরভাগ সময় মিয়ানমারেই অবস্থান করে। নাশকতার বিশেষ কোনও ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ নিয়ে তিনি বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন। শাহ আলীর কাছ থেকে পুলিশ আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু ওমর জুনুনি এখন মিয়ানমারের কোন পাহাড়ে অবস্থান করছেন সে সম্পর্কেও প্রাথমিক ধারণা পেয়েছে।