মোবাইল ব্যাংকিংয়ে হুন্ডি হচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার

17

পূর্বদেশ ডেস্ক

হুন্ডির কারণে কত বিদেশি মুদ্রা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে, কাদের মাধ্যমে এই মুদ্রা পাচার হচ্ছে, তার একটি ধারণা পাওয়া গেল এরকম একটি চক্রের ১৬ সদস্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) হাতে ধরা পড়ার পর। সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলছেন, বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায়সহ বিভিন্ন মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) অন্তত পাঁচ হাজার এজেন্ট হুন্ডি চক্রে জড়িত। আর এদের কারণে বছরে আনুমানিক ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হয়। খবর বিডিনিউজের
দেশে ডলারের দামে অস্থিরতা শুরুর পর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে সিআইডি। এর অংশ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে তিন দফা যৌথ অভিযান চালিয়ে ওই ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিট। গ্রেপ্তাররা হলেন হুন্ডি এজেন্ট আক্তার হোসেন (৪০),দিদারুল আলম সুমন (৩৪), খোরশেদ আলম ইমন (২২) এবং এমএফএস এজেন্ট রুমন কান্তি দাস জয় (৩৪), রাশেদ মনজুর ফিরোজ (৪৫), মো. হোসাইনুল কবির (৩৫), নবীন উল্লাহ (৩৭), মো. জুনাইদুল হক (৩০), আদিবুর রহমান (২৫), আসিফ নেওয়াজ (২৭), ফরহাদ হোসাইন (২৫), আবদুল বাছির (২৭), মাহবুবুর রহমান সেলিম (৫০), আব্দুল আউয়াল সোহাগ (৩৬), ফজলে রাব্বি (২৭) ও শামীমা আক্তার (৩২)।
বৃহস্পতিবার ঢাকার মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ করে গত ৪ মাসে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা তাদের মাধ্যমে পাচার হওয়ার তথ্য পেয়েছেন তারা। আর সাইবার ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে সিআইডি ৫ হাজারের বেশি এজেন্টের সন্ধান পেয়েছে, যারা এমএফসের মাধ্যমে হুন্ডির কারবারে জড়িত।
মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সংঘবদ্ধ এই চক্র অবৈধভাবে হুন্ডির মাধমে বিদেশে অর্থপাচার করছে। আবার বিদেশে অবস্থানরত ওয়েজ অর্নাদের কষ্টার্জিত অর্থ বিদেশ বাংলাদেশে না এনে স্থানীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ করছে। প্রাথমিক পর্যায়ে বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায় এর বহু এজেন্ট এই অবৈধ হুন্ডি ব্যবসার সাথে জড়িত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।’
সিআইডি প্রধান হিসাব দেন, এই পাঁচ হাজার এমএফএস এজেন্টের মাধ্যমে চার মাসে হুন্ডি হয়েছে আনুমানিক পঁচিশ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আনা আসায় ওই পরিমাণ রেমিটেন্স থেকে বাংলাদেশ সরকার বঞ্চিত হয়েছে। চার মাসের ওই তথ্য ধরে হিসাব করে সিআইডি বলছে, এসব এমএফএস এজেন্টের মাধ্যমে বছরে হুন্ডি হয়ে দেশে আসছে আনুমানিক পঁচাত্তর হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, সরকার প্রায় ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসীরা ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন, যা দেশের মোট জিডিপির ৭ শতাংশের মত। ওই চক্রটি কীভাবে কার্যক্রম চালায় তারও একটি ধারণা দেওয়া হয় সিআইডির সংবাদ সম্মেলনে।
মোহাম্মদ আলী বলেন, হুন্ডিচক্রের সদস্যরা প্রবাসে বাংলাদেশির কাছ থেকে বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ করেন দেশে তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা বিদেশি মুদ্রা না পাঠিয়ে সমমূল্যের বাংলাদেশি টাকা দেশে পরিবারকে বুঝিয়ে দেন। তাতে দেশ বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা থেকে বঞ্চিত থাকে। সিআইডি বলছে, হুন্ডিচক্র কাজটি করে তিনটি গ্রæপে বিভক্ত হয়ে। প্রথম গ্রæপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ করে।
দ্বিতীয় গ্রæপ কাজ করে দেশে। হুন্ডির সমপরিমাণ অর্থ তারা বাংলাদেশি টাকায় নির্দিষ্ট মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস এজেন্টদের দেয়। ওই এমএফএস এজেন্টরা হল তৃতীয় গ্রæপ। হুন্ডি হয়ে তাদের হাতে আসা টাকা তারা দেশে নির্দিষ্ট ফোন নম্বরে পরিশোধ করে। আবার দেশ থেকে যখন টাকা পাচার হয়, এর ঠিক উল্টো প্রক্রিয়া চলে। এসব চক্র অবৈধভাবে এমএফএস এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হুন্ডি করছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এমএফএস এর এজেন্টদের সহযোগিতায় পাচারকারীরা বিদেশে স্থায়ী সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, মাদক কেনাবেচা, স্বর্ণ চোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসাসহ প্রচুর অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করছে।’
এই অবৈধ লেনদেনে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস কোম্পানিগুলো কতটা দায়ী- এমন প্রশ্নে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা দেখবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তারা এজেন্ট। তাই কোম্পানিরগুলোর এজেন্ট নিয়োগে এবং মনিটরিংয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। সিআইডি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবে।’