লোহাগাড়ায় দুবাই প্রবাসীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার

24

লোহাগাড়া প্রতিনিধি

লোহাগাড়ার পুটিবিলা ইউনিয়নের পহরচান্দার পাহাড়ি টিলা এলাকায় মাটিচাপা দিয়ে রাখা মনছুর আলী লেদু (২৭) নামে এক দুবাই প্রবাসীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় তার স্ত্রী রিনা আক্তার (২৩), শাশুড়ী সায়রা বেগম (৪৭) ও শ্যালিকা রুম্মান আক্তারকে (১৬) আটক করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার প্রায় তিন ঘণ্টা অভিযানের পর দুপুর পৌনে ১২টায় মনছুর আলীর লাশটি উদ্ধার করা হয়। তিনি পূর্ব পহরচান্দার সেকান্দর পাড়ার ফয়েজ আহমদের পুত্র ও দুই সন্তানের জনক বলে জানা গেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দুবাই থেকে দেশে আসেন মনছুর আলী। পরদিন ১ মার্চ তিনি নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় ২ মার্চ তার বোন বুলবুল আক্তার বাদী হয়ে লোহাগাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে ৮ মার্চ ৪/৫ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে লোহাগাড়া থানায় একটি অপরহণ মামলা দায়ের করেন বুলবুল আক্তার। মামলাটির তদন্ত করছেন এসআই শরীফুল ইসলাম। জানা গেছে, তদন্তের এক পর্যায়ে এসআই শরীফুল ইসলাম অপহরণ ঘটনার ক্লু উদঘাটন করতে সক্ষম হন। এরপর গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২ টার দিকে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় মাটিচাপা দেওয়া লাশটি উদ্ধার করা হয়।
লোহাগাড়া থানার ওসি মুহাম্মাদ আতিকুর রহমান জানান, গত ১ মার্চ সন্ধ্যা ৬ টা ৪০ মিনিটে পুটিবিলা ইউনিয়নের ফকিরহাট থেকে অজ্ঞাত ৪/৫ জন লোক সিএনজি চালিত ট্যাক্সিযোগে মনছুর আলীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মনছুরের বোন বুলবুল আক্তার বাদী হয়ে ৮ মার্চ লোহাগাড়া থানায় অপহরণ মামলা (নং- ১৫, তারিখ : ০৮/০৩/২০২৩) দায়ের করেন।
তদন্তকালে জানা গেছে আর্থিক লেনদেন, অনৈতিক সম্পর্কের সন্দেহ ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সাথে মনছুর আলীর বিরোধ চলছিল। এর জের ধরেই তাকে অপহরণ করা হতে পারে। এসব তথ্যের সূত্র ধরে তার স্ত্রী রিনা আক্তার, শাশুড়ী সায়রা খাতুন এবং শ্যালিকা রুম্মান আক্তারকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা ভিকটিমের অবস্থান সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করেন। এছাড়া তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে ভিকটিম মনছুর আলীর সাথে কথোপকথনের বিষয় পর্যালোচনা করে পহরচান্দা এলাকায় মনছুর আলীর স্ত্রী, শাশুড়ী ও শ্যালিকাকে নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শিবলী নোমানের তত্ত্বাবধানে লোহাগাড়া থানার ওসি মুহাম্মদ আতিকুর রহমানের নেতৃত্বে এসআই শরীফুল ইসলাম, এসআই যুযুৎসু যশ চাকমা, এসআই মো. নুরুন নবী, এএসআই আলমগীর হোসেন এবং স্থানীয় ২০/২৫ জনসহ লোকালয় থেকে প্রায় তিন মাইল দূরে পুটিবিলা ইউনিয়নের পহরচান্দার দুর্গম পাহাড়ি টিলা এলাকায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এ সময় স্ত্রী, শাশুড়ী ও শ্যালিকার দেওয়া তথ্যমতে দুপুর পৌনে ১২টায় পহরচান্দা পাহাড়ি টিলার পাশে নালায় মাটিচাপা অবস্থায় মনছুর আলীর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে তার ভাই খোরশেদ আলম লাশ শনাক্ত করেন।
লাশের শরীর থেকে চামড়া খসে গেছে। লাশটির সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির সময় মাথার ডান পাশে বড় ধরনের কাটা জখম, দুই কান, নাক, মুখ এবং থুতনি শরীর হতে কেটে বিচ্ছিন্ন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখা যায়। মামলাটি তদন্তাধীন এবং ঘটনায় জড়িত অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
নিহতের আত্মীয় মো. ফোরকান জানান, মনছুর আলী দুবাই প্রবাসী। শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সাথে তার পারিবারিক বিরোধ চলছিল। তার সাথে শ্যালিকার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আমরা এ হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই।
নিহতের বড় ভাই খোরশেদ আলম জানান, আমার ভাই মনছুর দেশে ফেরার পরদিন থেকে নিখোঁজ হয়। শ্বশুর বাড়ির সদস্যদের সাথে তার বিরোধ ছিল। শ্যালিকার সাথে পরকীয়া ছিল। আমরা এ হত্যাকান্ডের বিচার চাই। এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় পুটিবিলা ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোছেন মানিক জানান, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। মনছুর দুবাই প্রবাসী। নিখোঁজের আগের দিন তার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। ১৪ দিন পর তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে, মনছুর আলীর স্ত্রী রিনা আক্তার, শাশুড়ী সায়রা বেগম, শ্যালিকা রুম্মান আক্তারকে আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হবে বলে জানান এসআই শরীফুল ইসলাম।