মানুষের আদিম প্রজাতির বসবাস ছিল তিব্বতে

101

তিব্বতের অত্যন্ত উঁচু স্থানে মানুষের আদিম একটি প্রজাতি ‘ডেনিসোভান’দের বসবাসের প্রমাণ মিলেছে। চরম প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা একমাত্র বর্তমান মানব প্রজাতি হোমো স্যাপিয়েন্সের সঙ্গেই এটি যুক্ত ছিল।
আধুনিক মানুষের প্রাচীন এই পূর্বপুরুষ থেকে একটি জিন বর্তমান প্রজাতিতে এসেছে, যার মাধ্যমে আধুনিক মানুষ অনেক উঁচু কোনো স্থানে টিকে থাকার ক্ষমতা পেয়েছে। এ নিয়ে বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচারে প্রকাশিত নিবন্ধে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
ডেনিসোভানরা ছিল মনুষ্য প্রজাতিগুলোর মধ্যে একটি রহস্যময় প্রজাতি, যারা এখনকার আধুনিক মানুষের আগে এশিয়ায় বসবাস করত। ধারণা করা হয়, হাজার বছর আগে তারা পৃথিবীর অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে পর্যন্ত সাইবেরিয়ার ডেনিসোভা গুহায় পাওয়া জীবাশ্ম থেকে হাড় ও দাঁতের কিছু নমুনায় এই প্রজাতি সম্পর্কে জানা যায়। কিন্তু সেখান থেকে পাওয়া ডিএনএ থেকে জানা যায় যে এরা মানবজাতির একটি স্বতন্ত্র শাখা ছিল।
এখন বিজ্ঞানীরা অন্য একটি সাইট থেকে প্রথম ডেনিসোভা জীবাশ্ম চিহ্নিত করলেন। ১৯৮০ সালে তিব্বতের মালভূমিতে তিন হাজার ২৮০ মিটার উচ্চতায় বৈশিয়া কার্স্ট গুহায় পাওয়া যায় ডেনিসোভা প্রজাতির নিচের চোয়ালের হাড়। কার্বন টেস্টের বদলে ইউরেনিয়াম-সিরিজ ডেটিং করা হয় অস্থিগুলোর বয়স বের করার জন্য। চোয়ালের হাড়গুলো প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার বছরের পুরনো বলে জানা যায়।
এই গবেষণাপত্রের সহলেখক যিনি জার্মানির লিপজিগের বিবর্তনবাদী নৃতাত্ত্বিক গবেষণা সংস্থা ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউটে কাজ করেন, জিন জ্যাকস হাবলিন বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এতটা উঁচুতে মানুষের আদি প্রজাতির বসবাসের প্রমাণ পাওয়াতে। তিনি বলেন, ‘যখন আমরা বর্তমান মানুষের আদি প্রজাতি নিয়েনডারথাল বা ডেনিসোভা নিয়ে গবেষণা করেছি তখন দেখা গেছে যে তাদের চরম পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা বেশি ছিল না।’
তিব্বত মালভূমিতে পাওয়া ডেনিসোভান সাইট সম্পর্কে হাবলিন বলেন, ‘এটি একটি মালভূমি এবং অবশ্যই সেখানে বাস করার মতো প্রচুর সম্পদ ছিল, আর তারা শুধু মাঝেমধ্যে আসত এমনও নয়।’
গবেষকরা এই জীবাশ্মে সংরক্ষিত কোনো ডিএনএর খোঁজ পাচ্ছিলেন না। তখন তাঁরা ভিন্ন পদ্ধতিতে প্রোটিন সংগ্রহ করেন। সেই কৌশলকে বলা যেতে পারে প্রাচীন প্রোটিন বিশ্লেষণ।
গবেষণাপত্রটির আরেক লেখক ডেনমার্কের ইউনিভার্সিটি অব কোপেনহেগেনের ফ্রিডো ওয়েলকার বলেন, ‘আমাদের প্রোটিন বিশ্লেষণ থেকে পাওয়া তথ্য বলে যে নিচের চোয়ালের হাড়টি হোমিনিন গোত্রের কারো যারা ডেনিসোভা গুহা থেকে প্রাপ্ত ডেনিসোভানদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ছিল।’
এই আবিষ্কারটির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায় যে ডেনিসোভা গুহাবাসীদের এমন একটি জিন ছিল যা জাইপোক্সিয়া বা অধিকতর উচ্চতায় অক্সিজেনের অভাবের বিরুদ্ধে কাজ করে। এত দিন এটি ঘিরে একটি রহস্য ছিল, কেননা সাইবেরিয়ার গুহাটি সমুদ্র সমতল থেকে মাত্র ৭০০ মিটার উচ্চতায়।
এখনকার দিনে শেরপা, তিব্বতি এবং এ অঞ্চলের পার্শ্ববর্তী জনগোষ্ঠীরও একই ধরনের জিনগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা কিনা হোমো স্যাপিয়েন্সরা হাজার হাজার বছর আগে ডেনিসোভানদের সঙ্গে মিশে গিয়ে অর্জন করেছিল। প্রকৃতপক্ষে এই জিনগত বৈচিত্র্য ইতিবাচক প্রাকৃতিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এসেছে। সূত্র : বিবিসি।