যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে কারা আসছেন

18

আওয়ামী লীগের সহযোগী দুই সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন নেতৃত্ব নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। সংগঠন দুটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে কে আসছেন সেই আলোচনা রয়েছে সবার শীর্ষে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর নেতাদের দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার যে অভিযোগ উঠেছে, এতে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতা সবার শীর্ষে। এর ফলে এ দুটি সংগঠনের নেতৃত্বে ব্যাপক পরিবর্তন আসার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সংগঠন দুটির কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সদস্য পর্যন্ত অনেকেই বাদ পড়বেন। এর পরিবর্তে নেতৃত্বে আসবেন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতারা। তবে নেতৃত্বে কারা দায়িত্ব পাবেন সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যাকে যোগ্য ও দক্ষ মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দেবেন।
আগামী ২৩ নভেম্বর যুবলীগের কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। এরইমধ্যে যুবলীগের নেতৃত্বের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ বছর। এই বয়সসীমার উপরে কেউ দলটির নেতৃত্বে আসতে পারবেন না। যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছেন তাদের মধ্যে দলের চেয়ারম্যান ওমার ফারুক চৌধুরীকে আগেই বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রেসিডিয়াম, সাধারণ সম্পাদক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকের অনেকেই বয়সের কারণে নতুন কমিটি থেকে বাদ পড়বেন। তবে শুধু বয়সই নয়, যারা দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তারা আর কমিটিতে থাকতে পারবেন না। এই বিষয়টি কঠোরভাবে পর্যালোচনা করে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। বিতর্কিতদেরকে বাদ দিয়ে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদেরকে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনা হবে।
নতুন কমিটিতে যুবলীগের চেয়ারম্যান পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজুলল হক মণির বড় ছেলে ফজলে শামস পরশ। শেখ ফজলুল হক মণির হাত ধরেই যুবলীগ যাত্রা শুরু করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এই সময় শেখ ফজলুল হক মণিও শহীদ হন। এছাড়া সভাপতি পদে আতাউর রহমান এবং অ্যাডভোকেট বেলাল হোসাইনের নাম আলোচনায় রয়েছে।
সাধারণ সম্পাদক পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি ও সুব্রত পাল অন্যতম। মহিউদ্দিন আহমেদ মহি এর আগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া আলোচনায় আছে সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম ও ফারুক হাসান তুহিনের নাম। এদের পাশাপাশি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর ব্যাপারীর নামও আলোচনায় রয়েছে।
এ বিষয়ে মহিউদ্দিন আহমেদ মহি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সংগঠনের আদর্শিক ও সাংগঠনিক নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি সংগঠনের স্বার্থে যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দেবেন।
এদিকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের বয়সের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও তরুণ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতাদেরকেই এই সংগঠনেরও দায়িত্ব দেওয়া হবে। যারা দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগে তাদের স্থান হবে না। এই সংগঠনেরও সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছারকে এরইমধ্যে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ অনেকেই বাদ পড়বেন। আগামী ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
এ সংগঠনের সভাপতি পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- বর্তমান সহ-সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ। তিনি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া সহ-সভাপতি মতিউর রহমান মতি, মঈন উদ্দিন মঈন এবং গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চুর নাম আলোচনায় আছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে যাদের নাম জোর আলোচনায় আছে তারা হলেন- বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা শেখ সোহেল রানা টিপু ও সাজ্জাদ সাকিব বাদশা। টিপু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি এবং বাদশা একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে পরিচ্ছন্ন ছাত্রনেতা হিসেবে এদের দুইজনের পরিচিতি রয়েছে। এছাড়া আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েলের নামও শোনা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে শেখ সোহেল রানা টিপু বাংলানিউজকে বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি। শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সংগঠনে কাজ করি। নেত্রী যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকে দায়িত্ব দেবেন।
এদিকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতির আহ্বায়ক করা হয়েছে সংগঠনের সহ-সভাপতি নির্মল গুহকে। আর সংগঠনের আরেক সহ-সভাপতি গাজী মেসবাউল হক সাচ্চুকে সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।