মহাসড়কে টোল বসলে মাশুল গুণবে কে?

26

বাংলাদেশের মহাসড়কগুলোয় গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে টোল আদায়ের নিয়ম চালু করার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশের সরকার। গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকের সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেতুর পাশাপাশি মহাসড়ক থেকে টোল আদায় করার জন্য একনেক সভায় নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কেবলমাত্র সেতু পারাপার আর কোন কোন উড়াল সড়ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে টোল আদায়ের ব্যবস্থা চালু রয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, মহাসড়ক বলতে আমরা জাতীয় মহাসড়কগুলোকে বুঝিয়েছি, ছোট সড়কগুলো নয়। যেমন ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-ময়মনসিংহ ইত্যাদি সড়ক বুঝিয়েছি। যেগুলো আন্তঃজেলা বড় সড়ক।
তিনি বলেন, এতদিন আমরা শুধু কয়েকটি নির্বাচিত সেতুতে টোল নিতাম। কিন্তু রাস্তাঘাট মেরামতে আমাদের বহু অর্থের প্রয়োজন হয়। তাই টোল নিয়ে যদি আলাদা একটি ডেডিকেটেড তহবিলে রাখা যায় এবং সেই টাকাটা রাস্তা মেরামতে ব্যয় করা হবে, এটাই হচ্ছে আইডিয়া।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আইডিয়াটার কথা জানিয়েছেন। এখন সেটা আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।
মহাসড়কে যে টোল দেয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেটি কি যাত্রীবাহী বাস, ছোট গাড়িগুলোকেও দিতে হবে নাকি শুধুমাত্র পণ্যবাহী ট্রাকের ওপর প্রযোজ্য হবে? এ বিষয়ে এখনো পরিষ্কার করে কিছু বলেনি বাংলাদেশের সরকার।
পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, যারা সড়ক ব্যবহার করেন, যাওয়া-আসা করবেন, তারাই এই টোল দেবেন। যেভাবে অন্যান্য দেশে আছে, সেভাবেই এখানেও ব্যবস্থা করা হবে। সেটা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা হতে পারে।
বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে তিনি জানান। পুরো কার্যক্রম শুরু হলে তখন এই বিষয়গুলো পরিষ্কার হবে। তখন গাড়ি প্রতি টোলের হারটিও নির্ধারণ করা হবে।
কবে থেকে চালু হবে? বিষয়টি এখনো একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবো, যখন সব ঠিক হয়ে যাবে, তখন হয়তো নির্বাহী আদেশে এটা পরিষ্কার করা হবে।
তিনি জানান, যে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী মহাসড়কে টোল আদায় করার নির্দেশনা দেন, সেখানেও এই বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত ছিল না। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দেয়ার পর থেকেই এটি নিয়ে বাংলাদেশে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, অনেক দেশেই সড়কে টোল নেয়া হয়। সেটা আমরা দেখবো, বুঝবো। সেভাবেই আমাদের এখানেও ঠিক করা হবে। একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের পর পর হয়তো টোল স্টেশনগুলো হবে।
অর্থনীতিবিদ এবং বিশ্লেষকরা বলছেন, টাকা আদায় বা টাকার সংস্থান করার চেয়ে বরং বেশি জরুরি মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণে অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজের অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত বলেন, মহাসড়কে টোলের পদ্ধতি নতুন না, অনেক দেশে করা হয়। আমাদের দেশেও ব্রিজে এগুলো আছে, উড়াল সড়কে আছে। যেসব হাইওয়ে বাণিজ্যিকভাবে বেশি ব্যবহৃত হয়, সেটায় টোল হতে পারে। এর ভালোমন্দ দুইটি দিকই আছে।
যেমন একদিকে সাধারণভাবে মানুষের কস্ট অফ লিভিং (জীবনযাত্রার খরচ) বাড়বে। কারণ যানবাহনের খরচ বাড়লে ভাড়াও বাড়বে। আবার যেসব সড়ক বেশি ব্যবহৃত হয়, সেটা মেরামতের দরকারও বেশি, টোলের আয় থেকে সেটি ব্যয় নির্বাহ হবে। কিন্তু তিনি মনে করেন, তহবিল গঠনের চেয়ে বরং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপর সরকারের বেশি নজর দেয়া উচিত।
তবে এটা সরকারের রাজস্ব আয়ের ভালো উৎস হতে পারে। কিন্তু সেটার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কারণ সরকারের টাকার অভাবে মেরামত হচ্ছে না তা নয়, বরং আসল সমস্যা হচ্ছে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব। টাকার ঠিকমতো ব্যবহার হচ্ছে না, রাস্তাঘাটের ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ হয় না।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, একজন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী দ্রæত পণ্য পাঠানোর সুযোগ পেলে হয়তো তিনি অতিরিক্ত টাকাও খরচ করবেন। কিন্তু টাকা খরচ করেও তার কোন সুবিধা হলো না, তাহলে তো কোন মানে হলো না।
এ নিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে এইরকম ব্যবস্থা আছে, বাংলাদেশেও যদি সরকার করতে চায় ভালো। টোল দিতে আমাদের আপত্তি নেই, তবে ভালো সড়কের ব্যাপারটিও নিশ্চিত করতে হবে। রাস্তা যদি ভালো থাকে, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা থাকে, আমাদের গাড়ি যদি দ্রæত চলাচল করতে পারে, তাহলে কিছুটা টোল দিতে হলেও আমাদের আপত্তি থাকবে না।
এসোসিয়েশন অফ বাস কোম্পানিজের সভাপতি খোন্দকার রফিকুল হোসেন বলছেন, সড়কগুলো যুগোপযোগী করা হচ্ছে না, আধুনিক করা হচ্ছে না, দুর্ঘটনা ঠেকাতে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ফলে এই টোল বসানোর যে কথা বলা হচ্ছে, তাতে কতটা সুফল আসবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। টোল জনগণকেই দিতে হবে। বাস-ট্রাকের ভাড়া বাড়বে, ফলে জনগণের ওপর, ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ আরো বাড়বে।