মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে কিন্তু মুক্তির যুদ্ধ এখনো চলমান

13

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. আমিনুর রহমান এনডিসি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে কিন্তু মুক্তির যুদ্ধ এখনো চলমান। আমাদের দেশে এমন কিছু মানুষ আছে যারা দেশের উন্নতি সহ্য করতে পারছে না। তারা বিভিন্ন সময় গুজব ছড়িয়ে হোক বা অন্যান্য অপকর্মের মধ্যে দিয়ে হোক; দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করার জন্য তৎপর হয়ে আছে। তাদের সফল হতে দেয়া যাবে না। বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে বুকে ধারণ করে কঠোর হাতে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এক কথা বলেন। এসময় তিনি আরো বলেন, বাঙালি জাতির শোষণ থেকে মুক্তির আন্দোলনে ৩টি বিষয় জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এক- জাতীয় সংগীত, দুই- ৭ই মার্চের ভাষণ ও তিন- জয় বাংলা শ্লোগান। এই ৩টি বিষয় যুগে যুগে বাঙালির সকল উন্নয়নে ভ‚মিকা রাখবে। যথাযথ মর্যাদা ও উৎসবমূখর পরিবেশে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে সকাল সাড়ে ৯ টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভাগীয় কমিশনার ড. আমিনুর রহমান এনডিসি, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) একেএম সরোয়ার কামাল, বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মো. আবু সাইদ, জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের এসপি মো. সুলাইমান, রেলওয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মজিবুর রহমান পাটওয়ারী, জেলা পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ আজম, জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম, পিবিআই, ট্যুরিস্ট পুলিশ, আরআরএফ কমান্ড্যান্ট (এসপি), সিআইডি, নৌ-পুলিশ, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, জেলা শিশু একাডেমি, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, আনসার-ভিডিপি, এলজিইডি, বিআরটিএ, খাদ্য বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সরকার-বেসরকারি প্রতিষ্ঠারে প্রতিনিধিবৃন্দ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ৭ই মার্চের ভাষণে উল্লেখিত ‘মুক্তি’ কথাটির নানা অর্থ রয়েছে। এর একটি অর্থ হল অর্থনৈতিক মুক্তি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বঙ্গবন্ধুর ১৮ মিনিটের ভাষণে দেশের মুক্তিকামী মানুষ আন্দোলনের শক্তি, উৎসাহ খুঁজে পায় যা পরবর্তীতে দেশের আপামর জনগণকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিল।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্ত ফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৮’র সামরিক শাসন, ৬৬’র ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণ অভ্যুত্থান ও ৭০’র সাধারণ নির্বাচনসহ বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব দেন। এজন্য তাঁকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। শিকার হতে হয়েছে অমানসিক নির্যাতনের।
মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আলোকিত হয়ে দেশকে ভালোবাসার জন্য আহŸান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, জাতির জনকের স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাতে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আগামি ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
এর আগে সকাল ১০ টায় শিশুদের নিয়ে কেক কেটে ও বেলুন উড়িয়ে দিবসের উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার ড. আমিনুর রহমান এনডিসিসহ প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ। সকাল সোয়া ১০টা থেকে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও আবৃত্তি শিল্পী অ্যাড. মিলি চৌধুরীর সঞ্চালনায় শিল্পকলা একাডেমির অনিরুদ্ধ মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. আমিনুর রহমান এনডিসি। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, জেলা পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমেদ, জেলা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সরোয়ার কামাল। মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকেরনা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভা শেষে গত ১৬ মার্চ জেলা শিল্পকলা ও শিশু একাডেমিতে আয়োজিত চিত্রাংকন, হাতের লেখা, নৃত্য ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গানের প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। এছাড়াও জেলা প্রশাসন ও জেলা তথ্য অফিসের তত্ত¡াবধানে ডিসি হিল, সিআরবি, টাইগারপাস মোড় ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ সম্পর্কিত ডকুমেন্টারী প্রদর্শন ও ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জাকরণ করা হয়। মহানগরীর ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিশুর স্বাস্থ্য সচেতনতা, পুষ্টি ও খাদ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। দিনব্যাপী বঙ্গবন্ধুর জীবনীর ওপর বিভিন্ন পুস্তক ও ছবি প্রর্দশন করা হয় এবং বিভিন্ন মসজিদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে মিলাদ মাহ্ফিল, দোয়া প্রার্থনা করা হয়।
এছাড়া সমাজসেবা কার্যালয় ও শিশু একাডেমিতে শিশু সদন, শিশু পরিবার ও শিশু বিকাশ কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। বিজ্ঞপ্তি