মহিউদ্দিন চৌধুরী নেই, আছে তাঁর সেই ইফতার আয়োজন

19

আসাদুজ্জামান রিপন

ইফতারের মিনিট চল্লিশ তখনো বাকি। মসজিদ সংলগ্ন মাঠে লম্বালম্বি সারিতে বসে আছেন রোজাদাররা। ঈমান, আমল ও রোজার ফজিলত সম্পর্কে বয়ান করছেন অত্র মসজিদের ইমাম। এদিকে সারিবদ্ধভাবে ইফতারির প্লেট সাজানো। এসব প্লেটে বিভিন্ন রকমের ইফতারি দিয়ে সাজাতে ব্যস্ত স্বেচ্ছাসেবকরা। কেউ প্লেটে ছোলা পিঁয়াজু বেগুনি দিচ্ছেন, কেউ আবার চিড়া দিচ্ছেন। ইফতারের পনের মিনিট আগে লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে পুরো মাঠ। মাঠের পূর্বে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশন কার্যালয়ের সামনের বারান্দায় শতাধিক নারী-শিশুও এসেছে ইফতারে অংশ নিতে। গতকাল এমন চিত্রের দেখা মেলে নগরীর জিইসি মোড়স্থ প্রিমিয়ার বিশ^বিদ্যালয়ের মাঠে। এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এ ইফতারের আয়োজন করা হয়।
২০১২ সালে এ ইফতারের আয়োজন শুরু করেন চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তাঁর মৃত্যুর পর এ ধারা বজায় রাখে এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী ফাউন্ডেশন। তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীনের তত্ত্বাবধানে এখান থেকে নগরীর আরো তিনটি মসজিদে প্রায় ৫০০ জনের ইফতারি পাঠানো হয়।ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, ২০ জন স্বেচ্ছাসেবকের স্বেচ্ছাশ্রমে প্রতিদিন আয়োজন হয় এই ইফতার। সবাই বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এ ফাউন্ডেশনের সদস্য। তাছাড়া বাবুর্চিসহ ৬ জন কর্মচারী রয়েছেন। যারা যোহরের পর থেকে ইফতার তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। গত বছর আড়াই হাজার মানুষের আয়োজন থাকলেও এবার প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার রোজাদারের জন্য ইফতারির আয়োজন হয়ে থাকে। তাছাড়া ১০০ নারী-শিশুর জন্য আলাদা ইফতারের আয়োজন থাকে।
কথা হয় মুরাদপুর থেকে আসা পঞ্চাশোর্ধ্ব আব্দুল কাদেরের সাথে। তিনি জানান, ‘এই ইফতারের অনেক স্মৃতি, মহিউদ্দিন ভাই থাকতে প্রায়ই আসতাম। তখন মানুষ কম হত। এখন ত হাজার হাজার মানুষ ইফতার করতে আসে। দেখতেও ভালো লাগে। সময় পেলে ইফতার করতে ছুটে আসি। হাজারো মানুষের সাথে ইফতার করতে অন্যরকম আনন্দ লাগে।’
বেসরকারি এক ডায়গনস্টিকের কর্মচারী সজিব জানান, ‘চাকরির সুবাধে গত দুই বছর ধরে এখানে ইফতার করছি। এখানে ইফতারের ভিন্নতা রয়েছে। প্রতিদিন ইফতারি দুই রকমের হয়ে থাকে। ছোলামুড়ির পাশাপাশি চিড়া, সেমাইসহ বিভিন্ন ফলমূল থাকে। অনেক সময় বিরিয়ানি, তেহেরিও থাকে।’
এ বিষয়ে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন পূর্বদেশকে বলেন, ‘মানুষের জন্য কাজ করতে পারা আনন্দের সাথে গর্বেরও। এর মাঝে এক ধরনের প্রশান্তি রয়েছে। আমার বাবা সারাজীবন মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। আমাদেরও সে শিক্ষা দিয়েছেন। সে ধারাবাহিকতায় বাবার মৃত্যুর পর থেকে এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘গত বছর আমরা প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষের ইফতার আয়োজন করেছিলাম। এবার বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে প্রথম রমজান থেকে তিন হাজার মানুষের ইফতার আয়োজন করছি। সামনে আরো বাড়বে, ধারণা করছি চার হাজার ছাড়িয়ে যাবে। নারী-পুরুষসহ সকল শ্রেণি-পেশার তথা সবার জন্য এ ইফতার উন্মুক্ত। তিন হাজারের পাশাপাশি প্রতিদিন ১০০ নারী-শিশুর জন্য আলাদাভাবে ইফতারের আয়োজন থাকে।’