মোতাহেরুল ইসলাম জেল নির্যাতনেও রাজপথ ছাড়েননি

33

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পদে পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্ষীয়ান এ নেতাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করার সম্মতি দেন বলে গণমাধ্যমে আসে। একই দিন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়ার স্বাক্ষরিত চিঠিতে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়েছে বলে জানানো হয়। এ চিঠি পেয়ে গতকালই তিনি প্রথম দলীয় কার্যালয়ে শান্তি সমাবেশে সভাপতিত্ব করেছেন।
মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী দীর্ঘ ৫৭ বছর ধরে বিভিন্ন পদে থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতা হিসেবে দক্ষিণ জেলার রাজনীতির রাজপথকে আলিঙ্গন করেছিলেন। দীর্ঘ পথচলায় কয়েকবার কারাবরণ করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে হাজীক্যাম্পে টর্চার সেলে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। জেল-নির্যাতনেও রাজপথ ছেড়ে যাননি এ নেতা। পটিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি থেকে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী।
জানা যায়, পটিয়া কলেজ থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। ১৯৬৬ সালে পটিয়া কলেজ ছাত্রলীগ করতেন। কিন্তু সেখানে কমিটি না থাকায় পটিয়া থানা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। এরপর থেকেই সার্বক্ষণিক আন্দোলন-সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন তিনি। ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে অবিভক্ত পটিয়া যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন। ১৯৭৫ সালে ৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হন।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী সে সময়ের ঘটনা তুলে ধরে বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে তৎকালীন হাজীক্যাম্পে টর্চার সেলে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। সে সময় আমার সাথে বাঁশখালীর সাবেক সাংসদ সুলতান উল কবির চৌধুরী ছিলেন। উনি মহানগর যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। মৌলভী সৈয়দ ভাই দক্ষিণ জেলা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মোছলেম ভাই দক্ষিণ জেলা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আমি গ্রেপ্তার হলে রমজান মাসে হাজীক্যাম্পে নিয়ে টর্চার করে। সে সময়ের টর্চারে দোহাজারির মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের খান খসরু মারা যান।
তিনি বলেন, আমাদেরকে মারধর করে অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা করে। সুলতান ভাই ব্যাপক টর্চারে মানসিক ভারসাম্য হারান। আবু তাহের মারা গেলে আমাদের ছেড়ে দেয়। পরে আবারো গ্রেপ্তার করে। আমি প্রায় এক বছর জেলে ছিলাম। ১৯৭৫ সালে দুইবার, পরবর্তীতে একবার গ্রেপ্তার হই। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে এখনো কান্না পায়।
বর্ষীয়ান এ নেতা বলেন, ১৯৮৫-৯১ সাল পর্যন্ত পটিয়া থানা (কর্ণফুলীসহ) আওয়ামী লীগ সভাপতি ছিলাম। বাবু ভাই, মোছলেম ভাইয়ের কমিটির ১৯৯১ সালে জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক ছিলাম। ১৯৯৬ সালে সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরবর্তীতে সহ-সভাপতি হই। সর্বশেষ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগকে একটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে আমি সকলের সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।