রোহিঙ্গা গণহত্যার কথা অস্বীকার করলেন সু চি

16

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের পক্ষে দেশটির এজেন্ট ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি বলেছেন, তার দেশের সেনাসদস্যরা যুদ্ধাপরাধ করে থাকলে তা মিয়ানমারের দেশীয় তদন্ত ও বিচারব্যবস্থায় নিষ্পত্তি করা হবে। এটিকে আন্তর্জাতিকীকরণের সুযোগ নেই। তার দাবি, ১৯৪৮-এর গণহত্যা সনদ এখানে প্রযোজ্য নয়। গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দেওয়া বক্তব্যে সু চি এসব কথা বলেন। আদালতে অভিযোগকারী গাম্বিয়ার বিভিন্ন তথ্যকে বিভ্রান্তিকর বলে মন্তব্য করেছেন।
রাখাইনে সেনা অভিযানে যা ঘটেছে, গণহত্যার সংজ্ঞার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ কি না- সেই প্রশ্ন তুলে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি বলেন, জাতিসংঘের আদালতে গাম্বিয়ার করা মামলা ‘ভুল দিক’ নির্দেশ করছে।
রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করেই তিনি বলেন, রাখাইনে সেনা অভিযানে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ হয়ত উড়িয়ে দেওয়া যায় না, তবে তার পেছনে গণহত্যার উদ্দেশ্য ছিল- এমন ধরে নেওয়াটাও মিয়ানমারের জটিল বাস্তবতায় ‘ঠিক হবে না’।
দুই বছর আগে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে সেনাবাহিনীর অভিযানে যে বর্বরতা চালানো হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে ১৯৮৪ সালের আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশন ভঙ্গ করার অভিযোগে মিয়ানমারকে জাতিসংঘের এই সর্বোচ্চ আদালতে এনেছে পশ্চিম আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া।
মঙ্গলবার দ্য হেগের পিস প্যালেসে গাম্বিয়ার পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করে আইনমন্ত্রী আবুবকর তামবাদু মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতার চিত্র তুলে ধরেন এবং গণহত্যা বন্ধের দাবি জানান।
এরপর বুধবার মিয়ানমারের পক্ষে বক্তব্য দিতে এসে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর সু চি দাবি করেন, রাখাইনের পরিস্থিতি সম্পর্কে গাম্বিয়া যে চিত্র এ আদালতে উপস্থাপন করেছে তা ‘অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর’।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু স্থাপনায় ‘বিদ্রোহীদের’ হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। সেই সঙ্গে শুরু হয় বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রোহিঙ্গাদের ঢল।
এরপর গত দুই বছরে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। তাদের কথায় উঠে আসে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ, যাকে জাতিগত নির্মূল অভিযান বলে জাতিসংঘ। খবর বার্তা সংস্থার
এ বিষয়ে মিয়ানমার এতদিন যা বলে আসছে, সেই একই কথা আইসিজের বিচারক প্যানেলের সামনে নতুন করে বলেন সু চি।
তিনি বলেন, স্থানীয় সশস্ত্র গ্রæপ হামলা চালানোর পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ওই অভিযান চালিয়েছিল, কোনো জাতি বা ধর্মীয় স¤প্রদায় এর লক্ষ্য ছিল না।
তবে ওই অভিযানের ফলে রাখাইনের বহু মানুষ যে বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং তারা যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে সে কথা স্বীকার করে সু চি বলেন, যদি কোনো সেনাসদস্য নিয়ম ভেঙে থাকে, তাহলে সামরিক আদালতে তার বিচার হতে পারে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় আন্তর্জাতিক আদালতে এনে সমস্যার সমাধান করা যাবে না।
রাখাইন বা অন্য কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা মিয়ানমার প্রশ্রয় দেবে না দাবি করে দেশটির নেত্রী বলেন, তার সরকার রাখাইনের সব পক্ষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর। রাখাইনের বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের বিষয়েও মিয়ানমার প্রতিশ্রæতিবদ্ধ।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক কোনো হস্তক্ষেপ হলে তা মিয়ানমারে শান্তি ও বাস্তুচ্যুতদের ফেরার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে বলেও সতর্ক করেন দেশটির স্টেট কাউন্সিলর।
গত মাসে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন’র (ওআইসি) পক্ষে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চালানো গণহত্যার ঘটনায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে গাম্বিয়া। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইসিজে আয়োজিত শুনানির প্রথমদিনে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) গাম্বিয়া যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। গতকাল বুধবার মিয়ানমার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। আজ শুনানির শেষ দিনে প্রথমে গাম্বিয়া এবং পরে মিয়ানমার যুক্তিখন্ডন করবে।