মৃত্যুর অপেক্ষায় ১১০০ গাছ!

47

রাহুল দাশ নয়ন

‘গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান।’ সড়কের পাশে লাইটপোস্টে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এমন স্লোগান সম্বলিত সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। অথচ কালুরঘাট সেতুর বোয়ালখালী অংশ থেকে শাকপুরা ইউনিয়নের মিলেটারি পুল পর্যন্ত আরাকান সড়কের দুই পাশের গাছগুলো কাটতে মহা আয়োজন চলছে। নানা প্রজাতির প্রায় ১১০০ গাছ কাটার প্রস্তুতি হিসেবে সেগুলো লাল কালিতে চিহ্নিত করা হয়েছে। গাছগুলো যেন মৃত্যুর প্রহর গুনছে। স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল গাছগুলো কাটতে এমন আয়োজন করলেও তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বন বিভাগ ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। এসব গাছ কাটার আয়োজন নিয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভাতেও আলোচনা হয়েছে।
গত অক্টোবর মাসে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় কালুরঘাট থেকে শাকপুরা পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশের গাছ কাটার বিরুদ্ধে আপত্তি তুলেন বোয়ালখালী পৌর মেয়র জহুরুল ইসলাম। সমন্বয় সভায় দক্ষিণ বনের বিভাগীয় কর্মকর্তা জানান, সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে চুক্তিমূলে গাছ রোপণ করা হয়েছে। যারা রোপণ করেছেন তারাই আবেদন করেছেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে গাছগুলো কাটা হবে না মর্মে সভায় জানানো হয়।
জানতে চাইলে বোয়ালখালী পৌরসভার মেয়র মোহাং জহুরুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘কালুরঘাট থেকে শাকপুরার শেষ পর্যন্ত গাছগুলো কাটার জন্য নাম্বার দিয়েছে। এগুলো কারা দিয়েছে সেটি জানতে হবে। এভাবে গাছগুলো কেটে ফেললে সড়কের সৌন্দর্য বিলীন হবে। বন বিভাগের কাছে একটি সিন্ডিকেট গাছগুলো কাটতে আবেদন করেছে। প্রায় চার শতাধিক গাছ কাটতে তৎপর চক্রটি। সড়ক সম্প্রসারণে কাটলে আমাদের আপত্তি থাকতো না। কিন্তু কোনোরূপ সরকারি সিদ্ধান্ত ছাড়া গাছ কাটার বিরুদ্ধে আমি বিভিন্ন সভায় বলেছি। আবেদনকারীরা সামাজিক বনায়নের অংশ হিসেবে গাছগুলো রোপণ করেছেন বলছেন। কিন্তু গাছগুলোর বয়স তাদের বয়সের বেশি।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘কালুরঘাট থেকে মিলেটারি পুল পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের গাছগুলো কাটতে একটি পক্ষ আবেদন করেছিল। তারা বলেছিলেন গাছগুলো সামাজিক বনায়নের অংশ হিসেবে তারা রোপণ করেছিলেন। কিন্তু আবেদনকারীরা স্বপক্ষে কোনো চুক্তিনামা উপস্থাপন করতে পারেননি। এছাড়াও গাছ কাটার পক্ষে-বিপক্ষে এলাকার লোকজন বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। গাছগুলো চিহ্নিত করলেও আমাদের অনুমতি নেয়নি। অনেক সময় সড়ক সম্প্রসারণ করার কারণে গাছ কাটতে হয়। কিন্তু এই সড়কটি আপাতত সম্প্রসারণ করা হচ্ছে না। যে কারণে গাছগুলো কাটার অনুমোদন দেয়া হয়নি।’
সরেজমিনে দেখা যায়, শাকপুরা অংশের মিলেটারি পুল এলাকা থেকে গাছগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। যা কালুরঘাটের টোল বক্সের কাছাকাছি গিয়ে শেষ হয়েছে। রাস্তার দুই পাশের প্রতিটি গাছের বাকল (গাছের বাইরের অংশ) তুলে সেখানে লাল কালিতে নাম্বার দেয়া হয়েছে। গাছগুলো কাটা হলে সেখানে পরিবেশের বড়ধরনের ক্ষতি হবে। তবে গাছগুলোতে কারা নাম্বার দিয়েছে সে বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে নারাজ।
শাকপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মান্নান মোনাফ পূর্বদেশকে বলেন, ‘গাছগুলো চিহ্নিত করার বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি। কারা চিহ্নিত করেছে তাও জানি না।’
জানা যায়, সড়ক সম্প্রসারণ ও সরকারের উন্নয়ন কাজের অংশ হিসেবে অনেক সময় গাছ কাটা হয়। কিন্তু এ সড়কে আপাতত কোনো প্রকল্প নেই। ১৯৯১ সালে গাছগুলো রোপণ করা হয়েছিল দাবি করে একটি পক্ষ কাটতে আবেদন করেছিল। যদিও উপজেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটিকে বিষয়টি অবহিত করা হয়নি। প্রশাসনকে না জানিয়েই গাছগুলো চিহ্নিত করা হয়। যে পক্ষটি গাছগুলো কাটার উদ্যোগ নিয়েছে তারা এখনও রাজনীতিবিদসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন।
বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন পূর্বদেশকে বলেন, ‘কেউ অতি উৎসাহী হয়ে গাছগুলো মার্ক করেছিল। যেটি আমি নিজেও জানতাম না। আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি না নিয়েই গাছগুলো কাটার উদ্যোগ নিয়েছিল। সামাজিক বনায়নের গাছ দাবি করে কাটতে চেয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে গাছগুলো কারা লাগিয়েছে তা স্পষ্ট নয়।’