সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যাওয়া যাদের ঘিরে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়েছিল করোনাভাইরাস আক্রান্ত কি না, তাদের কয়েকজনের নমুনা পরীক্ষা করে এই রোগ পায়নি আইইডিসিআর।
গতকাল মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে বেশ কিছু মৃত্যু নিয়ে জনমনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। তাদের মধ্যে সৎকার হয়ে যাওয়ার আগে আগে তথ্য পেয়ে কয়েকজনের নমুনা সংগ্রহ করেছে আইইডিসিআর। আমরা সেই নমুনা পরীক্ষা করেছি। কারোর দেহেই কোভিড-১৯ এর কোনো সংক্রমণ পাওয়া য়ায়নি। সেজন্য আমরা আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, মৃত্যু হলেই কভিড-১৯ ভেবে আপনারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবেন না’।
এই রোগ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মীরজাদী ফ্লোরা বলেন, ‘যাদের কভিড-১৯ সংক্রমণ থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছি তাদের সবাইকে পরীক্ষা করেই নিশ্চিত করছি রোগীর সংখ্যা’। তবে মৃতদের মধ্যে কতজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে সে তথ্য জানাননি আইইডিসিআরের পরিচালক।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর প্রায় প্রতিদিনই সীমিত আকারে বেড়েছে রোগী। এরমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের আগে করোনাভাইরাস টেস্ট করা হয়নি। আবার জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন। তাদের কেউ কেউ করোনাভাইরাস রোগী সন্দেহে চিকিৎসা পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। কয়েক জায়গায় মৃত ব্যক্তিকে দাফনেও বাধা দেওয়া হয়।
অপরদিকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানোর পাশাপাশি কয়েকটি এলাকা লকডাউন করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে সরকারের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের মুখপাত্র হিসেবে মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা প্রতিনিধি করোনাভাইরাস রোগের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে যে ব্রিফ করেন, তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
তাদের অভিযোগ, সময় মতো টেস্ট না হওয়ায় রোগী শনাক্ত হচ্ছে না। তার দরুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সরকারি হিসাবের আওতায় অনেকেই আসছেন না, অথচ মারা যাচ্ছেন।
এভাবে স্থানীয়দের কাছে সন্দেহভাজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হিসেবে মারা যাওয়া বেশ কয়েকজনের খবর জেলা প্রতিনিধিরা পাঠিয়েছেন।
গত সোমবার সুনামগঞ্জ শহরে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, সর্দিতে আক্রান্ত পঞ্চান্ন বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যুর পর তার স্বামীকে সিলেটে হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। গত ২৫ মার্চ সিলেটে এক ব্যক্তি বাড়িতে মারা যান। এর নয়দিন আগে শ্বাসকষ্ট নিয়ে যুক্তরাজ্যফেরত ছেলের সঙ্গে হাসপাতালে যাওয়ায় তাকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
গতকাল মঙ্গলবারও জ্বর, সর্দি, কাশি ও শাসকষ্ট নিয়ে সিলেটের একটি হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়ার কিছুক্ষণ পর মারা গেছেন এক কিশোরী। ওই কিশোরী প্রায় এক মাস ধরে জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন।
গত ২৮ মার্চ ঢাকা থেকে ‘করোনাভাইরাসের উপসর্গ’ নিয়ে বগুড়ায় ফেরার পর পঞ্চাশ বছর বয়সী এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। এরপর সেখানে ১০টি বাড়ি লক-ডাউন করে দেয় প্রশাসন। ওই ব্যক্তির জানাজায়ও বাধা দিয়েছিল স্থানীয় লোকজন। রবিবার মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় জ্বর আক্রান্ত হয়ে এক শিশু মারা যাওয়ার পর এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়। একই দিন দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়, যিনি জ্বর-সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।
শেরপুরে তিন দিন শ্বাসকষ্টে ভোগার পর সোমবার এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এরপর ওই এলাকার ১০টি বাড়ি ‘লকডাউনে’ রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন। তার নমুনা পাঠানো হয়েছে আইইডিসিআরে। সেদিন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যার এক অটোরিকশা চালক। ২৬ মার্চ শ্বাসকষ্ট নিয়ে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক যুবকের মৃত্যু হয়। তিনি হাসপাতালের আইসোলেশনে ছিলেন। তার নমুনাও আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। ২৫ মার্চ জ্বর-সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক নারীর মৃত্যু হয়। আগের দিন ২৪ মার্চ জামালপুরে শ্বাসকষ্টে বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। তার নমুনাও আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। খবর বিডিনিউজের