মহাবিশ্বকে হয়ত আরও জানা যাবে

29

পূর্বদেশ ডেস্ক

সফলতার আরেক ধাপ এগিয়ে গেল বিজ্ঞান। মার্কিন গবেষণা সংস্থা- নাসা ‘পৃথিবী জন্মের আগের’ মহাবিশ্বের ছবি প্রকাশ করেছে। আমাদের অনেকের কাছে বিষয়টি হয়ত রূপকথার গল্পের মতো যে, চারশ ৬০ কোটি বছর আগের, ১৩’শ কোটি বছর আগের মহাবিশ্বের ছবি কীভাবে দেখতে পেলাম আমরা। কিন্তু বিজ্ঞান এখানে সফল। মানুষকে কয়েকশ কোটি বছর পিছনে ফিরিয়ে নিয়ে প্রমাণ করল বিজ্ঞান যে কতটা বিষ্ময়, বলছেন নাসার গবেষক বিল নেলসন।
পাথুরে পর্বতের মতো দেখতে এই ‘কসমিক ক্লিফস’ মূলত নক্ষত্রের মেঘে আচ্ছন্ন একটি নীহারিকার শেষ প্রান্ত। ‘কারিনা নেবুলা’ নামে এই নীহারিকার ছবি পাঠিয়েছে নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ।
পদার্থবিজ্ঞান বইতে পড়েছি, আমরা আশেপাশে যা কিছু দেখি, যেমন- গাছপালা, ঘরবাড়ি, নদী সবকিছুইতেই আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে পড়ে। আলো প্রতিফলিত হতে কিছুটা সময় লাগে।
দূরত্ব যখন অনেক বেশি হয় তখন আমরা এর পার্থক্য অনুভব করি। সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো পৌঁছে প্রায় ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড পর। বর্তমানে আমরা যে সূর্যটি দেখছি এটি সূর্যের ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড আগের অবস্থান।
বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবী থেকে অনেক অনেক দূরের এই ইনফ্রারেড ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে। এজন্য জেমস ওয়েব নামে একটি অত্যাধুনিক মহাকাশ টেলিস্কোপ ব্যবহার করেছে নাসা।
মনে হয় এর মাধ্যমে মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো। এভাবে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বাইরে কোথাও কোনো প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা তা দেখতে পারবেন। এছাড়া, মহাবিশ্বের অনেক কিছুই তারা আবিষ্কার করতে পারবেন।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ তার প্রতিশ্রæতি পূরণ করবে এ বিষয়ে নাসার বিজ্ঞানীদের কোনো সন্দেহ নেই। বিজ্ঞানীদের মতো আমরাও আশাবাদী জেমস ওয়েব আমাদের আরও অনেক চমকপ্রদ তথ্য দিবে। আমরা হয়ত পৌঁছে যেতে পারব মহাবিশ্ব সৃষ্টি অবধিও।
তবে আমরা আরও পেছনে ফিরে যাচ্ছি। কারণ এটা হলো প্রথম ছবি। ওরা সাড়ে ১৩০০ কোটি বছর পেছনের ছবি তুলতে যাচ্ছে। আমরা যেহেতু জানি মহাবিশ্বের বয়স ১৩৮০ কোটি বছর, তাই আমরা মহাবিশ্ব সৃষ্টির একেবারে গোড়ায় ফিরে যেতে পারছি।
মহাশূন্যের ১৩৫০ কোটি বছর আগের বিরল ছবি প্রকাশ
মার্কিন গবেষণা সংস্থা নাসা প্রকাশিত নতুন জেমস ওয়েব মহাকাশ টেলিস্কোপ দিয়ে তোলা মহাবিশ্বের কয়েকশ কোটি বছর আগের প্রথম সম্পূর্ণ রঙিন ও চমকপ্রদ ছবি এ যাবত মহাজগতের প্রাচীনতম অবস্থার সবচেয়ে বিস্তারিতভাবে তোলা চিত্র। এই ছবিতে তারামÐলী ও ছায়াপথের যে আলোকরশ্মির বিচ্ছুরণ দেখা যাচ্ছে তা শত শত কোটি বছর পাড়ি দিয়ে আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। হোয়াইট হাউসে এক ব্রিফিংএ আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এই ছবি দেখানো হয়েছে। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ দিয়ে তোলা আরও ছবি, যেগুলো আগে কখনও দেখা যায়নি, সেগুলো নাসা বিশ্বব্যাপী প্রকাশ করবে আগামী মঙ্গলবার।
এক হাজার কোটি ডলার মূল্যের এই জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল গত বছর ২৫ ডিসেম্বর। মহাকাশে সুপরিচিত হাবল টেলিস্কোপের জায়গা নিতে তৈরি করা হয় এই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ।
এই টেলিস্কোপ বা দূরবীক্ষণ যন্ত্র আকাশে অনেক কিছুই পর্যবেক্ষণ করবে। তবে এর প্রধান দুটি লক্ষ্য রয়েছে। একটি হল, মহাকাশে ১৩৫০ কোটি বছর আগে একেবারে প্রথম জন্ম নেয়া তারাগুলোর আলোর বিচ্ছুরণ কীভাবে ঘটেছিল তার ছবি নেয়া; এবং দ্বিতীয়টি হল, দূরের গ্রহগুলো মানুষের বাসযোগ্য কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান করা।
জেমস ওয়েবের যে ছবিটি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে নাসা প্রকাশ করেছে তাতে দেখানো হয়েছে এই দূরবীক্ষণ যন্ত্র প্রথম লক্ষ্যটি অর্জনে সক্ষম। যে ছবি আপনি দেখতে পাচ্ছেন সেটা হল দক্ষিণ গোলার্ধের এক গুচ্ছ ছায়াপথ – যেটি ভোলান্স নক্ষত্রপুঞ্জ – যার নাম দেওয়া হয়েছে এসএমএসিএস ০৭২৩। এই নক্ষত্রপুঞ্জ সত্যি কথা বলতে খুব একটা দূরে নয়- ‘মাত্র’ প্রায় সাড়ে চারশ কোটি আলোক বর্ষ দূরে। কিন্তু এর ভর এমন ভাবে বেঁকে গেছে যাতে এর আলোর বিচ্ছুরণ অনেক ব্যাপক পরিসরে, অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। এটা মাধ্যাকর্ষণের একটা প্রভাব। একটা দূরবীক্ষণ যন্ত্রে জুম লেন্স ব্যবহার করলে যেমনটা দেখা যায়, এটা জ্যোতিমন্ডলে সেই জুম লেন্সের মত কাজ করেছে।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপ। এতে ৬.৫ মিটার চওড়া সোনার প্রলেপ লাগানো প্রতিফলক আয়না আছে এবং আছে অতি সংবেদনশীল ইনফ্রারেড তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে যন্ত্রপাতি।
এই টেলিস্কোপ ছায়াপথের বেঁকে যাওয়া ওই আকৃতির ছবি ধরতে সক্ষম হয়েছে। বিগ ব্যাং বা মহা বিস্ফোরণের পর এই ছায়াপথগুলো স্থায়ী হয়েছিল মাত্র ৬০ কোটি বছর পর্যন্ত।
মহাজগতের বয়স বলা হয় ১৩৮০ কোটি বছর। এখন এর চেয়েও বড় সুখবর হল, বিজ্ঞানীরা ওয়েব টেলিস্কোপের তথ্যের গুণগত মান বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারছেন যে, এই ছবিতে যা দেখা যাচ্ছে এই টেলিস্কোপ তার থেকেও অনেক গভীরে গিয়ে মহাজগতের চিত্র তুলে আনতে সক্ষম। এর ফলে, অতি শক্তিশালী এই দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে মহাশূন্যের অনেক ভেতর পর্যন্ত এখন দেখা এবং তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।
আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ ৮৬ হাজার মাইল। আর এই ছবিতে আপনি ছোট ছোট যে আলোর বিচ্ছুরণ দেখতে পাচ্ছেন, সেগুলো ভ্রমণ করেছে ১৩০০ কোটি বছর, বলছেন নাসার গবেষক বিল নেলসন।
তবে আমরা আরও পেছনে ফিরে যাচ্ছি। কারণ এটা হল প্রথম ছবি। ওরা সাড়ে ১৩০০ কোটি বছর পেছনের ছবি তুলতে যাচ্ছে। আমরা যেহেতু জানি মহাজগতের বয়স ১৩৮০ কোটি বছর, তাই আমরা মহাবিশ্ব সৃষ্টির একেবারে গোড়ায় ফিরে যেতে পারছি।
হাবল টেলিস্কোপকে এধরনের তথ্য সংগ্রহ করতে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে আকাশে পর্যবেক্ষণ করতে হতো। কিন্তু জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ মাত্র সাড়ে ১২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে মহাবিশ্বের গভীর থেকে এই ছবি তুলে এনেছে।
নাসা এবং তার আন্তর্জাতিক অংশীদার সংস্থা, ইউরোপীয়ান এবং ক্যানাডিয়ান স্পেস সংস্থা, জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের আরও রঙিন ছবি প্রকাশ করবে আগামী মঙ্গলবার।
সেদিন অন্য যে বিষয়টির ওপরও আলোকপাত করা হবে সেটি হল, আমাদের সৌর জগতের বাইরের গ্রহগুলো সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি। সূত্র : বিবিসি, বিডিনিউজ।