রিটার্ন জমায় বিশেষ সুযোগ থাকলেও জরিমানা নিয়ে দুশ্চিন্তা

11

ঢাকা প্রতিনিধি

নতুন করদাতাদের রিটার্ন জমায় বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবারের বাজেটে। তাদের জন্য চলতি অর্থবছরের বাজেটে ‘কর দিবস’-এর সংজ্ঞা সংশোধন করেছে এনবিআর। ব্যক্তি পর্যায়ে যিনি আগে কখনও রিটার্ন দাখিল করেননি, তার জন্য আয়বর্ষ শেষ হবে পরবর্তী ৩০ জুন। অর্থাৎ ওই সময়ের মধ্যে যে কোনও দিন রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। তবে পুরনো করদাতাদের আগের মতো ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে হবে।
তবে এতে অনেক করদাতা উৎসাহিত হলেও দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে জরিমানা নিয়ে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জারিকৃত আয়কর পরিপত্রে বিষয়টি স্পষ্ট না করায় মাঠপর্যায়ের কর কর্মকর্তারা দ্বিধায় পড়েছেন।
মাঠপর্যায়ের একাধিক কর কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, নতুন করদাতাদের রিটার্ন জমার বিষয়ে এবারের পরিপত্রে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এ ধরনের করদাতাদের জরিমানা করা হবে নাকি জরিমানা ছাড়াই রিটার্ন নিষ্পত্তি করা হবে, তা নিয়ে একেক কর অঞ্চলে একেক ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। অনেক করদাতা আসছেন যারা রিটার্ন দিতে চাইছেন; কিন্তু জরিমানার কথা শুনে তারা আঁতকে উঠছেন। এর মধ্যে মহিলা করদাতাদের সংখ্যাই বেশি। তাছাড়া কর কর্মকর্তারাও এ ধরনের কেস সুরাহা করতে বিব্রতবোধ করছেন।
বর্তমানে প্রায় ৭৮ লাখ টিআইএনধারী রয়েছেন। কিন্তু এদের মধ্যে রিটার্ন জমা দেন ২৫ লাখের মতো। চলতি বাজেটে এ ধরনের করদাতাদের রিটার্ন জমায় উৎসাহিত করতে ‘ট্যাক্স ডে’-এর সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সেবায় টিআইএনের পরিবর্তে রিটার্ন জমার প্রাপ্তি স্বীকারপত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গ্রাহকদের প্রাপ্তি স্বীকারপত্র জমা দিতে এসএমএস ও ই-মেইলে জানিয়ে দিচ্ছে। এ কারণে বাধ্য হয়েই অনেকে রিটার্ন জমা দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু জরিমানার ভয়ে অনেকেই রিটার্ন দিতে অনাগ্রহী হয়ে উঠছেন।
করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও রিটার্ন জমা দিলে জরিমানা, সরল সুদ ও বিলম্ব সুদ আরোপের বিধান রয়েছে। আয়কর অধ্যাদেশের ১২৪ ধারায় বলা আছে, করদাতা যদি কোনো কারণ ছাড়াই নির্দিষ্ট সময়ে রিটার্ন দাখিল না করেন, আবার এজন্য অনুমোদনও না নেন, সেজন্য তার পূর্ববর্তী বছর প্রদেয় করের ১০ শতাংশ বা ১ হাজার টাকার মধ্যে যেটি বড় অঙ্ক, ওই পরিমাণ অর্থ জরিমানা হবে। সেই সঙ্গে যতদিন দেরি হবে, প্রতিদিনের জন্য ৫০ টাকা জরিমানা আদায়ের বিধান রয়েছে।
এবারের বাজেটে আয়কর আইনে যত পরিবর্তন আনা হয়, পরিপত্রের মাধ্যমে সেগুলোর ব্যাখ্যা স্পষ্ট করা হয়। পরিপত্রে বলা হয়েছে, নতুন করদাতারা ৩০ জুন পর্যন্ত যে কোনোদিন সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। তবে আগে টিআইএন নিয়েছেন, করযোগ্য আয় ছিল, কিন্তু রিটার্ন জমা দেননি-এমন করদাতারাও একসঙ্গে বিগত বছরের রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে চলতি করবর্ষের (২০২২-২৩) রিটার্ন সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে জমা দেওয়া যাবে। আর বিগত করবর্ষের রিটার্ন সাধারণ পদ্ধতিতে জমা দিতে হবে। বিপত্তি এখানেই! সাধারণ পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা দিলে নিয়ম অনুযায়ী সেই রিটার্ন অ্যাসেসমেন্ট করা হয়। অর্থাৎ রিটার্নে ঘোষিত করদাতা আয়-ব্যয়ের তথ্য, জীবনযাত্রার মান ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের সঠিকতা যাচাই করা হয়। উপকর কমিশনার করদাতার কাগজপত্র যাচাই করে দেখতে পান, করদাতার আগেই রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল; কিন্তু রিটার্ন জমা দেননি। সেক্ষেত্রে কর কর্মকর্তার জরিমানা করার আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে।