রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে পাশে থাকবে চীন

67

চীন সফর দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ইতিবাচক হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সফরের কারণে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে’। গতকাল সোমবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করে বলেছেন, আমরা পরস্পরের সত্যিকারের বন্ধু হয়ে থাকবো। আমরা দুই প্রতিবেশী দেশ উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছি’। ‘তার দেশ সবসময় বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টার পাশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। একই সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে একমত হয়েছেন’- যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে (ডবিøউইএফ) অংশ নিতে এবং চীনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১ জুলাই থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত চীন সফর করেন। সফলের বিভিন্ন দিক নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তার এবারের চীন সফরে দ্বিপাক্ষিক বিষয় ছাড়াও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং চীনা নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এসব আলোচনার সময় সব নেতাই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন এবং সমস্যা সমাধানে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন’।
তিনি চীনের দালিয়ান শহরে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডবিøউইএফ) অ্যানুয়াল মিটিংয়ে যোগদান করেন এবং ‘কো-অপারেশন ইন দ্য প্যাসিফিক রিম’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে ঢাকা এবং বেইজিং’র মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা সংক্রান্ত ৯ টি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার শুরুতেই চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় চীনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান এবং বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারকে রাজি করাতে চেষ্টা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
চীনের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। তিনি উল্লেখ করেন, চীন তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দু’বার মিয়ানমারে পাঠিয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনে তারা আবারও মন্ত্রীকে মিয়ানমারে পাঠাবে’। সরকারপ্রধান বলেন, দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় পাঁচটি বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে।

এগুলো হলো- অর্থনৈতিক বিকাশ এবং বাণিজ্য, প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়, বিসিআইএম বা যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভিসা সংক্রান্ত এবং রোহিঙ্গা ইস্যু।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীনের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় চীনের সমর্থন অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আমরা উভয়ই আশা করি, এই সম্পর্ক আগামীতে আরও গভীর ও জোরদার হবে। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরকালে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশ কিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার ওপরও আমি গুরুত্বারোপ করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীনের প্রতি ঋণচুক্তির শর্তাবলি সহজ করার এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে সঠিক সময়ে তহবিল ছাড়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহŸান জানিয়েছি। চীনের প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়ন, জলবায়ু অভিযোজন কেন্দ্র স্থাপন এবং তিস্তা নদীর সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প বাস্তবায়ন, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার দ্রæতগামী ট্রেন যোগাযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া গতিশীল করতেও চীনের সহায়তা কামনা করেছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের যা করণীয় তা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে চীন :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে যা করণীয় তা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে চীন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রশ্নে চীনা প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের এমন কোনও তথ্য আছে কিনা, যা বাংলাদেশের জন্য সুখবর বিবেচনা করা যেতে পারে? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (চীনা প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, বিষয়টি দেখবেন, বিবেচনা করবেন, এটা কি সুখবর মনে হচ্ছে না? নাকি দুঃখের খবর মনে হচ্ছে?’
তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক যে চীন বরাবরই মিয়ানমারের সঙ্গে আছে। কিন্তু বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা যে একটা সমস্যা, এটা তারা উপলব্ধি করতে পারছেন। তারা সবসময় মনে করছেন বিষয়টির দ্রæত সমাধান হওয়া উচিত। এজন্য তাদের যা করণীয় তারা তা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন’।
যে দামে কিনবো সেই দামেই কি বেঁচবো : গ্যাসের দাম অতিরিক্ত বাড়ানো হলো কিনা এবং এলএনজি আমদানিতে দাম বেশি পড়ছে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এই প্রশ্নটা আসবে আমি জানি। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, আমাদের গ্যাসের প্রয়োজন আছে কিনা। আমরা যদি উন্নয়ন করতে চাই তাহলে এনার্জি একটা বিষয়’। তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য গ্যাস লাগবে, বিদ্যুৎ লাগবে। এলএনজি আমদানিতে দাম বেশি লাগছে এটা স্বাভাবিক। তবে দাম বাড়ানোর পরও ভর্তুকি দিতে হচ্ছে’। তিনি সাংবাদিকদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘তাহলে একটা কাজ করি? যে দামে কিনবো সেই দামে বেচবো?’
তিনি বলেন, ‘আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন- ২০০৮ সাল পর্যন্ত জিডিপি কত বেড়েছে। আমরা ৮ দশমিক ১ ভাগ পর্যন্ত জিডিপি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা এটা পেরেছি কারণ, এনার্জি ক্ষেত্রে যথেষ্ট মনোযোগ দিয়েছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছি। তবে গ্যাস আমদানি করতে হচ্ছে। এলএনজি আমদানিতে খরচ বেশি পড়ে। গ্যাসের দাম না বাড়ানোর দুটি উপায় আছে। আমরা জিডিপি না বাড়াই, এলএনজি আমদানি করবো না, গ্যাসের দামও বাড়বে না। আরেকটি হলো উন্নয়ন হবে না। আর যদি সত্যি অর্থনৈতিক উন্নতি চান, তাহলে এটা মেনে নিতেই হবে’।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘শুধু আমাদের দেশে না, বিদেশেও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। ২০০০ সালে আমার কাছে একটা প্রস্তাব এসেছিল গ্যাস বিক্রি করবো কিনা, আমি রাজি হইনি। এর খেসারত দিতে হয়েছিল। আমি ২০০১ সালে ভোট বেশি পেয়েও কিন্তু ক্ষমতায় আসতে পারিনি। খালেদা জিয়া মুচলেকা দিয়েছিল, ক্ষমতায় আসলে গ্যাস বিক্রি করবে। আমি চাই গ্যাস আমার দেশের মানুষের কাজে লাগবে। দেশের জন্য রিজার্ভ রাখবো। তারপর যদি বাঁচে তাহলে বিক্রি করবো। তবে কত গ্যাস আছে আমাকে জানতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে হবে। এর জন্য এলএনজি আমদানি করতে হবে’।
তিনি বলেন, ‘প্রতি ঘনমিটার এলএনজি আমদানিতে আমাদের খরচ পড়ে ৬১.১২ টাকা। সেটা এখন আমরা কত টাকায় বিক্রি করছি? এর চেয়ে কম দামে কি করে দেওয়া যায়? অনেকে আন্দোলন করে বলেছেন ভারতে দাম কমেছে। ভারতে এলাকা ভেদে গৃহস্থালির জন্য গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার ৩০ থেকে ৩৭ টাকা। বাংলাদেশ দিচ্ছে ১২.৬০ টাকা। শিল্পে আমরা দিচ্ছি ১০.৭০ টাকা, ভারত দিচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা। বাণিজ্যিকে আমরা দিচ্ছি ২৩ টাকা। ভারত দিচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা। ভারতে প্রতি বছর দুইবার গ্যাসের দাম এডজাস্ট করে, এপ্রিলে আর অক্টোবরে। সেই নীতিতেই তারা চলে। আমরা ৬১.১২ টাকা নিয়ে এসে এলএনজি দিচ্ছি ৯.৮০ টাকায়। তারপরেও আন্দোলন!’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৪-০৫ সালে ভারত পাইপলাইনে করে মিয়ানমারের গ্যাস নিতে চেয়েছিল বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে। খালেদা জিয়া তা দেয়নি। আমি হলে দিতাম, আর আমার ভাগটা রেখে দিতাম। তাহলে এলএনজি আমদানি না করলেও চলতো। নেতৃত্ব যদি ভুল করে, তার খেসারত জনগণকে দিতে হয়’। তিনি বলেন, ১০ হাজার কোটি টাকার ওপর আমাদের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। দাম বাড়ানোর পরও ভর্তুকি দিচ্ছি। তাহলে যে দামে কিনবো সেই দামে বিক্রি করি? ৯ টাকারটা ৬১ টাকা করে নেবো? আমাদের আর ভর্তুকি দিতে হবে না! বহুদিন পর হরতাল দিলেন তো, এটা পরিবেশের জন্য ভালো’।
রাখাইনকে বাংলাদেশের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান : মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশকে বাংলাদেশের ভূখÐে যুক্ত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এক কংগ্রেসম্যানের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ধরনের কথা বলাকে অত্যন্ত গর্হিত ও অন্যায় কাজ জানিয়ে তিনি বলেছেন, আমরা এই অঞ্চলে শান্তিতে বিশ্বাসী। কারও ভূখÐ আমাদের লাগবে না।
সংবাদ সম্মেলনে মাসুদা ভাট্টি মার্কিন কংগ্রেসে বেন শারমেনের প্রস্তাবের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ওই কংগ্রেসম্যান প্রস্তাব দিয়েছেন রাখাইনের যে মানচিত্রটি আছে তা বাংলাদেশের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হোক। এ বিষয়ে সুদানের উদাহরণ টেনে ওই কংগ্রেসম্যান প্রশ্ন রেখেছেন, অন্যান্য জায়গায় হলে এখানে হবে না কেন? এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মতামত জানতে চান তিনি। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, আমাদের যে সীমানা আছে আমরা তাতেই খুশি। এর বাইরে আর কোনও প্রদেশ জুড়ে দেওয়ার ব্যাপার আমরা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করি। এটা আমরা কখনোই নেবো না। মিয়ানমার তার সার্বভৌমত্ব নিয়ে থাকবে, সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সীমানা জুড়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ আসে কেন? এ ধরনের কথা বলা অত্যন্ত গর্হিত ও অন্যায় কাজ বলে আমি মনে করি।
এ সময় ওই প্রস্তাবকারী কংগ্রেসম্যানকে যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে রাখাইন প্রদেশে সার্বক্ষণিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, সেটাকে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করবো কেন? এটা আমরা কখনোই করবো না’।
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী দেশ। সেখানে যখন এ ধরনের একটা ঘটনা ঘটেছে, সেখানকার লোকজন আমাদের কাছে আশ্রয় চেয়েছে, মানবিক কারণে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। আশ্রয় দেওয়ার অর্থ এটা নয়, আমরা তাদের রাষ্ট্রের একটা অংশ নিয়ে চলে আসবো। এই মানসিকতা আমাদের নেই। এটা আমরা চাই না। প্রত্যেকটা দেশ তাদের সার্বভৌমত্ব নিয়ে থাকবে, এটাই আমি চাই’।
এ অঞ্চলে শান্তি কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমরা শান্তি চাই। যুক্তরাষ্ট্র যেখানেই সমস্যা সমাধানের মোড়লগিরি করেছে সেখানেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাদের রাখাইনকে জুড়ে দেওয়ার পরামর্শ না দিয়ে মিয়ানমার কিভাবে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে, সে বিষয়ে কাজ করার তাগিদ দেন। তিনি বলেন, এসব কথা না বলে বরং মিয়ানমার কিভাবে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে, এই কংগ্রেসম্যানদের সে বিষয়ে কাজ করা উচিত।
ধর্ষণের বিরুদ্ধে নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও সোচ্চার হওয়ার আহŸান : ধর্ষণকারীদের ব্যাপারে কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিশু ধর্ষণের মতো মহা জঘন্য কাজ যারা করছে তারা মানুষ না। এদের বিরুদ্ধে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার আমরা সবই নেবো। শিশু ধর্ষণ ঠেকাতে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চেয়ে মাসুদা ভাট্টির করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে ধর্ষণের মতো ঘটনা পৃথিবীর সব দেশেই ঘটে। আমাদের দেশে একটা সময় ছিল যে সামাজিক কারণে মেয়েরা বিষয়টা বলতেই পারতো না। এখন তারা সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে এ বিষয়ে কথা বলছে। সোচ্চার হচ্ছে। আমরা এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। সঙ্গে সঙ্গে ধর্ষকদের ধরা হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ প্রসঙ্গে ওয়ারিতে শিশু ধর্ষণের ঘটনার পরপর ধর্ষককে গ্রেপ্তার করার উদাহরণ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের মহা জঘন্য কাজ যারা করছে এরা মানুষ না। এদের বিরুদ্ধে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার আমরা সবই নেবো। এসময় ধর্ষণের বিরুদ্ধে নারীদের পাশাপাশি পুরুষ সমাজকেও আওয়াজ তোলার আহŸান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু নারীদেরই প্রতিবাদ করতে হবে কেন। যারা ধর্ষণ করছে তাদের স্বজাতি হিসেবে পুরুষদের এর বিরুদ্ধে এগিয়ে আসা উচিত।
চাকরির বয়স ৩৫ না করার পক্ষে যা বললেন: সরকারি চাকরিতে প্রবেশে ৩৫ বছর বয়স-সীমা না করার পক্ষে বেশ কিছু যুক্তি তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কাজ করার একটা সময় থাকে। একটা এনার্জি থাকে’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন জন্ম নিবন্ধন করা হয়, বয়স লুকানো যায় না। আমরা যদি ধরেই নেই, একজন ছেলে বা মেয়ে যদি নিয়মিত পড়াশোনা করে, যদি একটু দেরিও হয়, তাহলেও ১৬ বছরে এসএসসি পাস করে। করে না? এরপর দুই বছর পর অর্থাৎ ১৮ বছর বয়সে এইসএসসি পাস করে। এরপর অনার্স ৪ বছর, মাস্টার্স ১ বছর। ২৩ বছরের মধ্যে মাস্টার্স কমপ্লিট হয়ে যায়। এরপরই সরকারি চাকরির জন্য পরীক্ষা দিতে পারে। এরপরও যদি এক-দুই বছর দেরিও হয়, তাহলেও ২৪/২৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে’।
৩৫তম বিসিএসের ফল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৩ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে যারা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে, তাদের পাসের হার হলো ৪০ দশমিক ৭ ভাগ, ২৫ থেকে ২৭ বছর যাদের বয়স, তাদের পাসের হার হলো ৩০ দশমিক ২৯ ভাগ। আর ২৭ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের পাসের হার হলো ১৩ দশমিক ১৭। ২৯ বছরের বেশি বয়সীদের পাসের হার ৩ দশমিক ৪৫ ভাগ’।
৩৬তম বিসিএসের ফল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৩ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের পাসের হার ৩৭ দশমিক ৪৫ ভাগ। ২৫ থেকে ২৭ বছর বয়সীদের পাসের হার ৩৪ দশমিক ৭৮ ভাগ। ২৭ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের পাসের হার ১৪ দশমিক ৮৯ ভাগ। ২৯ বছরের বেশি বয়সীদের পাসের হার ৩ দশমিক ২৩ ভাগ।’ ৩৭তম বিএসএসের ফল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৩ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের পাসের হার ৪৩ দশমিক ৬৫ ভাগ। ২৫ থেকে ২৭ বছর বয়সীদের পাসের হার ২৩ দশমিক ৩৫ ভাগ। ২৭ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের পাসের হার ৭ দশমিক ২০ ভাগ। ২৯ বছরের বেশি বয়সীদের পাসের হার ০ দশমিক ৬১ ভাগ’।
বিসিএসের তিন পর্বের ফল বিশ্লেষণ করে শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন, ‘কোনটা গ্রহণ করবো এখন বলুন। আমি আর কিছু বলতে চাই না, আমি কেবল হিসাবটা দিলাম। চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ পর্যন্ত করলে অবস্থাটা ঠিক কি দাঁড়াবে, আমাকে একটু বুঝিয়ে বলুন। কারণ তখন তো বিয়েশাদি হবে, ছেলে-মেয়ে হবে, ঘর সামলাতে হবে, বউ সামলাতে হবে আর বই কিনতে হবে। তখন তো আরও করুণ অবস্থা হয়ে যাবে। কাজ করার একটা সময় থাকে। একটা এনার্জি থাকে। এই যে একটা দাবি তোলা, এখন দাবি তোলার জন্য যদি দাবি তোলা হয়, আমার কিছু বলার নেই। এই দাবি তোলার জন্য কোনও না কোনও জায়গা থেকে নিশ্চয় কোনও প্রেরণা পাচ্ছে’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৩৫ বছর বয়সে পরীক্ষা দিলে এর রেজাল্ট, ট্রেনিং, ট্রেনিং শেষ হতে যদি আরও দুই বছর লাগে, তাহলে ৩৭ বছর গেলো। ৩৭ বছরে চাকরি হলে কি হবে? চাকরির বয়স কিন্তু ২৫ বছর না হলে ফুল পেনশন পাবে না। ঠিক আছে, পেনশন না পেলো। তাহলে একটা সরকার কাদের দিয়ে চালাবো? আমরা সবসময় বলি, যারা মেধাবী, তরুণ, কর্মক্ষম তাদের দিয়েই তো আমাদের দেশের উন্নয়ন কাজ করবো। কিন্তু বয়স বাড়লে তো কাজের গতিও কমে। এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। যাই হোক, আমি শুধু হিসাবটাই দিলাম, দেশবাসী বিচার করুক, আপনারও বিচার করুন’।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতি করেছে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যথেষ্ট উন্নতি করেছে। ওয়ার্ল্ড কাপ পাওয়া একেকটা নামিদামি দলের সঙ্গে খেলা, সেটা কিন্তু কম কথা নয়। কিন্তু সেখানে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স অত্যন্ত চমৎকার ছিল। আমরা যে খেলতে পেরেছি বা এতটা যেতে পেরেছি, এটা অনেক বড় কথা। আমাদের যারা খেলোয়াড়, যেমন সাকিব আল হাসান, সে তো বিশ্বে একটা স্থান করে নিয়েছে। মোস্তাফিজ একটা স্থান করে নিয়েছে’।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স নিয়ে সাংবাদিক জুলফিকার রাসেলের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খেলা এমন একটা জিনিস, অনেক সময় ভাগ্যও কিন্তু লাগে। সবসময় যে একই রকম হবে, তা নয়। খেলায় সাহসী মনোভাব নিয়ে মোকাবিলা করতে পারা-আমি এটা প্রশংসা করি। এতগুলো দল খেললো, তার মধ্যে মাত্র চারটি দল সেমিফাইনালে উঠেছে। তার মানে কি বাকিরা সবাই খারাপ খেলেছে? একেকটা জাঁদরেল জাঁদরেল দল, দীর্ঘদিন ধরে যারা খেলে খেলে অভ্যস্ত, তাদের সঙ্গে মোকাবিলা করে খেলায় ছেলেদের কনফিডেন্সের কোনও অভাব দেখিনি’। তিনি বলেন, আমি নিজে খেলা দেখেছি। আমাদের ছেলেদের ধন্যবাদ জানাবো, তারা যথেষ্ট সাহসের পরিচয় দিয়েছে। তাদের ভেতর একটা আলাদা আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। ধীরে ধীরে আরও উন্নতি হবে।